চন্দন শীত
চিরশ্রী দেবনাথ
চন্দন শীত
.................
এক
গ্রহান্তরে কোটি বছরের শীত
আমার পৃথিবীতে নরম শিক কাবাব,
আমি "না "বলায়,
সব পাতা থেমে আছে মাঝপথে
মুঠো থেকে খুলে দেবো শৈত্য প্রবাহ
বলবো সব পাতা ঝরে পরো এখুনি
এখন কি তবে বিশ্রামে গ্রহনারীরা,
এ বিশ্রাম, অপেক্ষা নয়, এ হলো মগ্নতা।
শুধু গাঢ়তম বর়ফপাত।
সূর্য যেদিন শীতঘুমে যাবে,
তাদের শরীরে জমানো তেলের খনিতে,
একটি আকুল বিস্ফোরণ, দিও সান্তা,
ছিটকে পড়ুক ঘুমের টুকরো, বিশ্রামের শ্বাস,
এতো গহীন জলে বেশীক্ষণ থাকতে পারি না
দম আটকে আসে, শৈবাল হলেও ...
দুই
আশেপাশে কোন বিমূর্ত প্রেমিক
একটি পক্ষীরাজ ঘোড়া পা ঠুকে ঠুকে কেন যে ক্লান্ত
গ্রহ তো এখনো সবুজ, ধুলোর প্রাসাদে নতুন ধান
রাতকে ঘিরে হাঁটু ভেঙে বসে শরীরী গ্রন্থ
উড়ে উড়ে জমে উঠে ঝকঝকে ছুঁড়ি বরফ
এসবই প্রলাপ, আত্মরতি, বিড়াল লোভ
কয়েকদিনের এই লেখা আসলে কল্পিত সত্ত্বা
ছিঁড়ে, খুঁজে, খুঁটে দলিলের মুহুরী হিসেব
এভাবেই মিথ্যে যাপন.... নত হয়ে থাকা এক মানবী মুখ ...
তিন
26/11/2015
হোটেল তাজমহলের সামনে
ভারতদেশের মেয়ে এক
বাঁধভাঙা কাজলে
ছেলেমানুষ চোখের জল
উন্মুক্ত নাভিতে রুপোর নথ
ঢালা আছে তাতে,
কারো কারো একফোঁটা
অশ্লীল ভারত
খালি দীঘল পা বেয়ে
মুম্বাই সন্ধ্যার ফেনিল আলো,
খোলাপিঠে খুনখারাপি
লাল কালো ট্যাটু
নির্লজ্জ সন্ত্রাস চুঁয়ে পড়ছে রঙে রঙে,
চাপা ঠোঁটে মোমবাতি চেপে
মেয়েটি উষ্ণ হচ্ছে,
26/11/2012 তে এখানে কেউ এসেছিল,
তারপর শুধু ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে এ গোধূলি ...
চার
.......................
সব সময় আমার পুড়ে যাচ্ছে
ঋতুতে ঋতুতে শীতের মাঠে মাঠে,
মানুষীর গন্ধ যেন মুছে
ফেলতে চায় ধূ ধূ সন্ন্যাসী জমি ....
অস্মিত শৈত্য শরীরে মেলেছে রোদ আলোয়ান
কুয়াশার প্রথম বিন্দুটি পৃথিবী ছোঁয়ার আগে
ঘুমিয়ে নেয়, একফোঁটা, নিবিড় শূন্যতায়
আমি কিন্তু জেগে থাকি মাটির রসে
হেমন্তের সব শষ্য কেটে নেবার পর উদ্ভিদের ডুবন্ত শিকড়ে
এতো অহংকার কেন লেখক
দেখো চেয়ে
পৃথিবী বেজে বেজে উঠছে অনার্য মাদলে
আর
অন্ধকারের স্তবকে বসা ঈশ্বর,
নদীপাত্রে ভরে নিচ্ছে আমার প্রবল মানুষী রাত....
পাঁচ
.............
গুহাস্নানে ক্লান্ত শুধু ক্লান্ত
কেন এই উদ্বাস্তুতা, ধ্যান আর তন্ত্রময়তা!
আমার শস্যস্বাদ তোমার শীতভোর কেড়ে নেয়
এ ঘুম আমি কখনো দিতে চাই নি
তুমিই ভেবেছ নিজের
মরনের কাছাকাছি একটি মাত্র গন্ডুষে
পান করে নেবো কর্ষনের সব স্বাদ
কীট, ফসল আর শিশিরের এই আলপথ
ব্রাত্য করে গেলো দুজনকেই।
তবু মনে হয় যদি ফিরতে এখনই, এইমাত্র ....
ছয়
...........
ঝাউ বন ধীরে বহো
শ্বাসাঘাতে জেগে যেতে পারে প্রবাল প্রাচীর
রাতশেষে এখনি ঘুমোল সে...
কখনো কি শুনেছো ঝিনুকের গান?
দুই খোলের মাঝে রক্ত হয়ে ঝরে পরে বালি সুর
নিবিড় মুক্তোটি ক্ষত মেখে মেখে নিটোল হয়
লবনস্বাদে তার কোন বিতৃষ্ণা নেই,ক্ষয় নেই
শুশুকের আঘাতে সে ঢেউয়ের কাছে সঁপে নিজেকে
দেবতার তুলিতে ক্রমাগত অসাবধান রঙীন হওয়া
মৎসপুরুষেরা চায় তার অকালবার্ধক্য.....
তবু এই অবিরাম শ্যাওলা শৃঙ্গার কেন যে
তাকে প্রতি রাতে নতুন করে শুধু .....
সাত
17/11/2015
বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল, ক্যাফে দ্যঁ বিরে
লা বেল একি পে, এসবই খুব চেনা এখন
নোতরদম গির্জার সামনে ভারী বুটের শব্দ
কতদিন ধরে শুনছি
তৃতীয় বিশ্বের কিছু ছিটকে পড়া লাল রঙ্
ছবির শহরে কয়েকটি মৃত্যু এঁকেছে, এই তো !
তেরঙায় ছেঁয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সৌধ সব
আমাদেরও তিন রঙ্, মাঝে মাঝেই লালে লাল
প্রথম বিশ্বের নীলাভ পার়ফিউম
কখনো কি সে রঙের মাংশাসী গন্ধ মেখেছে গায়?
তবু বলি ভালো থেকো আইফেল টাওয়ার
তোমার সঙ্গে কথা আছে আমার
শীতার্ত রাজপথে সব উষ্ণ রক্তে মিশে আছে
তৃতীয় পৃথিবীর জেহাদী চুম্বন
তারা কোন বসন্তের অপেক্ষায় নেই
রক্তের ছবি বার বার মুছে দিতে
তাদের যে একটাই পতাকা .....
আট
.....................
আসরাফ ফায়াদ
প্যালেস্টাইনের কবি বা পৃথিবীর
জেলের গরাদে ছুঁয়ে থাকা
আরোও একটি অসহায়তা
মৃত সমুদ্র ও শীতকাতর মাটির গন্ধ
শুষে নিয়েছিল, কিছু শব্দ বা পংক্তি।
তারা তোমাকে এনে দিল মৃত্যুদণ্ড
কবির মৃত্যু, কবিতার মতো সুন্দর নয়
মৃত্যুর আগে এখানেও প্রিয়জনের মুখ থাকবে
যন্ত্রণা ও এক পেয়ালা উষ্ণ না চেনা, ধোঁয়া ওঠা
রক্তারক্তি অনুভব কামড়ে ধরবে স্বাদগ্রন্হী
যন্ত্রণা, কষ্ট তোমাকে ছিঁড়ে দেবে
সত্ত্বা ছুঁয়ে নামবে বীভৎসতার ফুটেজ
এ অনিবার্য, হয়তো আজ বা কাল
অথবা কিছুদিন পর একটি তাজা খবর
হবে তুমি কবি ....
তবু কেউ কেউ লিখে, বেঁচে থাকতে চায় না তারা,
মৃত্যুদন্ড কবিতাকে অমর করে ...
নরকের যন্ত্রণা দিয়ে ঝলসে ঝলসে বলে দেখো, দেখো ...
নয়
............................
পাঠানকোট (29/11/2015)
উবু হয়ে বসে থাকা যেন অসুস্থ অশ্বখানি
পাঠানকোটের রক্ত
কুয়াশা ভেজা মাটিতে মিশছে একটু একটু,
পাকিস্তানের মাটি আবারো লালে লাল,
লাজুক পৃথিবীর প্রিয় রক্তারক্তি লাল গোলাপ,
পাপড়ির কোলে সাঁতার কাটছে দেবশিশুরা
তাদের হামাগুড়িতে ম্যাপ ওলটপালট
পাহাড়, মরুভূমি, দীর্ঘ মালভূমি
অপেক্ষা করে
ঋতু প্রত্যাবর্তনের, আত্মসমর্পণের
তবুও শুধু অস্ত্র চাষ
অবিশ্বাসী বরফপাতে ঢাকা কারখানার পর কারখানা
এই চাষে কোন তরফদারি নেই ......
দশ
............................
এভাবে বলো কেন তুমি?
জানো না !
এখানে একই সঙ্গে
মশলারাত, নিহত কাশবন,
আমায় গিলে খায়,
আমি তাদের ভিতরে শুয়ে থাকা সঙ্গীন শীত,
বিপদসীমায় আচ্ছন্ন এক নদী হতে ,
এখনো বহু দূর যেতে হবে আমায়.......
এগারো
.............................
কখনো কখনো ঘরে ফিরি,
মাঘজোৎস্নায় ভিজে থাকি সারাদিন।
দহনের আগে অথবা পড়ে,
তখন অবেলায় চোখ জ্বলে ওঠে
কি তোমার?
এ বনাঞ্চল উপদ্রুত, অনেক আগেই ঘোষণা করেছে
মন্দমেঘ
বনজ স্তব্ধতা দিও তবু
ধোঁয়ার স্তবকে আকাশের স্বাদ
কিছুদিন, আরো কিছুদিন ঘন হয়ে থাকো
তোমার ব্যর্থতা আমার মাদক, নেশাদুঃখ
ডুবতে তবু এতো সময় নিচ্ছি কেন ...
বারো
বসন্তের আগেই প্রবল ভূকম্প হবে...
রিখটার স্কেলে মাত্রা ছাড়াবে অভিমানী ভূগর্ভ,
তার আগে না হয় বয়ে যাক কবিতা ঝড়,
উড়ন্ত, ফুটন্ত, ডুবন্ত ...
আমার চাই সলিলসমাধি
আজন্ম পিয়াসী যে....
মাটির স্তরে স্তরে তোমার অভ্র অহংকার,
গলে গলে জল হবে সেদিন ...
পৃথিবী আমার বুকময় শুধু দীর্ঘ রাত্রিকাল যাপন করে,
রেখে যায় এক নিষিক্ত ফুলবন,
তারা রূপান্তরিতা স্বপ্নদুহিতা,
সুগন্ধি ভাসিয়েছে মাটির কলসে
আমি শরীরী মৃত্তিকায় মিশাই সেই গন্ধরেনু
এসময় নারীময়, দহনে গলনে মিশ্রণে নারীবিন্দু,
এই শতক, তারো পরের শতকে, আরো সহস্রমুহূর্তে,
এইসব গন্ধরেনু যোনিতে জননে পরিচয় রেখে যাবে...
0 মন্তব্য(গুলি):