বহমান সময়ে, ত্রিপুরার বাংলা কবিতা, চিরশ্রী দেবনাথ

৪:৪৫ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

বহমান সময়ে, ত্রিপুরার বাংলা কবিতা

চিরশ্রী দেবনাথ

অজস্রতরুণের মধ্যে কয়েকজন তরুণ কবিতাচর্চা করেন। তারা আলোর পথযাত্রী। তাই এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা ধনাত্মক এবং  দৃপ্ত ফলফুলের ছোট্ট সমাহার।
পৃথিবীর যেকোন জায়গার যেকোন সময়ের সাহিত্য একটি খাদ, যা বহুকাল আগে পূর্বসূরীরা খনন শুরু করেন, উত্তরসূরীরা সেই খননকে গভীর করেন মাত্র। কবিতার ক্ষেত্রে সম্পূর্ন মৌলিক বলে কিছু নেই। ভাবনার একটা কিছু নতুনত্ব, দেখার সূক্ষ্ম চোখ একজন তরুণ কবির কবিতাকে, একই সময়ে লেখা অন্যান্য কবিতা থেকে  আলাদা করে।
ঠিক এই সময়ে ত্রিপুরার বাংলা কবিতা  যারা লিখছেন তারা ঠিক কতটা গুরুত্বের সঙ্গে সময়কালকে ভাবছেন, নতুন ভাবনা আঙ্গিক, ভাষার ব্যবহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং বাংলাদেশ যেখানে প্রচুর লেখালেখি হয়, তাদের লেখালেখির সঙ্গে নিজেরা ঠিক কতটা ওয়াকিবহাল, আত্মসমালোচনার মানদন্ডে কতটা কঠোরভাবে এবং মৌলিকত্ব নিয়ে নিজেদের  তুলে ধরছেন এসবই আমাদের ভাববার কথা।
কাব্য কবির পূর্বপুরুষ, কবি কাব্যের জন্মদাতা নয়।
একদল তরুণ এই কিরাতভূমিতে লিখে যাচ্ছেন প্রচুর। এসব লেখালেখির বেশীরভাগটাই পাই স্যোশালমিডিয়ার পাতায়।   বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে যাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর পাই বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে কিংবা সদ্য প্রকাশিত কবিতার বই এ।
কবিতার নিজস্ব স্রোতটি বহু দূর থেকে আগত, নব পলি সঞ্জাত হয়ে বহমান। তা বহমান বলেই নির্দ্বিধায় ছুঁয়ে যাচ্ছে বর্তমান, অতীতের ভাষ্য, ভবিষ্যতের মানচিত্র।  
এই যে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়েছে "বহমান ", যাকে তুলে ধরতে গেলে কবিতার পংক্তি আনতে হয়, বিষয়টি তখন বিতর্ক এড়াতে পারে না। একটিমাত্র সুনির্মিত বা সুআগত পংক্তি কোনদিনই একজন কবির মানদণ্ড নয়। কিন্তু তবুও এটাই করছি, এটা একটি রূপরেখা মাত্র।  
মূলত কয়েকটি বিষয়কে নিয়ে কেন্দ্রীভূত করছি আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
প্রবণতা, নস্টালজিক ভাবনা,  উপমা, রূপক, সমসাময়িকতা ইত্যাদি।  সাহায্য নেবো শূন্য দশকে রচিত কিছু পংক্তিমালার।

"ওগো জনমত, ওগো ধর্না, ওগো বিদ্বজ্জনের মিছিল।
আমার কন্যার মৃত্যুও তোমাদের মতো সৃষ্টিশীল "

মোমবাতির মিছিলের এই অনিবার্য অনুঘটক নিয়ে পরিক্রমা শুরু করছি,

"সম্রাট টি খাচ্ছেন চিনি লবণ ছাড়া চা
আর আস্তাবলে ফুঁসছে তার ঘোড়া,
সহিস জুতে দিচ্ছে জিন।
নক্ষত্রখচিত রাজপথে
সাঁ সাঁ বাতাস দিচ্ছে খুব
উড়ছে সাদা কেশর
আর সম্রাটের দাড়ি। "
এখানে আস্তাবল, নক্ষত্রখচিত রাজপথ, সাদা কেশর, সম্রাটের দাড়ি, কি ভেবে লেখা হয়েছে জানি না।  এবং সম্রাট খাচ্ছেন চিনি লবন ছাড়া চা। এই স্তবকটি বা পুরো কবিতাটিই হলো কাব্যভাষার স্বেচ্ছাচারিতা এবং অমঙ্গলবোধের আধিক্য,  কবিতার অন্যতম চিরকালীন বৈশিষ্ট্য। এক ধরনের ধ্বংস ব্যঞ্জনা যা আমাদেরকে জোরালো আঘাত করে। বহমান সময়ে ত্রিপুরার বাংলা কবিতার শরীরেরও রয়েছে এই স্বেচ্ছাচারিতা।

“এই জনপদে গীতার মন্ত্রগুপ্তি কামনা করে যে প্রমিত মনন
আমি তার পোষা রাজহাঁসেদের সমুন্নত গ্রীবার কাছে মুখ নামিয়ে, কানে ফিসফিস করব
“আজাদি!
      আজাদি!
আমি শক্ত, ক্রমে আরও শক্ত হয়ে উঠব আমি
মানুষের বাচ্চাদের এই উত্তেজনাটুকুই মহাকাব্যিক “

"এগিয়ে আসুন।
বাইফোকাল মুছে দেব সহিষ্ণুতা দিয়ে
সাবধান
সাদাকালোর তফাৎ দেখে
আঁতকে ওঠবেন না
পাশের ঘরে দিব্বি ঘুমোচ্ছে
কুলুপ আঁটা প্রতিবাদ "

"খাটে শুয়ে আছে বাবা
কাশির সাথে রক্তপাত সামান্য কমেছে
তাঁর চোখে আমার জন্য করুণা ছাড়া কিছু নেই “

"স্বাদ কাকে বলে জিজ্ঞেস করুন সে আগুনকে যে চিতার কাঠের স্বাদ নেয় অথবা সেই মাটিকে যার কাছে চির বন্ধক রাখা হয় কফিন। "

"তবুও মা ফেলে চলেছেন ফ্যানাটিক অশ্রু
বুঝিনা "আশাপূর্ণা! "
তুমি কী করে শিল্পের ক্ষত বুকে নিয়ে
টিকে থাক এতকাল ",

“পাড় ভেঙে শয্যাশায়ী দুটি বৃক্ষ
তোমার হয়ে পড়ে রইলো
অপত্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।
শুধু হাওয়ার কথা হলো …
জমে যাওয়া ধোঁয়ার ধারণা থেকে
বৃষ্টি হলে তুমি নদী পেতে পারতে। “

"মাথার উপর ভাসমান হরিদ্রাভ শামিয়ানা
কৌটো ভর্তি পঞ্চাশ রঙের তারা
আকাশ খসে নেমে এলো সূর্যের পলেস্তারা
আমি ক্ষত মৃত্তিকার মুথাঘাস, জলকণা, শরীরে থেকো বারো মাস "

এই যে সামান্য কয়েকটি পংক্তি পড়লাম। সামাজিকভাবে একা কবিতার চিরকালীন নিভৃত পংক্তি, যেগুলো আবার চুরান্ত সামাজিকও বটে,   সমাজের যেদিকে অন্ধকার, কবির চোখ অবধারিত ভাবে সেদিকেই পরে। সে কি প্রতিবাদ, স্বগতোক্তি না হতাশা, যে যেভাবে নেন।

.............................

"বাড়িতে আজ মহাভোজ। বাহিরে ভীষণ বৃষ্টি আর অন্তঃপুরে গান। পূর্বপুরুষের জন্য থালে থালে সাজানো বাড়ান। সাকিন ভানুগাছ। জিলা শ্রীহট্ট। আমাদের চারপাশে এখন অনেক কাক"

“প্রতিটি উদাসী পালক জানে, আজও
দিগন্তব্যাপী শুধুই কাঁটাতার
ঘ্রাণকাতর কতিপয় বিষণ্ণ ছায়া
বিরহী গল্পের মত নির্ণিমেষ
উড়ে চলে যায়
সীমান্ত হাটের দিকে…”

"আমার ঠাকুরদার নদী ফেনী,
আমার মুহুরী।
বাবার দুটি নদী
একটি রিফিউজি
একটি অবৈধ।"

কয়েক প্রজন্ম কেটে যাচ্ছে তবুও পূর্বপুরুষ নিয়ে বাঙালীর একই নস্টালজিয়া, যা কাটাতে পারছেন না আজকের সদ্য তরুণ লেখকটিও। এই যে ভূমিহীন মানসিকতা বাংলাসাহিত্যের এক সর্বগ্রাসী সরব শিকড়, ত্রিপুরার বাংলা কবিতারও এর থেকে মুক্তি নেই।
........................
"তারই নাম শুশ্রূষা
একটু ছোঁয়া পেতে তার
প্রতিটি পুরুষ মনে জেগে উঠে সুজাতা
আমাদের পুরো গ্রাম হয়ে উঠে বুদ্ধের মুখ
মাঠে ঝরে পড়া ধান কুড়োতে আসে চাঁদ "

"কাস্টমার আমাকে তার সবচেয়ে ময়লা নোটটা এগিয়ে দেয়
আমিও বিনিময়ের সময় আমার সবচেয়ে ময়লা নোটটা তাকে এগিয়ে দিই
এভাবেই ময়লায় ময়লা বিনিময় হতে হতে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে।"

"প্রত্যাখানের মন্ত্র শিখে নেওয়াও জরুরি
গ্রহণের মতোই দরকার ফিরিয়ে দেওয়া "

"একটা সুখ অসুখের মতো
পড়ে আছে অন্য ঠিকানায়
আমি আছি বৃষ্টির শহরে
অরণ্য পাঠশালায় "

“একফোঁটা বিষ
দাঁতের ফাঁকে সরু নালীতে
নিংড়ে নিয়ে সারারাতে
আমার সংসার ডমরুর তালে তালে
বৈরাগী তিলক কাটে প্রশস্ত কপালে "

কবিতা ও জীবন একই জিনিসেরই দুইরকম উৎপাদন। পৃথিবীর সমস্ত জল ছেড়ে দিয়ে যদি এক নতুন জলের কল্পনা করা যায়, পৃথিবীর সমস্ত দীপ ছেড়ে দিয়ে যদি এক নতুন প্রদীপের কল্পনা করা যায়, তাহলে এই দিন, রাত্রি, মানুষ ও তার আকাঙ্খা এবং সৃষ্টির সমস্ত ধুলো, সমস্ত কঙ্কাল ও সমস্ত নক্ষত্রকে ছেড়ে দিয়ে এক নতুন ব্যবহারের কল্পনা করা যেতে পারে যা কাব্য অথচ জীবনের সঙ্গে যার গোপনীয় সুরঙ্গলালিত সম্পূর্ণ সম্বন্ধ, সম্বন্ধের ধূসরতা ও নূতনতা।
সেই তো একজন তরুণ কবির কবিতার নির্জনতম, ‘নতুন প্রদেশ ‘। ...জীবনানন্দ দাস
কি আশ্চর্য সুন্দর করে জীবনানন্দ আমাদের কথা বলে গিয়েছেন, তাকে  আমাদের চলাচলের এই অদ্ভুত অনুবাদের জন্য চমকে উঠি।
আরো কয়েকটি লাইন পড়ছি।  

"এখন আর যাপন ক্রিয়া লিখি না
যে মেয়েটি বলেছে ...বিশ্বাস করতে ভয় পাই
তার দুঃখের ভুবন চিহ্নিত করি “

"বিকেলের সবুজ ব্যালকনিতে
আতপ মৃদঙ্গ বদলে দেয় স্মৃতি ধৈর্য
আলোর পরিধিস্থ সূত্রগুলো
সম্পর্কের বহুমাত্রিক চিত্র
ভেঙে খুঁড়েছে অবশিষ্ট স্বপ্ন "

“ভোজসভার আগে
একটা যুদ্ধ হোক
না হলে খাবো কি “
“এখন পৃথিবী গরম হচ্ছে আবহাওয়া বদলাচ্ছে
বর্ষার আগে বসন্ত, শৈশবের আগে বয়ঃসন্ধি এসে পড়ছে “

“আঁধারের পায়েশ শুঁকে এলাচ বাতাস ছড়িয়ে দেয় কিছু জোনাকি।  “

রূপ আর প্রসঙ্গের পরিপূর্ণ সঙ্গমেই কাব্যের জন্ম। একটি লোকত্তর পটভূমি না জুটলে কবি তো কবি, খুব স্থূল অনুভূতির মানুষও বাঁচে না।

"অন্ধকার জুড়ে রাত্রির মাদকতা
বরাহেরা কুড়ে কুড়ে তুলে রাতের লেদাপোকা
মধ্যরাতে তাই তুমি গানরেঞ্জে চলে আসো হাসমতি ত্রিপুরা। "

এসমস্ত লাইন কবিতাকে চির আধুনিক করে অথবা সেই সত্যই বার বার প্রমাণ করে কবিতায় আধুনিকতা বলে কিছু নেই, আধুনিক শব্দটিই চুরান্ত আপেক্ষিক, সেই আপেক্ষিকতার উৎকৃষ্ট উৎকর্ষ সাধনে ত্রিপুরার সমকালীন তরুণ কবিরা মগ্ন। মগ্নতা ভীষণ সুন্দর করে ছুঁয়ে দিচ্ছে উপমা, রূপকের মেধাবী ব্যবহার।
আর, কবির কল্পনায় কি ধরনের গানরেঞ্জ আছে জানি না।
কল্পনার হাত ছাড়িয়ে বলবো হাসমতি,  ত্রিপুরার
মেঘলা প্রান্তরে দাঁড়িও, গান রেঞ্জে নয়।
ত্রিপুরার বাংলা  কবিতায় মেয়েদের কলম নারীবাদী অথবা যে বিন্দুতে একটি কবিতাকে মেয়েদের কবিতা বা ছেলেদের কবিতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় সেই অসম বিন্দুটিকে অতিক্রম করেছে, কবিতা ধাইছে প্রবল শক্তিতে, উন্মুক্ত ঝর্ণার মতো।
"পতাকাসর্বস্ব ভারতবর্ষে
কোথাও স্বাধীনতা নেই
না ডানা, না শেকড়
কেউ পায় না
আকাশ অথবা মাটির ঠিকানা "

“আমার সকল মাংস ম্যারিনেট করে চলে গেছে কুক।
গরম তেলে ফুটছে তেজপাতার মতো জিভ।
এপাশ ওপাশ লাফাচ্ছে কলজেটা।
এ মা কেউ তো নাড়ছে না!
এলাচ দানার মতো
আমি কি একটু থেতলে দেবো তাকে? “

“স্কুল থেকে ফেরার পর আমি বিষণ্ণ ডোবাটার পাশে বসি,
মাঝে মাঝে শখ করে ওর জলে হাত বুলাই,
ছুঁয়ে দেখি তার বিকেলের একাতীত্ব, জলে গুলে থাকা কষ্টগুলো।
টের পাই কিছু ডোরাকাটা দাগ লেগে আছে আমার আঙুলে”

একজন তরুণের মধ্যে আত্মপরিচয় লাভের আকুতি থাকবে, সত্তাসংকটের তীব্রতা ও ব্যপ্তিবৈচিত্র থাকবে, ত্রিপুরার বর্তমান কবিতাও সেই দিকমুখীই।

“ঐ বাপ ----
কাইল ইস্কুলে স্বাধীনতা হইবেক
খিচুরি নাহি হইবেক গ
লেবেনচুষ দিবে , বিস্কুট ভী দিবে
উহাতে কি দিনভর পেট চলে ?
ম্যুর জইন্য রাইতে দুঠো পান্তা কইরে রাখিস বটেক
বেজান ভুখ লাগে গ ,
পেটের ভুখ অধীনতা নাহি মানে
উ ভী কাইল স্বাধীনতা মানাইবে
কাইল স্বাধীনতা হইবে গ “

“প্রতিটি উড়ান চক্কর কেটেছে
মাথার ওপর , 'চল সমুদ্র মন্থনে'
তবু গত ছ মাস নিরাসক্ত ঘুমিয়েছি আমি
বিশ্বাস রাখিনি কোন জাগ্রত সত্ত্বায় !”

"কালো আয়না নিজের পিঠের সাথে দেখা করালো,
অগণিত ছুরি আর একপাশে একটু শাবাশি চিহ্ন "

এইসব  নিয়েই তৈরী হয় নিজস্ব ভুবন অথবা স্বপ্ন।

"রোদের পতনের শেষে
যখন বৃষ্টি আসে
বিশাল এক নির্জন দ্বীপে
রূপালি গির্জার মতো ফুটে ওঠে পৃথিবী "

কিংবা
"ঈশ্বর ঢালছেন বেদনার রস
জীবনকে মুছতে মুছতে চুমুক দিলাম
মাংসের শরীর, তাই পুড়ে যেতে
বেশি সময় লাগল না। "

তারপর,
"যৌনতা মানি না। ভাসান বা বিসর্জন কিছুই নেই
দুর্গার ভাসানে যারা "হেই শীলা হেই জওয়ানী "বলে উদ্দাম নাচে
ভাসান না দেখেই সোজা ফিরি প্রেমিকের সহবাসে। "

“এমন তো কথা ছিলো না
নিজস্ব নদীটি কারো কাছে
সমর্পিত হবে !...
কত খড়কুটো ভেসে আসে
কিছু তুলে আনা আর
কিছু ফেলে দেওয়া যায় ভেসে ।
শুধু নিজস্ব নদীটি নিজেরই থাকে
অতি সঙ্গোপনে ।  “

"ছাই রঙের মলাটের ভেতর যতো আধাসত্য আছে
সবকিছুর মুখে ঢেলে দিই আমার জাতমারা বীর্য
এই আমার পুরুষ জন্ম এবং পতনকালে মৃত্যু
নারীজন্ম হলে পৃথিবীতে নামবে হিমবাহ সিঞ্চিত জলধারা "

“এক একটা ঘুমের নাম দিতে পারি দুর্ঘটনা বা ঘটনা,
প্রতিটি ঘুমের জন্য তো একমিনিট নীরবতা পালন করি মাত্র। “

“একটা দীর্ঘ স্বস্তি, নিরাপত্তা দেয় নেমপ্লেট
বছরে একবার শেওলা সরিয়ে
চুনকাম হয় বাইরের দেওয়ালে
সুরক্ষিত ঝকঝকে বাহ্যিক “

“যার রক্তের সনেট জুড়ে কেবল কবিতারই লালমাটি ,
তাকে অন্ততঃ ভালোবাসা শুঁকিয়ে দুঃখে ভাসাতে যেও না । “

এইমাত্র যে সংক্ষিপ্ত লেলিহান পথটি অতিক্রম করে আসলাম, তারপর বলি, কবিতাকে বিশেষ বিশেষ কুঠুরীতে আবদ্ধ করে, এটা দুঃখ, এটা প্রতিবাদ, এটা প্রেম, এটা বিরহের কবিতা এই বলে  চিহ্নিত করাকে আমার ভালো লাগে না, যদিও আমিও এর ব্যতিক্রম নই, সুবিধার্থে করতে হয়, আরে কবিতাও তো খেটে খাওয়া মানুষ, সব রঙই একসাথে মাখতে চায়, কারণ জীবন ছোট । দীর্ঘদিন অতিক্রম করে একটি কবিতাপংক্তি যখন মানুষের ঠোঁটস্থ হয়ে যায়, তখন তার অর্থ হয় বহুগামী, আরো পরিস্কার করে বললে বহমান সময়ে ত্রিপুরার বাংলা কবিতা সর্বত্রগামী, সাবলীল, উপমা, বিষয়, চিত্রকল্প সমস্ত কিছু নিয়েই যত্নশীল এবং  দায়িত্ববান।
কবিরা কিন্তু স্বভাবে ধূর্ত , সেকালে, একালে এবং সব সমকালেই  । কিন্তু যখন সে কবিতা লেখে তখন সে ধূর্ত থাকে না, মানুষও থাকে না, তখন সে কবিতার অপার্থিব বেদনাসম্ভব দেবদূত হয়ে  যায়।
সে কারণেই শেষ কথা বলা যায়, মানুষের কাছে মানুষ কোনদিন বিচার পাবে না, পাবে কবিতার কাছে। যে তরুণ  কখনো কবিতার কাছে আসবে না, সে মানুষ জন্মে আজীবন জানতেই পারবে না যে জীবনের আসল মায়াশুদ্ধ বিচার কি।  
এসব কিছুই কোন ধাঁধা নয়, কাহ্নপাদ থেকে লালন সাঁই  সবাই কাব্য পরিক্রমার মহাত্মা সাক্ষী।

“অথচ আমি মরিনি, ঘাসের উপর যে ফুল মাথা
তুলেছে তাকে বিশ্বাস করেছি। “
আমাদের বেঁচে থাকা ভিজে আছে এ বিশ্বাসেই। “

এই বিশ্বাস সব তরুণকবির অঞ্জলিপুটে থাক।
ত্রিপুরার তরুণদল আরোও বেশি কবিতা লিখুক, সমস্ত নিয়মাবলী ভেঙে চুরে সৃজনশীলতার আশ্চর্য নিকেতন গড়ে তুলুন, বহমান সময়ের ত্রিপুরার বাংলা কবিতা যেন তাই হয়।

"কবি যদি প্রেমে পড়ে  গাছ হয়। এভাবে শতশত কবির প্রেমে গ্রাম। "
আমরা সবাই সেই একটি গ্রামের বাসিন্দা, দিনরাত কুয়াশার চাষ করি, তাই তো?

পংক্তি ঋণ ::
অনিরুদ্ধ সাহা, মৌলিক মজুমদার,তনুজ,
চিত্তরঞ্জন দেবনাথ, সুমন পাটারী,  শান্তনু চক্রবর্তী,শুভদীপ দেব, রাজীব মজুমদার,  মৃদুল দেবরায়, মৃণালকান্তি দেবনাথ, পার্থ ঘোষ, অভীককুমার দে, পঙ্কজ বণিক, তমাল শেখর দে, রাহুল সিনহা, প্রাণজয় সিনহা,অমলকান্তি চন্দ,  গোপেশ চক্রবর্তী, রাজেশচন্দ্র দেবনাথ, শুভ্রসংকর দাস, সম্রাট পাল, হারাধন বৈরাগী, পদ্মশ্রী মজুমদার, প্রীতি আচার্য, পায়েল দেব, মধুমিতা নাথ, অর্পিতা আচার্য, সুমিতা ধর বসু ঠাকুর, স্বপ্না নাথ, মৌসুমী মন্ডল দেবনাথ, তমা বর্মণ, দেবাশ্রিতা চৌধুরী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, রিয়া দেবী, মন্দিরা লস্কর, আম্রপালী এবং শেষ করলাম যার পংক্তি দিয়ে তিনি অভিজিৎ চক্রবর্তী।

















0 মন্তব্য(গুলি):