কন্ঠীবদল
শ্যামলীরাই বোষ্টমী। জেলা উত্তর ত্রিপুরা। গ্রাম "পলাশকুঞ্জ "।
সাড়ে কুড়ি বছরে কন্ঠীবদল।
তখন ফাগুনমাস। বেহায়া বাতাস। দুজোড়া ধুতি চাদর।
পলাশফুল পড়ে পড়ে পিছল হয়ে থাকে আখড়ার প্রাঙ্গন।
তিলক মুছে তিনবার মাছ খাওয়া হয়েছে।
দুবার মুরগীর ঝোল। তিনখানা হিন্দি ফিল্ম। নাচ গান।
এটুকুই অবৈধ বসন্ত। বাকি সব কীর্তন। সপ্তমীর জ্যোৎস্না।
শিউলি, কাঞ্চন, রঙহীন জবা তুলে তুলে নারায়ণের চরণে।
দোলের দিন সবুজ রঙ, গোলাপী আবির, সঙ্গীর পুরাতন মুখে
ভিক্ষাকষ্ট শুধু।
পুন্যের মাস। কার্তিকের কুয়াশা মেখে মেখে শহরের অলিগলি ঘোরা হয়।
একজন মরল, দ্বিতীয়জনের লগে কন্ঠীবদল।
শ্যামলীরাই
হাসে না। নামগান করে।
তৃতীয়জন এলেই বা কি। বয়স তার এখন সাঁইত্রিশ।
ভরা হাতে মাছ কাটতে ইচ্ছা হয়। রক্ত ধুয়ে তেলে হলুদে জমিয়ে গন্ধ ছাড়তে ইচ্ছা হয়।
না হয় সন্ধ্যাবেলা একটু তুলসীতলা। বাকি মাছভাত আর রমণ।
সে হবার জো নেই।
অথচ ভক্তি নেই।
ঘোর সংসার বুকের ভেতর।
ঘরবাড়ি উঠোন চুলা আর পুকুরঘাট সমেত।
গাছভর্তি আমের বোল। কষা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ফাগুন চৈত্র মাসে, আর পুকুরের জলে গা ধুতে ধুতে লাক্স সাবানের ফেনায় ফেনায় ধুয়ে যাচ্ছে বোষ্টমী রঙ।
তিলকের মারপ্যাঁচ, তুলসীমালার বৈরাগ্য।
ট্রেনে কইরা আসাম যাওয়ার সময় দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা।
ভরা যৌবন।
বিবাহের রঙ নাই কপালে। কিন্তু বোঝা যায় মাংস ছুঁয়েছে তারা। কই কন্ঠীবদল তো হয় নাই।
জীবন্ত স্বাধীন। শ্যামলীরাই কীর্তনের সুর তোলে। দশটাকা, দশটাকা দেয় দুজনে।
কয় আশীর্বাদ করো যেন আজ রোজগার হয়, আমরাও বোষ্টমী, ঘর আছে, ঘর নাই। বাইরে বেরুলেই টাকা।
বাড়ি ফিরলে জিগায় টাকা আনছো নি?
তবুও তোমাদের তো ভণিতা নাই, শ্যামলীরাই তর্ক করে।
হি হি ! ভণিতা ! ছুরির মতো হাসি। নাহ্ ভণিতা নাই, রঙখেলার দিন কৃষ্ণ আসে খেলতে।
তার চোখে দেখা যায় এই বসন্তকাল।
গোপী মেয়েদের ব্যথা।
কত কত রঙ নিয়ে আমরা পদাবলী লিখে যাই।
`মানুষ ভুল করে ভাবে ধর্মের গান, অথচ এসব
আসলে নাড়ি ছেঁড়া অশৌচ কাল।
0 মন্তব্য(গুলি):