বসন্তের কবিতা

৪:৫২ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments



কন্ঠীবদল
.............
শ্যামলীরাই বোষ্টমী। জেলা উত্তর ত্রিপুরা। গ্রাম "পলাশকুঞ্জ "।
সাড়ে কুড়ি বছরে কন্ঠীবদল।
তখন ফাগুনমাস। বেহায়া বাতাস। দুজোড়া ধুতি চাদর।
পলাশফুল পড়ে পড়ে পিছল হয়ে থাকে আখড়ার প্রাঙ্গন।
তিলক মুছে তিনবার মাছ খাওয়া হয়েছে।
দুবার মুরগীর ঝোল। তিনখানা হিন্দি ফিল্ম। নাচ গান।
এটুকুই অবৈধ বসন্ত। বাকি সব কীর্তন। সপ্তমীর জ্যোৎস্না।
শিউলি, কাঞ্চন, রঙহীন জবা তুলে তুলে নারায়ণের চরণে।
দোলের দিন সবুজ রঙ, গোলাপী আবির, সঙ্গীর পুরাতন মুখে
ভিক্ষাকষ্ট  শুধু।
পুন্যের মাস। কার্তিকের কুয়াশা মেখে মেখে শহরের অলিগলি ঘোরা হয়।
একজন মরল, দ্বিতীয়জনের লগে কন্ঠীবদল।
শ্যামলীরাই
হাসে না। নামগান করে।
তৃতীয়জন এলেই বা কি। বয়স তার এখন সাঁইত্রিশ।
ভরা হাতে মাছ কাটতে ইচ্ছা হয়। রক্ত ধুয়ে তেলে হলুদে জমিয়ে গন্ধ ছাড়তে ইচ্ছা হয়।
না হয় সন্ধ্যাবেলা একটু তুলসীতলা। বাকি মাছভাত আর রমণ।

সে হবার জো নেই।
অথচ ভক্তি নেই।
ঘোর সংসার বুকের ভেতর।
ঘরবাড়ি উঠোন চুলা আর পুকুরঘাট সমেত।
গাছভর্তি আমের বোল। কষা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ফাগুন চৈত্র মাসে, আর পুকুরের জলে গা ধুতে ধুতে লাক্স সাবানের ফেনায় ফেনায় ধুয়ে যাচ্ছে বোষ্টমী রঙ।
তিলকের মারপ্যাঁচ,  তুলসীমালার বৈরাগ্য।

ট্রেনে কইরা আসাম যাওয়ার সময় দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা।
ভরা যৌবন।
বিবাহের রঙ নাই কপালে। কিন্তু বোঝা যায় মাংস ছুঁয়েছে তারা। কই কন্ঠীবদল তো হয় নাই।
জীবন্ত স্বাধীন। শ্যামলীরাই কীর্তনের সুর তোলে। দশটাকা, দশটাকা দেয় দুজনে।
কয় আশীর্বাদ করো যেন  আজ রোজগার হয়, আমরাও বোষ্টমী, ঘর আছে,  ঘর নাই। বাইরে বেরুলেই  টাকা।
বাড়ি ফিরলে জিগায় টাকা আনছো নি?

তবুও তোমাদের  তো ভণিতা নাই, শ্যামলীরাই তর্ক করে।

হি হি ! ভণিতা ! ছুরির মতো হাসি। নাহ্ ভণিতা নাই, রঙখেলার দিন কৃষ্ণ আসে খেলতে।
তার চোখে দেখা যায় এই  বসন্তকাল।
গোপী মেয়েদের ব্যথা।
কত কত রঙ নিয়ে আমরা পদাবলী লিখে যাই।
`মানুষ ভুল করে ভাবে ধর্মের গান, অথচ এসব
আসলে নাড়ি ছেঁড়া অশৌচ কাল।




বসন্ত এলো বলে

ফুলকপির কেজি কুড়িটাকা, বাঁধাকপি দশটাকা।
আরো কুড়ি বছর পর কেউ যদি এই লেখাটি পড়েন,
দামটা আরো একটু বাড়িয়ে দেবেন অনুগ্রহ করে।
এইভাবে ফাল্গুনমাস প্রবেশ করে কৃষকের ঘরে
শিশির তখন ঝরে যাচ্ছে অভিমানের মতো
বসন্তকাল তাই শুধু কৃষকবধূর ভাঙা নথ, ধূসর স্বপ্ন।
এইসময় বিবাহের চিঠি এলে মনখারাপ হয়
সানাই বাজলে, মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিষাদ
বসন্তের দুহাতে কে যেন দিয়ে গেছে শুধু বিদায়ের অভিশাপ
তার সারা শরীরে পলাশের জমাট বাঁধা কালো রক্ত
প্রেম চলে গেলে মানুষ যেমন ম্লান হয়ে যায়
বসন্ত সেই হেরে যাওয়া বিরহী প্রেমিক,
গাঢ় ধুলো যার শরীরে সহস্র শতাব্দী ধরে

মিথ্যে বললাম বোধহয়, বসন্ত এলে মনে হয়,
পৃথিবী কোথায় লুকিয়ে রাখে তার বিচ্ছেদ,
আজন্ম আনন্দ কেনো এই ঋতুর দোহারে,
অবিরাম পরাগসংযোগে তার ক্লান্তি নেই
মৃতশরীরের রন্ধ্র থেকে বেজে ওঠে পৃথিবীর সুর ,
শুকনো পাতা ঝরে পরে মাটির দুরন্ত আলিঙ্গনে

বসন্ত এলো ...তাই তোমার পুরনো চোখে হারিয়ে গেছে
আমার পুরনো চোখ।। 



গুলাল
   
উড়ছে আবির, তোমার চুল
বলছে পলাশ, বলছে শিমুল
বসন্ত আজ, বসন্ত কাল
জ্বলছে রোদ তপ্ত ধুলো
হলুদ রঙের ওড়না গুলো

শহর জুড়ে  হৈ হৈ হৈ
বসন্ত বিহঙ্গ  ভুলেছে দিক ঐ
গানওয়ালা সাধছে খেয়াল
রঙমহলে বেজায় ধুন
বাজছে মাদল, বাঁশের বাঁশি
তোমার সঙ্গেই ভালোবাসাবাসি

তুমিই  কেন মাখছো বিষাদ
হচ্ছো কেন একলা মাঠ 
গেন্দা ফুলের মালা দেবো
ঘোল খাওয়াবো নেশা দেবো
সঙ্গে এসো সঙ্গে এসো

বয়স হয়েছে কার যেন
লাল আবির তাকেই মাখো
হয়েছে কার অভিমান
তার সঙ্গেই যত গান

এই বিকেলে ভুলো সব   
রঙের জাদু ছড়াক মধু
গুলাল এনেছে শ্রী রাধিকা
বইছে ফাগুন, উড়ছে ব্যথা

একটি পৃথিবী আমার তোমার
কোথায় যেন ধূ ধূ সন্ত্রাস
বসন্ত সুর পৌঁছে দেবো
বাউলগুলো ক্ষেপেছি আজ

একতারা আর ধামসা বোল
সবুজ শাড়ি গামছা প্যাঁচ
জ্যোৎস্না রাতে আলপথে
হাঁটছে মানুষ, খেলছে দোল

রঙ আমাদের হাতে হাতে
ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবী জুড়ে
মেঘলা আকাশ এক ফাঁকে
বৃষ্টি হয়ে নামুক ঝরে 






ভারবাহী
......
রাজিয়া সুলতানা , নূরজাহান, লক্ষ্মীবাঈ, আরোও কত সম্রাজ্ঞীরা, 
আছেন, যুদ্ধে ও শাসনে, তখনও এবং এই সায়াহ্নেও,
উড়ছে আতর, রঙের গুঁড়ো তাদের প্রাসাদে
ভগ্নপ্রায় আলোর তলায় আমার কৌতুক রাখি
সেইসব স্তিমিত অধরগুচ্ছে যেন বিদ্যুৎ চমকালো ...
প্রত্যেকেই ক্ষমতায়নের পর  ভালোবাসার অপেক্ষায় বসে আছে

0 মন্তব্য(গুলি):