বর্ষার কবিতা, শ্রাবণের ধারার মতো
চিরশ্রী দেবনাথশ্রাবণের ধারার মতো
এক
কষ্টের কাছ থেকে দূরে যেতে চেয়ে
বার বার কষ্টের কাছেই ফিরে আসি
অনিন্দ্যসুন্দর , এতো রঙ, রাগাশ্রয়ী, ধীর সে
বটবৃক্ষের ছায়াতলে আমি কষ্টের চিবুকে হাত রাখি
তাকে একা একা দেখি, একা স্নান করে প্রতিবার আলো মেখে উঠি
দুই
মাটির পায়ে হাত রেখে আবারো ভেসে যাচ্ছে শ্রাবণধারা
প্রণাম করে এসেছি আমি, পুনরায় গাছ হয়ে জন্মেছে নয়ন
কেউ যদি দূর থেকে দেখো তারে, হলুদ পাতার মতো অযত্নের দাগ
যে জন্ম মাটি থেকে তুলে আনে জীবনের রঙিন
নিভৃতে তপোবনে আবছায়া দিয়ে ঘিরে রাখে বারুদের জঞ্জাল
তার কাছে চেয়েছো তুমি আজন্মের আশ্বাস
ভয়ে মরে যেতে যেতে আগুন খেয়ে উঠে গেছে সে
রেশমের কাপড়ে নোনাজলে ফুটে উঠে ক্রমাগত অক্ষরের দাগ
তিন
বর্ষার সঙ্গে প্রতিবার ভেসে আসে পৃথিবীর দুঃখ
কী হবে অমরত্বের কথা ভেবে ভেবে ব্যথিত হয়ে
তার চাইতে কুড়িয়ে নেই অপমান, ভালোবাসা, প্রেম
এ জন্মকে ক্ষতবিক্ষত করে শরীরে এঁকে রাখুক মিথুন চিহ্ন
সে মানুষ এভাবেই গিলে খাক নিজেকে
একা একা লিখে রাখুক বারিধারার শহরে এই পবিত্র আচমন
জীবন দেখে, শুষে, পায়ে পিষে, হাওয়ায় উড়িয়েছে কেউ
এবার তাতে পচন হোক, মরতে চলেছে অঙ্গুরীয়
প্রাণবায়ুর কাছে হাঁটু মুড়ে বসে আছে
সেই বাজে অসহায় মানুষগুলো ...তুমি দেখো না তাদের
চার
যে বরিষণ আনে ক্ষুধা, ভাঙা ঘর, ভূমিধ্বস্, নেভানো চুল্লী
তাকে ঘিরে কেন আমরা লিখে রাখি বিরহের গান
এ বিরহে শরীর নেই, আশ্লেষ থেকে উঠে গিয়ে বসেছে
কৃষকের ঘরে,
আলিঙ্গনের পাশে অবহেলায় পড়ে আছে যাবতীয় ছোবল
অনন্ত প্রসবিনী সে, নারী হয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাটির ভেতরে
এখন তার ভরে ওঠার সময়, ফুরিয়েছে অম্বুবাচির ক্ষরিত লাল
এই সাময়িক উত্তেজনায় বর্ষা কাতর হয়নি কখনো,
আগে ভেঙে দেয়, তারপর নিয়ে আসে শোভা,
আমাদের দেহে প্রদীপের মতো জ্বেলে দেয় অপেক্ষা
পাঁচ
বর্ষার রাতে আঠারমুড়া থেকে খুলে গেলো যেন পাতার বসন
নগ্ন হতে হতে তার দেহে জেগে ওঠে অবাধ্য তৃণ, যোনির মতন
সেগুনের মসৃণ ডালে শঙ্খচূড়ের ফণায় তখন চাঁদের মধুদাগ
উদ্দাম ঝর্ণা উন্মুখ, গিলে নিচ্ছে ল্যাটেরাইট মিশ্রিত জল
এমন রাত্রি ভেসে যাচ্ছে, এখনো উদ্ধত কেন পাহাড়ী অভিমান
বুনো আলু পোড়াচ্ছে কেউ, ভেঙে গেছে মৌচাক, রসের জ্বলন
২৮/০৭/২০২০ ইং
0 মন্তব্য(গুলি):