সাধারণী

১২:৩২ AM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments


চিরশ্রী দেবনাথ 

সাধারণী

নারীর কথা লিখতে গেলেই, আমার একটি, দুটি বা তিনটি বা আরো অনেক  মেয়ের কথা মনে হয়। তারা কেউ চাবুক নয়, শানিত নয়, তেজী নয়, মেধাবী নয়, কেউ আহামরি বিশ্রীও নয়, আকুল সুন্দরীও নয়। তারা বধূ। শুধু মুধু বধূ। আহার বানায়। ঘর গোছায়। টিভি দেখে। সন্তানকে পড়ায়। প্রিয় মানুষের জন্য সাজে। তাদের ঘাম লাগানো জামাকাপড় খুঁজে খুঁজে জড়ো করে। কাচে। হাতে বা মেশিনে। কোনটা কি ভাবে ভালো হবে নিজে নিজে ভাবে। যেন নিঁখুত থাকে কাপড়ের রঙ, সুতোর বাঁধন । 

 গানও শুনে নিজের মনে গুনগুন অথবা একটু জোড়ে। এই মেয়েরা অনেকেই গভীর নয়। হৃদয়ে বাসা বাঁধেনি শিকড় ছড়ানো অবাধ্য অশ্বথ। সন্ধ্যার আবাহন শেষে অনেক অনেক ঘরে সুগন্ধা ধূপের মতো তারা বিকশিতা হয়।

তাদের একটি গোপন মানি ব্যাগ থাকে। টাকা জমায়। এই টাকার কথা কেউ জানে না। এখান থেকে একটু খরচ হলে কড়ায় গন্ডায় হাজব্যান্ডের কাছে হিসেব চায়। ঝানু ক্যাশিয়ার, একেকজন, হু, বললাম তো।

 

আর পরিবারের বিপদে, প্রিয়জনের প্রয়োজনে,  এই মাঝারি নরম মেয়েগুলো নিজেদের সর্বস্ব এমনকি শরীর থেকে চোখ, ধমণী , ত্বক , কিডনী খুলে দেয়, একবারও না ভেবে, হ্যাঁ এমনি শক্ত তাদের ডিসিশন। বিনিময়ে চায় কি কিছু? মহৎ হওয়ার সোনালি সার্টিফিকেট। মনে করে আরে এতো কিছুই না। এ জীবনটাই তো দেবার। কি সাধারণ এই অসাধারণতা।

 

তাদের বর্ষার দিন আছে। পেঁয়াজি মুড়ি আছে। রান্নার বই দেখে অপরিনত দক্ষতায় কেক বানানোর বহুবারের প্রচেষ্টা আছে।

বিয়েবাড়ির তত্ত্ব সাজানোর তৎপরতা আছে।

হ্যাঁ গো, তুমি গো প্রচুর ন্যাকামো, ঢলে পড়া আছে।

 

সারারাত ঠাঁয় বসে থেকে জ্বরে ভোগা প্রিয়জনের নিমগ্ন সেবা আছে। পড়ের বা তারো পড়ের বহুদিন না ঘুমিয়ে কাটানোর অভ্যাস আছে। সারাদিন ঠাঁয় কাজ চালিয়ে দেবার সাধারণ ক্ষমতা আছে। হাসি হাসি মুখ আছে। অল্প আদরে গলে গলে জল হয়ে যাওয়ার জলপ্রপাত আছে। 

বাজার থেকে ঝুটমুট জাঙ্ক জুয়েলারি, সস্তার রঙচঙে জিনিস কেনার অপরিসীম ট্যালেন্ট আছে। সব্জিওয়ালার সঙ্গে ভীষণ তর্ক করার বাগ্মিতা আছে।

তাদের স্নানঘরে দীর্ঘ স্নান আছে, নিজেকে খুলে দেখার কিশোরী অশ্লীলতা ।  

 দুপুরে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। 

পাশে থাকে মাঝারি মানের ম্যাগাজিন, বই, এখন অনেকেরই ফেসবুক। 

তারা স্বপ্ন দেখে, ঝকঝকে একটি ডিনার সেট কিনবে, আর একটু পয়সা জমে গেলে বাহারী ক্রিস্টালের হরিণ।

সেই হরিণ থাকবে বসার ঘর আলো করে।

ঢুকলে মনেই হবে না  মধ্যবিত্ত জীবন ।

মনে হবে রাজ্যের পাশে একটি বন।

মেয়েটা সেই রাজ্যের রাণী। শিকারে বেরিয়েছে।

হাতের তালুতে মুঠো মুঠো আলো। হাসির আলো, "তোমার সঙ্গে মিশে আছি " এই কথাটি বলার আলো। যা দিয়ে সে তার বনের সব নির্ভৃত সুখ শিকার করে।

যোদ্ধা মেয়ে বটে তারা, সাধারণ সাধারণ খুব সাধারণ, তারা কিছু করে না, কিছু পারে না, একদম শুধু শুধু। 

0 মন্তব্য(গুলি):