গুচ্ছ কবিতা/চিরশ্রী দেবনাথ /(প্রকাশিত 'দৈনিক সংবাদ, সংবাদ বিচিত্রা, 1/05/2016
মিশ্রগুচ্ছ
..............
এক
গুলঞ্চ বেলা
.....................
ভীষণ গভীর রাতে/
মধ্যবিত্ত শহরের খোলা ছাদগুলোতে/
জমা হয় শহরের সব বিশ্রী মেয়ের প্রেম/
তারা রঙ মাখে, চুল বাঁধে, চুলে দেয় গুলঞ্চ ফুল/
সেইসব প্রেমেরা গুছিয়ে বসে ফিসফিস করে/
শহর জেগে গেলেই আবার তারা /
ঢুকে যায় ঘুপচি মেয়ের গহ্বরে/
প্রতিরাতে এভাবে তারা বুড়ো হয়/
তারপর এক গরীব দুপুরে /
মেয়েরা তাদের প্রেম বেঁচে দেয়/
সমাপ্তি সঙ্গীত গায় একটি মেয়ে/
বাকি মেয়েরা দেখে দিনে দিনে/
শেষ হয়ে আসছে গুলঞ্চ ফুলের ঝোঁপ...../
দুই
মাংসাশী সুর
....................
মাংস কাটার দোকানের কাছে বসে আছে/
এক পরিযায়ী বেহালাবাদক/
ছাল উঠছে, রক্ত ঝড়ছে টুপটাপ/
বেহালায় জোৎস্না সুর,চোখ বন্ধ/
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মাংস কাটার গান/
ছাল উঠছে, রক্ত ঝড়ছে টুপটাপ /
বসন্তের পশুরা সার সার গান শুনছে /
ঝরে ঝরে পড়ছে লোম, পোকা /
সোনালি চামড়ায় ভেসে যাচ্ছে মাংস/
সোনালি ছাল জমছে আর জমছে/
বেহালার সুরে এবার শুধু/
ঘুমিয়ে পড়ার গান, ঝরা লোমের গান...../
তিন
মনখারাপের রিংটোন
...............................
কোন এক ভূমিকম্পের নবীনভঙ্গুর/
পর্বতমালায় একটি কুটির আমাদের/
সামনে বহতা রাস্তা/
প্রহরে প্রহরে কেঁপে ওঠে মাটি /
বদলে যায় রাস্তা, দৃশ্য, বারান্দার চেয়ার/
শুধু একটি ঝর্ণা পুরনো, 'মনখারাপের '/
এতো এতো বার মাটি কেঁপে ওঠে /
ঝরনাটি তবু ঝরতেই থাকে ..... /
তার একটিই শুধু রিং টোন ..../
চার
মহাবলীপুরম্
.....................
সপ্তম শতাব্দীর তীরে ভেসে আসা একটু সমুদ্রক্ষণ/
পল্লবসাম্রাজ্যের হীরকদুপুরে/
অগোছালো একটু বিংশ মানবী/
পাথর চিনেছে সবই /
ধাতব নূপুর, সুগন্ধ পুষ্পবাস/
পায়ের ছাপে কড়কড়ে বালিপতন/
সুনামীর ঝড়ো শ্বাস/
আর
.........এই তো সেই পালিয়ে যেতে থাকা মেয়েটি..../
পাঁচ
কাঞ্চীপুরম্
..................
এতো রুক্ষ তুমি আগেও ছিলে/
এখনো তোমাকে ছুঁয়ে আছে আগুন বালিচ্ছায়া/
অর্জুন রথের সব যুদ্ধ খেলা, বর্শা আঘাত/
একটুও রক্ত দেয়নি আমায়/
কোমরবন্ধনীতে শুধু চুবিয়ে গেছে ধীর ক্ষয়/
কোন প্রাকসন্ধ্যায়, মনে করো সন্ধ্যার ফিরে আসা/
চন্দ্রগ্রহনে দিয়ে যাওয়া ঝিনুক পোশাক, মুক্তোগ্রাস ...../
ছয়
ভেলোর ফোর্ট
.......................
বসন্তের শেষ চারণভূমিতে /
অদক্ষ কালিদাসের শ্লোকসন্ধ্যা/
দুর্গের প্রাকার থেকে /
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ঘুমন্ত রাত/
ঘাস ঘাস সঙ্গীন চরণে হেঁটে গেলাম গ্রাণাইট শরীর/
পাথরের গরম শ্বাস, পরিখার জল/
ভিনদেশী রোদ তিনটি হাতে মেলেছে জলপাখনা/
সমুদ্রহাওয়ায় কুমকুম শুকিয়ে শুকিয়ে অশরীরী /
এক দেবদাসী বন্ধু পাপ করেছিল /
তার গচ্ছিত এই পদ্মপাপ/
আমারি কাছে আছে সযতনে/
ঘুরে ঘুরে এসেছি ফিরে/
এক ভুল তরবারির কাছে/
স্তব্ধ হয়ে আছে ঝনঝন/
ঝরাবো তাকে হাজার সন্ধ্যা পরে /
ভিনদেশী মেয়ের অবাধ্য লালিত শাসিত অক্ষরে .../
0 মন্তব্য(গুলি):