সংলাপ কবিতা, চিরশ্রী দেবনাথ
বইের নাম, সংলাপ কবিতা
উৎসর্গ
" আমার দ্বিখণ্ডিত সত্তাকে "
মানুষ সারা জীবন ধরে অপেক্ষা করে একটি স্বপ্নের কথোপকথনের, অপার্থিব কোন সন্ধ্যার।
উল্টোদিকে তার চোখে চোখ রেখে যে বসে থাকবে সে তার সবচেয়ে কাঙ্খিত প্রিয় মানুষ। এই মানুষটির কাছে সে নির্জন পাইনবনের মতো। একান্ত মুহূর্তটি এসেছে যেন কত বছর পেরিয়ে। সামনের মানুষটির চুল উড়ছে, চোখপল্লব নীচু, ঠোঁট ঘেমে যাচ্ছে অথবা এও হতে পারে বলিষ্ঠ কব্জিতে চমৎকার সময়যন্ত্র, গিরিখাতের মতো মন্দ্র কেউ।
ভেতরে বরফের পাহাড়, অল্প অল্প সূর্যালোকে আলতো করে গলে যাচ্ছে। তখন হয়তো কোন কথা পাওয়া যাবে না, মনের ক্ষত থেকে উঠে আসবে না ধোঁয়া, তবুও সেখানে লেখা হয় কিছু। এইসব লেখালেখিই আমার কাছে প্রকৃত কবিতা।
কিন্তু কবির তাতে শান্তি নেই। তার মধ্যে খুব চালাকি আছে, লোভ আছে সুন্দরকে সুন্দরতর করার।
ধূর্ত লেখক তখন তাতে পাগড়ি পরান, কোমরে তলোয়ার, পায়ে নাগরা জুতো, ঘটা করে তার নাম দেন "কবিতা " ।
অপটু, অস্ফুট, অর্থহীন কথোপকথন ভেতরে ভেতরে ঘামতে থাকে, তাকে ঢেকে রাখে কবিতার বর্ম। রসিকজন, সেই কবিতার চুলচেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এতো সব ভীড়ে সামনে বসা সঙ্গীটির খুব বিষাদ হয়। সে আফসোস করতে থাকে কেন তার বারান্দায় দুপুরের রোদ পড়ে না, কেন সে ঘুমিয়ে যায় দুর্দান্ত পংক্তি যখন মেধার কাছে আত্মসমর্পণ করে।
তবে কি কবিতাকে মেধাবী হতে নেই, সংগ্রামী হতে নেই, কিংবা দারুণ প্রতিবাদী?
তাকে সবকিছুই হতে হবে? তবেই শেষ। কবিতা তখন জয়েন্ট এন্ট্রান্সে চান্স না পাওয়া আঠারোর স্বপ্নছেঁড়া টিন এজ।
একবার মনে হয় কবিতায় গল্প বলি, আবার মনে হয় গল্প খুব তাড়াতাড়ি পুরনো হয়ে যায়, অথচ তোমার সঙ্গে আমার কথোপকথন কোনদিন পুরনো হবে না এটাই আমাদের শর্তহীন শর্ত ছিল।
সমস্ত বাঙ্ময় কথোপকথন একসময় বৃদ্ধ হয়, নিস্প্রভ হয় তার চকিত দৃষ্টি, বারান্দায় আসে কবিতা, ঘরে আমি, আলোর চোখে দেখছি তাকে, যত দূরে যেতে থাকে বিরহ, যত দূরে যেতে আবিরের রঙ, কবিতার তাঁবু তত রহস্যময়, সেখানে সহজ পংক্তিরা এসেছে, গায়ে মাখানো মঞ্চজীবনের সমূহ অহংকার, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে সে আমাকে দেখে, দেখছে কলমের আগে আমি ধুঁকে ধুঁকে চলছি...ঠিক যেন,
"হঠাৎ করে খুব ক্লান্ত লাগছে
মনে হয় একজন আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে আরো ক্লান্ত হয়েছে
তাকে ভালোবেসে এসব বলতে বলতে
আসল রহস্যময় দ্বীপ ছেড়ে এসেছি
সামনে নিতান্তই নদীবারান্দা, নৌকাবাটি
এখানে আমার সকল অহংকার শেষ করেছি, এমনকি গন্তব্যও
যা কিছু আড়ম্বরহীন, তাই দিচ্ছি, স্বঅভিমানে "
এই বুড়ো হয়ে যাওয়াটা, ক্লান্ত হয়ে যাওয়াটা কবিতার জন্য খুব ভয়ঙ্কর, তখন নারীর কাছে যেতে হয় অথবা পুরুষ অথবা সেই হিরন্ময় ব্যক্তিগত কথোপকথন , তীরভাঙা, মোহনার কাছাকাছি বসত যার ...
সে সময়টাতেই মানুষ অথবা কবি চঞ্চল হয়ে ওঠে, গালিগালাজ দিতে শেখে, গলগল করে উগরে দেয় বিষ, এ হলো কবিতার আত্মহত্যা, আর যিনি আত্মহত্যা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি তখন পৃথিবীর পথে হেঁটে চলা আনন্দময় বাউল, যার পকেটে একটি টাকাও নেই, সংসারের ক্যাচোরম্যাচোর আছে, আছে বাইশ শতকের দুধর্ষ কবিতা, হয়তো পাঠ করার জন্য বসে আছে ডিজিটাল যুগের কোন অম্লান তরুণ।
যাওয়ার আগে,
পাশাপাশি বসি, কিছুক্ষণ আজ, কেমন নীলবর্ণ গোধূলি
গোধূলি লাল হয়, নীল তো তার বেদনা
ভারতের অবস্থা এখন কেমন?
খুব ভালো, প্রাণ এসেছে, ফিরে আসছে বিশ্বাস, হাতে হাত
তবে যে সবাই বলে রক্তাক্ত, হত্যা আর দ্বেষ
বাদ দাও তো,
এনেছি পুরনো খাম, বিগত দিনের দলিল, আলপনা
তাহলে খুলে বসো পূঁথি, চশমা হারিয়েছো?
হয়তো
আসলে হারিয়েছি এতো কিছু আমরা, সেই পুরনো সময়, অভিমান না ভাঙানো মধ্যাহ্ন, স্পর্শক বিন্দু
এখন তো মেঠোপথ, সামনে অতিথিশালা, চলে এসেছি একসঙ্গে অথচ আলাদা আলাদা...
সংলাপ : এক
গনতন্ত্র ও অন্নকূট উৎসব
গনতন্ত্র ... এইভাবে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেরিয়ে কেন তুমি আসো বার বার, আমাদের এই ছোট্ট ছোট্ট গা গঞ্জগুলো তো ঘুড়ি খেলা আর উত্তরসংক্রান্তিকে ভুলে গেছে কবেই !
আমাকে যে নিয়ে আসে তুলোট কাগজের কল, হালখাতার উৎসব।
আর, আর? আর কেউ না?
কেন তুমি কি চেনো না, রবিনা খাতুন, রাধা ভাবী, হাসনুহেনা হাঁসদা কিংবা শিখা নমঃ কে, ঐ যারা ভোটের বাক্সে
বুকের রস, জিহ্বার স্বাদ দিয়ে যায় , চুম্বনকে আহ্লাদ বলে, পায়ের গোড়ালি ভর্তি করে নিয়ে আসে ধানের খোলস।
চিনি, খুব ভালো করে চিনি , তারা শীতের ঝড়, নষ্ট ফসলের লাশ।
জানো তো? মিছিল হয় দেশে প্রতিদিন, একহাজার, এগারোটা মিছিল হয়েছে আমার কালরাতের স্বপ্নে। তারা ভোট দিতে যায় সূর্যের গুঁড়ো মেখে।
আমিও জানি তাদের, জলসত্র রাখি না, নদীর মুখ ঘুরিয়ে দিই তাদের দিকে পিপাসার দিনে,
তাইতো বলি তুমি এখনও কম দামি যবের ক্ষেত, গুলমোহরের বাগান, দ্রাক্ষাক্ষেতের গ্রাম, স্বর্ণমুসুরীর মেঠো শরীর ...কেমন করে চেটে চেটে আসো বছরের পর বছর ধরে !!
সংলাপ : দুই
নীরবতা আসন্ন
অবন্তিকা?
কি?
কেমন আছো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে না একবারো
কিসের জোরে করবো
চেনাজানা হয়েছিল এই জোরে
সমস্ত সূত্র হারিয়ে ফেলেছি একেবারে,
মেলাতে পারছি না আর জানাশোনার পথ, তাই চুপ করে থাকি, চুপ করে থাকি শুধু
সংলাপ : তিন
আবারো নদীখাতে
এত চুপ করে থাকো কেন
যদি ঘুম ভেঙে যায় পোকাদের
শয্যায় গাছগাছালি, পাখপাখালি, খড়কুটো
যাবে চলো কিছুদিন, কিছু পথ হেঁটে
আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে
এ সত্যি, তবু ঝিঁঝি ঝুমঝুম সন্ধ্যা এখন
লোভ ছিলো কখনো!
আজ নেই বলো একটুও?
না
কেন এ দিনমান খালি খালি
তোমার, আমার নয়
তোমার কি তবে
ক্যানেল খরগোশের, টুকটুক কুচকুচ তৃণযাপন
চলো ঝগড়া করি, আগের মতন
অভিমান শুকিয়ে গেছে
রাগ করি যখন তখন
মেঘ হয়ে ঝরে গেছে শুকনো ফলে
খানিকটা রাঁধো এলেবেলে
খিদে খিদে পায় না এখন
চা খাওয়াবে
পাতা ফুরিয়েছে কবে কোন বিকেলে
কেন তবে এই অশান্ত শিশিরপাত
তুমি চেয়েছিলে যাক তবে চুকেবুকে
রিনরিনে সুর হারায় হারায়
আমি বেসুরো এখন ও তখন
তবে থাক
থাক
আসি
যাও
অবেলায় কেন তবে এ ফুলসাজ
সাজাবো যতনে আমাকে গহীনে
যদি ডাকো একটিবার, দিই সুগন্ধী, দিই ডুব
ফিরে যাও, গোধূলির ধুলোতে ছেয়েছে আকাশ
পথ চিনি না
আসমানি রঙ জ্বেলেছো বুকে
নিভে গেছে সেই রঙ, কবে ও কখন
বলছি এসো, এখন অন্ধকার, তুমি অবৈধ যত্রতত্র
তবে যাই
হ্যাঁ
কেন
" বকের পাখায় উড়ছে আমার পালক সময়,
একা প্রসাধনে কাটবো সাঁতার
নার্সিসাস ফুটেছে বাগানে, মুগ্ধতা ছুঁয়েছি আমি মাঝরাতে ..."
সংলাপ : ৪
জিহাদী দেখো ঐ তালক্ষীরা চাঁদ
ইচ্ছে করে
কি?
আকাশে রক্ত লিখি
লিখছোই তো!
ইচ্ছে করে তোমার ঠোঁটটি চেপে ধরি গ্রেণেডে
তারপর?
বাজুক মৃত্যু দেহে ও সবখানে
তোমার হৃদয় কাঁপে না হত্যা করতে?
না তো!
তোমার চোখে কি রেখেছো
জেহাদ, ধর্ম, ঈশ্বর আর যুদ্ধ
ঈশ্বর ও যুদ্ধ, কি বলো জেহাদী?
হ্যাঁ।
ঈশ্বরের যুদ্ধ অথবা যুদ্ধের ঈশ্বর ..কত ভুল জান তুমি!
আমি জানি শুধু বিস্ফোরণ
মানুষ মেরে কি পাও?
টাকা
আর ধর্ম?
ধর্ম কি?
তুমি জানো না! তবে কে তোমার ঈশ্বর?
ঈশ্বর যিনি দেন অস্ত্র, ঝড়ো মন, উদভ্রান্ত আনন্দ
তারপর!
ঝাঁপিয়ে পরি, মারি কাটি সব ঈশ্বরের নামে
তবে আমার কাছে আসো কেন?
ঘুমুতে
আমার আঁচলে অস্ত্র, ঘুম নেই
আহ্, এতো কথা কেন, বাইরে বরফপাত
আমার আলিঙ্গনে দহনের সূর্য
তবে আলিঙ্গন দিও না, শয্যা দাও
শয্যায় অবিশ্বাসের ফুলফল
আহ্ বলো বলো কোথায় যাবো আমি তবে ...মেঘনাবতী?
কেন গুহাকন্দরে...মরুভূমে, অস্ত্রশিবিরে
পথ কুয়াশা ঢাকা, ঘন অন্ধকার
জিহাদী, ঐ যে মেঘের জাহাজ, মাাটির স্বদেশ
খুঁজে পাচ্ছি না মেঘনাবতী ... ফেলে আসা পায়ের দাগ
তবে এসো, দেখো মাটিতে ফুটেছে ইশ্বরের চোখ
আসছি মেঘনা ... আসছি ...কোথায় তোমার হাত ...
এই যে এখানে, যেখানে ঘুমায়েছে ধানের ক্ষেত, জেগেছে আকাশে একটি তালক্ষীরা চাঁদ ...
সংলাপ :৫
দুজন বসন্তিকা
ফুল ফুটেছে
ফুটুক, পুড়ুক, তাতে তোর কি
তাতে বসন্ত আসে, অবারিত ঝড়, ঝরো ঝরো, ব্যাকুল
শুষ্ক কাষ্ঠেও লাল ফুল ! দেখলি?
দেখলাম ...যেন খুন করে গেছে মেঘ
তুই শুধু ফুল কেন দেখিস বলতো? জানিস না আমরা দুবোন বেঁচে নেই।
খুবলে খাওয়ার পর ...ছত্রাক জমছে যোনিতে ।
মন বলে ভয় নেই, অশোকে, শিমুলে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে,
সাদা ছত্রাকে ভরা বুক ফেটে আবার রক্ত বেরুচ্ছে,
ছড়িয়ে যাচ্ছে সংসদভবন থেকে রাজপথে,
রাজপথ থেকে গলিপথে,
আমাদের ঘরের চৌকাঠে, আমাদের বিছানায়, আমাদের অনিদ্রায়।
সব অপমান বাহু বাড়িয়ে মেখে নিচ্ছে আরো বহু মেয়ের দল
নবপত্রিকার ক্রমাগত শিকড় পৃথিবীর সব বাকহীন দেশে
প্রেমের কাছে যেতে পারব না যে !
কেন রাশ? কেন স্তব্ধতার এই অন্ধ সাজ?
আমি যে দেখেছি আজ
একদিন এসেছে যেন সাগরের ছেলে,
মৃত্যুর পরের এক ধনুক, অমৃতের তির, শান্ত, স্হির।
আয় বাঁচি, চল বাঁচি, অশ্রু থেকে জন্ম হয়েছে তার।
একথা কি সত্য ! আজ আমাদের জ্বেলে দিয়েছে বিষুবরেখার দৃঢ় রোদ?
মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, ধরিত্রী দ্বিধা হয়ো না কোনদিন
আমাদের দীর্ঘ শামিয়ানা, উৎসবের খাদ্যসম্ভার, বলিষ্ঠ পা ...
সংলাপ : ৬
সমিধ বয়ে চলেছি দুজনে
দূর দেশে যাচ্ছি, সাজা হলো তোমার?
সাজছি, ধোঁয়ায় আয়না ঢেকে গেছে
আমি জ্বলছি , ভীষণ ব্রাইট, দেখো! কোথায় ধোঁয়া?
এই তো মুহূর্তের সমাপতনে
এবার চলো মানুষ জাগছে
আমি ছায়ায় স্বপ্নে, শরীরে ও সঙ্গীতে আছি
আমি রাস্তার কোলাহলে মিশে গেছি
জনপদে তাকিও না
কেন, ওখানে আছে হাঁস আর মাছের যুগলবন্দী,
বড়ো প্রিয় আমার
ওরা তোমাকে বসিয়ে দেবে জামরুল গাছের অবসরে
বসি তাহলে একটু
না না না, কোথাও না
তোমার বসত করার ইচ্ছে করে না
আগুনের আবার বসত কি, জ্বালিয়ে ছাই করে যাবো
আমি তবে ফিরলাম, আমাকে ডাকছে গাছের কোটর
যাও, অপেক্ষা করো না আর কোনো দিনও
করি না তো, স্নানঘরে ছেয়ে যাবো, সুগন্ধি চুলে ঘন সকাল
ফেরা হলো না একসঙ্গে তবে
এলামই তো না সঙ্গে
একটি অর্ধ প্রহর, ফুলে কীটে দংশনে, রঙমশালে
দেহ ছুঁইনি, প্রয়োজন নেই, আগুন ছোঁয় না,সমিধের পাশে ধ্যান করে
এইসব কথা থাক তবে, কোথাও অজস্র মানুষ একসাথে, আমি তাদের কাছে যাবো
সংলাপ : ৭
আর কিছু নয়, দু মুঠো বিরহে
কত দূর থেকে আমাকে ফোকাস করো তুমি আমাকে?
যত দূরে গেলে বিরহ প্রগাঢ় হয়, লোধ্রচূর্ণে ঢেকে থাকে এই পথ।
সংলাপ : আট
হে আমার দেশ
জানো কি,
ক্ষত্রিয় কখনো কখনো বণিক হয়, ভুলে যায় রক্ত আর পরাজয়
হ্যাঁ জানি।
আমি একটি তাম্রশাসন রেখে গেলাম, বণিকের পররাষ্ট্রনীতি,
সব যুদ্ধে সে..ই রাজা হয়।
সংলাপ : নয়
যে শ্বাসাঘাত দীর্ঘতম
মৎসকন্যা...মাটির মেয়েরা জানে না দুর্বার সমুদ্র, নিরন্তর সাঁতার, কি দুর্ভাগ্য তাদের
মাটির মেয়ে.. হ্যাঁ,
দূর থেকে দেখি মৎসকন্যাদের, যোনিহীন তারা, কত ক্ষত বইতে হয়নি তাদের ক্রমাগত প্রেমে অপ্রেমে
সংলাপ :১০
মোহনবসত ও পীতবাস
স্তব্ধতা এসে যাওয়ার পর যা থাকে, তেমন কিছু বলার ছিল
এখন বিহানবেলা, শুদ্ধ বাংলায় সন্ধ্যাউৎসব, এসময় কথারা ফিরে যায়, পাখা কিনে নেয় বৈশাখের বাজার থেকে
খরা চিনে নিয়েছো, অথচ জলস্তম্ভ রাখোনি ঘরে !
ভূমিধ্বস তো রেখেছি, প্রতিবর্ত বৃষ্টিপথে ফেরাবো পাহাড়ে
সন্তানেরা ঘুমিয়ে গেলে, বঁধুয়া, হৃদয় খুলে মোহনবসত সাঁজাও রে,
যেভাবে চিনেছো শ্রাবণমরুকাল একইসঙ্গে, তেমনি ইচ্ছেঘর তার একা চোখের তীরে
এ কথা, এ বাচালতার বুঝি শেষ নেই, তুমি একদিন নাহয় হলে তপোহারা... মদিরা, আমার অট্টালিকা
তপ নয়,
সৃজনের কাছে সমূহ ঋণ, অর্জিতকে সরিয়ে নতজানু ধুলো মাখা পীতবাস।
সংলাপ : ১১
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং যোদ্ধানী
ধর্মনগর শহর থেকে পাশের গ্রামে যাবো।
একটি জিপে বসলাম।
আমার সঙ্গে সহাস্যবদনা রুখুসুখু এক মহিলা।
সস্তার হ্যান্ডলুমের শাড়ি, চড়া বেগুনি রঙ।
লাল রঙের ব্লাউজ।
কাঁধে চকচকে নীল ভ্যানিটিব্যাগ।
দুজনে গায়ে গা লাগিয়ে বসা হলো।
কই যাইবেন? কুটুম বাড়ি?
হ।
....মনে মনে "আহা কুটুম বাড়ি, কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি , নাইল্যাশাকের বড়া, আমড়া বোলের টক, নিখাদ গল্প অবসর কোথায়, কে যেন রেখেছে আমার জন্য এক চৈত্রের মধ্যাহ্নে? "
কি করেন আপনি।
"পার্টি করি "।
টগবগ করে উঠলাম।
মাথায় দুম করে বাজলো, পঞ্চায়েতে ফিফটি পার্সেন্ট রিজার্ভেশন,
সাবাস !
তাকিয়ে রইলাম। কোথায় রুখুসুখু চেহারা!
বসন্তের রক্তাক্ত পলাশ, যেন জ্বলছে, সঙ্গে নেয়নি নিভে যাওয়ার ঠিকানা।
মেয়ের বাপ কইছিলো, মাধ্যমিক পাশ করছে, দোকানদার পাত্র পাইছি, বিয়া দিমু ওখন।
আমি রাজী হইছি না, মেয়েরে পলিটেকনিকে ভর্তি করাইছি। পড়তাছে,
গ্রামে তিনডা চোলাই মদের দোকান আছিলো, আমরা সবাই মিইল্যা দিছি উঠাইয়া।
ওখন একটাও নাই।
পঞ্চায়েতের মিটিং এ কইছি আমরার গ্রামের একটা মাইয়্যার গায়ে যদি শ্বশুরবাড়িতে হাত ওঠে, খবর আছে !
দুইহাজার এক, ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল মহিলা স্বশক্তিকরণ বর্ষ...
হচ্ছে তাহলে, ধীরে ধীরে একটি তেজ জন্ম নিচ্ছে মেঠো পথে, নিকোনো উঠোনে।
এই জ্বলজ্বলে মহিলাটির নাম জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো না।
নাম দিলাম আমি, "যোদ্ধানী "
যোদ্ধানী থামছে না। বলে যাচ্ছে।
কমলার কোয়ার মতো পুরু ঠোঁট চেপে চেপে বলছে,
গোলাপী বেগম, পাঁচ বছর আগে তিন তালাক দিয়া বাইর কইরা দিছিলো মরদ।
গোলাপীরে বুঝায়া সংখ্যালঘু সিটে দাঁড় করাইছি। পঞ্চায়েতের মেম্বার হইছে ।
গলা ফাটাইয়া, মাথা উঁচা কইরা বক্তৃতা দেয়।
জিপের খোলা জানলা দিয়ে তখন ধূ ধূ লাল মাটির বাতাস ...Be Bold for Change
আজ তিন তালাক, উড়ে গেছে ...
দীর্ঘতম কালবৈশাখী হয়েছে সংসদের ইতিহাসে।
তবুও...
লোকসভায় ফিফটি পার্সেন্ট সংরক্ষণ , এখনও আদায় করা যাচ্ছে না, বিরোধ চলছে
অর্ধেক আকাশ আর কত লাগে? হচ্ছে তো সব! আহ্!
গন্তব্য এসে যাচ্ছে।
যোদ্ধানীর দিকে তাকালাম, সিঁথিতে দগদগে সিঁদুর, শাঁখা, পলা, লোহা সব আছে।
এ মেয়ে MeToo জানে না, আমি নিশ্চিত।
আমি জানি সে ভালো আছে,
সহবাস দুজনের সম্মতিতে হলো কি না, এ নিয়ে কোনদিন সে মাথা ঘামায়নি।
তার পরনের ক্যাটক্যাটে বেগুনি রঙের শাড়ি
ক্রমাগত সম্ভ্রান্ত, নত করে দিলো আমাকে
তাকিয়ে মনে হলো,
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন অনেকেই বেগুনি পরেন,
হয়তো এসব কিছু না জেনেই,
কি অসহনীয় সুন্দর হয়ে ফুটছে যোদ্ধানী,
দুহাত দিয়ে সে ছাপ দিচ্ছে ধুলোতে, আকাশে
আমরা দেখছি বেগুনি, লাল, সাদা আর গোলাপীতে চীৎকার করছে বর্ণমালা,
PressforProgress, ...PressforProgress...PressforProgress.
##############################
বিঃ দ্রঃ...BeBoldForChange, slogan of 2017, International womens day
PressforProgress, slogan of 2018, international womens day
সংলাপ : ১২
পাহাড়ের কাছাকাছি গিয়ে
তোমার বুঝি চার পাহাড় অভিমান হয়েছে !
আমি খবর দিয়েছি ধুনকরকে, খবর দিয়েছি তাঁতীকে
খবর পাঠালাম রঙীন ধুলোর কারিগরকে ...
কি হবে তাতে?
নিদাগ হবে, ধূসরিত হবে, তুলোর ফেঁসো জড়াবে নাকে মুখে,
মোটা কাপড় পরে কুড়িয়ে আনবে লম্বা মিছিল
তাতে কি অভিমান কমবে?
তাতে অভিমান লজ্জা পাবে, ডোরাকাটা দাগ, গর্জন শুনে মনে হবে সুখী মাওবাদী।
আমি তখন গুহা কিনতে বেরোব। তোমার হাতে গর্জন গাছের ডাল, মেঘ আটকে রেখেছো। দাঁড়িয়ে আছো পেছন ফিরে।
গুমগুম পাহাড় ভাঙছে, দিনদুপুরে... শুনতে পাচ্ছো? পাচ্ছো কি?
এই শোনো ...এসেছো তাহলে, কিছু ঝাউগাছ আর দু তিন টুকরো বেলাভূমিও এনো কিন্তু, গুহার বাইরে সাজিয়ে রাখব
সংলাপ : ১৩
আফটার পুজো
"গোলাপী পর্দা, বাইরে শীতের রোদ।
সংলাপ ভাসছে সাদা মেঘের মতো। "
বিরাশি বছর : এবার দুর্গা পুজো আশ্বিনের কত তারিখ?
সেপ্টেম্বরের শেষে না অক্টোবরের প্রথমে?
নব্বই বছর : এ বৎসর দুর্গা পুজো শেষ। লক্ষ্মীপুজোও । কালীপুজোও। ভাইফোঁটাও। আজ তো কার্তিকের তেইশ তারিখ। কাশফুলও বুড়ি হয়ে গেছে। নদীর বুকে শুকনা মন।
বিরাশি বছর : এইবার গেইটটা আর বাইরের দেয়ালে একটু রঙ লাগিও । ষষ্ঠীর আগে কাজ শেষ হতে হবে , যতীন মিস্ত্রি যেন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে।
নব্বই বছর : শুয়ে শুয়ে কত বলে, ওর মতো বধির হতাম যদি, শুধু দুইটা চোখ। চোখের বাইরে থেমে থাকা বকুল গাছটা।
বিরাশি বছর : সপ্তমী দিন একটু সামনের প্যান্ডেলে নিও আমারে। গতবারও নিছো না।
গতবছর তো একটু ঢাকের আওয়াজও পাইলাম না।
নব্বই বছর : খুব জোর ঢাক বাজছে এবছর। টি ভি তে দেখছি পাড়ার পূজা। মেয়েরা কি ঢাক বাজাইল। আহা।
তুমিও তো দেখছ, অল্প অল্প ঝাপসা দেখো ।
কিছুই বোধহয় দেখে না আর বুড়ি ।
ভাবে শুধু ভাবে !
বিরাশি বছর : নির্মলা মিশ্র বেঁচে আছে এখনো ? তার গান একটু মোবাইলে শুনিও তো। মনে হয় চাঁদ, ফুল, তারা আবার নতুন করে দেখি। জীবনের সাধ আর মেটে না। থাল ভর্তি করে শিউলি কুড়াইতে মন চায়।
নব্বই বছর : নির্মলা শুনছি বড়ো কষ্টে আছে। খবরে দেখালো।কেউ নাই তার।
বিরাশি বছর : আজকে রাণী কি রাঁধব। ঝাল মাছের ঝোল করা লাগবো। রুচি ফিরবো তাইলে। খুব খাইতে ইচ্ছা হয়, রান্না করতেও।
নব্বই বছর : হা হা হা। বুড়ি কি খায়। চামচ দিয়া ওটস। এখনও স্বপ্নে মাছের রক্ত, মাছের জান। নাহ্ ! মেয়েলোক বড় রক্ত ভালোবাসে। লাল নিয়াই তাদের কারবার।
বাইরে সন্ধ্যাকাল মরে যাচ্ছে। রাতের নৌকা অাঁধার বায় । কার্তিকের ডাক। কীর্তনাঙ্গ। হরেকৃষ্ণ বলে না মন। বলে রাধা বলো। জীবন বলো। সুন্দরকে ডাকো। মোহিনীরূপ, শিশুর লালাভেজা আঙুলের মতো কচি শিশির।
সংলাপ : ১৪
মিশ্রকলাবৃত্তে
প্রৌঢ় ...বিকেলের রাস্তায় অনেক দূর থেকে যখন দেখি তুমি শাল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছো গেটে, তখন বুঝতে পারি উত্তাল শীতকাল আসছে
প্রৌঢ়া ...একটি উষ্ণ হাত যখন সকাল বেলা একবার আমার ঠান্ডা হাতকে আবছা ছুঁয়ে যায়, তখন বুঝতে পারি বড়দিন আসছে
একসঙ্গে ...ঐ যে ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতায় ছিল,
" মিশ্রকলাবৃত্ত "
সংলাপ :১৫
মধু কুড়ায়ে আনো
আজ ঘরে ফেরার সময় দেখলাম রাস্তার ধারে ভাত রান্না হচ্ছে, দুজন মানুষ বসে, কি মনে হলো জানো, মনে হলো কাউকে খেতে দেওয়ার নামই বেঁচে থাকা
তোমার কথায় দেখতে পাচ্ছি, আসলে তার হাঁড়িতে ছেঁড়াখোঁড়া একটি আকাশ, টগবগ করে ফুটছে, এমনকি চাঁদ ও অন্যান্য নক্ষত্রও
আমি তখন পেরিয়ে এসেছি অনেক দূর, কল্পনায় দেখলাম লোকদুটো খাচ্ছে, থালায় এসে পড়ল একদলা ফ্যানভাত
আমিও দেখলাম, মেয়েটি যেন ধানক্ষেত আর তুমি মধু সন্ধানী …
বলছো! কেন?
আমাদেরোও যে নীচু বাড়ি, সারি সারি ছায়া ঘর, ভেতরে এলে মনে হয় ...পৃথিবীর প্রথম বাজনদার নীরবে বসেছে সেখানে...
সংলাপ : ১৬
কবিতা ও আমি
কবি হতে চাই
চিৎকার করো, ভেতর থেকে
কবিতার সঙ্গে কি চিৎকার যায়
একদম, কেমন করে যায় জানো না, যেমন খুনের সঙ্গে বীভৎসতা
যাঃ, পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কি সব বলছ যা তা
কবিতা, তার শরীর তো অর্ধেক, বাকি অর্ধেক বিমূর্ত
খুন করবো কি করে, অস্থিমজ্জা কোথায় ঠিকঠাক
আজ বিকেলে তিনটে মেয়ে গোল্লাছুট খেলছিল জানো?
আহা কবিতার কথা হচ্ছিল তো, জঘন্য খুনোখুনি চলছিল
শোনোই না, একটি মেয়ে তার হলদে জামা থেকে বের করলো সেফটিপিন
সেফটিপিনে মরচে ধরেছে, ভোঁতা ধার
সেফটিপিনটি তার মায়ের ব্লাউজে ছিলো বহুদিন
তারপর কোনদিকে যাবে বলো তো তুমি? ওসব পোষাবে না আমার বলছি। যৌনতা ভাল্লাগে না।
বলো কি? রাবিশ ! আমার জানা মতে তুমি নাকি কখনো ছিলে রোমশ ভালুক।
যাকগে, যা বলছিলাম ,
আসলে ব্লাউজটাতে সেফটিপিন আটকে ছিল দু বছর
কতবার ধোওয়া হয়েছে, রোদে পুড়েছে,
অলস ছিল মেয়েটির মা, সেলাই করেনি
কি বলতে চাও বলো?
বলতে চাই, একটি সেফটিপিনের আত্মকথা, লিখোই না
বেশ কবিতা হবে, খুনোখুনি না হোক
সূঁচের মতো অসহ্য !
থাক তবে।
কেনো, দ্বিতীয় মেয়েটিরও তো গুটিকয়েক কথা আছে
তার কথা নয় অবশ্য, তার বন্ধুর কথা
একটু ইন্টারেস্ট পাচ্ছি, বলো দেখি
ধ্যুৎ আর বলবো না। প্রবন্ধ পড়লে কবিতা পায় জানো !
বেশ শক্ত শক্ত কথা থাকে ওতে।
এই যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজবাদ ইত্যাদি, আমি তখন সবকিছু গুবলেট করে একটি পরকীয়ায় কবিতা লিখি।
আবোলতাবোল মেঘ করে, ঝরে যায় সব।
ওই দেখো দূরে দুটো বিড়ি যাচ্ছে।
কি করে বুঝলে?
আগুনের দিকে চোখ পড়ে সহজে ।
নিশিন্দা গাছ দেখেছো? বছরে দু একবার ডাক পড়ে তার।
তেঁতো খেতে। সারাবছর তার বসন্ত হয়।
অথচ তেঁতো গাছের বসন্তের কেউ খবর রাখে না।
আমি যাচ্ছি।
এই কেন? হঠাৎ করে! বেশ তো চলছিল।
জানো না কেন?
কবিতা পেয়েছে এই মুহূর্তে। নিষ্ঠুর হতে হবে। খুব, খুব...।
সংলাপ : ১৭
হে মান্দারবৃক্ষ, গোপনে তুমি
কতদিন হয়ে গেলো কথা হয় না
এভাবে ম্যাসেঞ্জারে গল্প করতে ভাল্লাগে না
কথা হবে মুখোমুখি, সন্ধ্যা নামতে নামতে, গোধূলির লাল রঙে
কিন্তু এখানে তো নির্জনে নীল জল, বেলে হাঁস
দেখা যায় না, মুখের এক্সপ্রেসন বোঝা যায় না, ভুল না ঠিক
মুছে দিয়ে, কেটেকুটে সংশোধিত প্রুফ, তাই বলছিলাম
ও!
এটাও বোঝা গেলো না
কোনদিন কাটাকুটি খেলবো, একদম মুখোমুখি। মিলবে না, খাদের পাশে একটাই রাস্তা তো
সেখানে এখন মেষের পাল, যীশু যাচ্ছেন, সাদা জোব্বা, প্রেম নয়, বাণী
ধূপের বন দেখেছো কখনো ? অনুর্বর পাহাড়ী মাটি।
সেখানেই বসত আমার। স্যাঁতসেঁতে। চোখজ্বালা দিতে পারি খুব বেশি হলে,
বলেছিলে না সন্ধ্যা হয়েছে, হয়তো এমন কোন অনির্বান শ্বাশ্বত গোধূলি, জ্বলন্ত ...নিভন্ত।
সংলাপ : ১৮
চিরদিন মেঘ করে আসে আকাশ
আমি খুব ক্লান্ত
আমিও
প্রকৃতিতে বসন্তের আমন্ত্রণ, বড় কষ্ট হয়
কত দূরে দূরে পা বাঁধা আমাদের
মনে হয়, পৃথিবী এতো কঠিন, তার চাইতেও কঠিন মার্চমাসের দিনগুলো
দিন শেষে অপেক্ষা থাকে আমাদের, এক মুঠো উষ্ণতা
তুমি আগুন জ্বালিয়েছো?
হ্যাঁ, হারাবার ভয় নিয়ে
যদি পলকা সেতু জুড়ে রাখতে চাও তবে যত্ন করো তাকে,
যদিও ঝড়ো দিন, আবহাওয়া সংবাদ বলেছে ভাসিও না নৌকো
নীচুস্বরে ধীরে বলি, "আমিও মেঘমল্লার "...
সংলাপ : উনিশ
যত্নে তুলে রাখি ক্ষতদাগ
বলে দিচ্ছি তারপর কি হবে...
সত্যিই?
তুমি গম্ভীর হবে, নীরবতা ধেয়ে আসবে ঢেউ এর মতো
আমিও মত্ত অশ্বিনী, উগড়ে দিচ্ছি ধুলো, লেখাজোকা, পাপ পূণ্য
আর আমি চলে যাবো, দূর থেকে দূরে, যেন দেখিনি কখনো
সেই আতংকে মনে হয় এ জমিন এখনি প্লাবনে ভেসে যাক
আর কি কিছু বাকি আছে জীবনে না পাওয়ার, প্রাপ্তিতে ভরে গেছি আমি
একটু দাঁড়াও, বসন্ত পঞ্চমীই সেই তিথি, সেদিন মাটি ভিজে ওঠে ঋতুবদলের নোনা জলে, সেদিন থেকেই শিকড় ওপরানোর নেশা তোমার
তাহলে যৌথ মরণ চেয়ে নিচ্ছি, এই চমৎকার সন্ধ্যায় কি বলো?
সংলাপ : কুড়ি
পথগুলো স্বর্গের দিকে ছিল
আমার হৃদয়ে কোন সুতো নেই, তাই বাঁধবারও গরজ নেই
আমারো নেই, নেই যাপনের ইচ্ছা
তোমার আছে বন্ধু, এক আকাশ সংগোপন
এ তোমার আকাশচারীতা, ভুল মেঘে স্নান
কে বলল, এ মিথ্যে ফুলকথা
তোমার চোখ....মনের মাঝে মেলে ধরা ছক না মেলা নক্সীকাঁথা
যদি বলি তুমিও গুছিয়েছো সেই কাঁথা
আমি খুঁজে না পাওয়া সেলাইগুলো মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম শুধু
মিথ্যে বলছো, তোমারো ছিলো ঝুলন জ্যোৎস্না
যদি না মানো, যদি ধরে নাও আমারো ছিলো মৌতাত,
কিন্ত নেশাসন্ধ্যা ঢালিনি তাতে
অগোচরে বাতাস এসেছে শুধু ভীড় করে।
আমি তো দিয়ে দিতে চাই
আমার তো নেওয়ার কিছু নেই
হাত বাড়ালে কেন
বাড়াইনি তো, গাছ কান্ড মেলেছিলো শুধু
পাতায় রঙ, পাখির বাসা, কিচিরমিচির, এলোথেলো
আমি তবে কেন অঝোর অঝোর
তুমি যে সুধা, তার আজো আজো
বিশ্বাস করি না একবিন্দুও আর
করো না!
কেনো তবে নক্ষত্রের জিজ্ঞাসা ঢালো আমার চোখে?
প্রমাণ চাই!
কিসের?
সম্পর্ক যাপনের, বসন্ত সময়ের
বালি কথার ঝিনুক বিনিময়ের।
কি লাভ, কথার দেরাজ খুলবে,
কথা নেই বলছো
নীল ব্যাথা, গোলাপী অভিযোগ
তোমার কি ক্ষত নেই
আছে, নির্মল
আমারো, কিন্তু হুল ফোটানো
কখনো যে কিছুই চায়নি নিতে,
তাকে বারংবার কেন গাঁথো হুলে?
জানিনা
কাঁদো?
না
তুমি নিজেকে চেনো না,
তোমার হৃদয়ে ছিল মুক্তোবসত ঝিনুকে ঢাকা।
না না!
একটু তরল যে সব মাটিই ।
ইস্ আমার হীরেমন পাখি সে নয়
তবে কেন মনে নিভে যাওয়া আগুনভোর ধিকি ধিকি
"এ আমার নদী ছাপানো পলি অভিমান।" আর তোমার?
"আমার তৃণ অলঙ্কার, গাভীর মতো মেঘে
অবিন্যস্ত স্যাকরার দল "
ছেঁড়া গহনায় উদ্বাস্তু ঋতুবদল
আর কি চাই, ব্যস এটুকুই ...
সংলাপ : একুশ
উষ্ণতা চাইছি না
তাহলে চলে এসো চন্দনের বনে
যে অক্ষরগুলো সাদা কালো সেসবই তবে চন্দনের বীজ
কেন চন্দন দস্যু চাই না তোমার? নির্বিচারে?
দস্যুদের দিয়েছি বিদেয় ধূপ ধুনো দিয়ে
এখন সুগন্ধি সমিধ চাই, পোড়াবে আমাকে,
এখন তুমি আমাকে মিষ্টি করে ডেকো, "যজ্ঞাহুতি "
সংলাপ : বাইশ
ধাতব শব্দ হচ্ছে খুব
আমাদের সঙ্গীর নাম দোষারোপ
একটু ভুল হলো, বলো অভিমান
আমাদের সঙ্গীর নাম ভুল বোঝাবুঝি
একটু ভুল হলো, বলো ইগো, ইগো প্রবলেম
আমাদের সঙ্গীর নাম বারান্দা আর অপেক্ষা এবং অপেক্ষা
ভুল হলো, এসব আগে ছিল কোনদিন বহু আগে
এখন রূপোর খিল দিয়েছি ঘরে, মুখোমুখি হবো না কোনদিন হয়তো
তাই বোধহয় কল্পনায় দেখে নিই, আস্তে মুখ নামিয়ে তুমি দেখে যাচ্ছ সমস্ত সন্ধ্যাসারস, রাজহংসী ছায়াগ্রীবা
আমিও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তবে এতো কঠিন করে নয়,
সন্ধ্যার আলো জ্বলে উঠল,
একটু হাসলে, অল্প লজ্জা পেয়ে তাকিয়ে রইলে দূরে, বহুদূরে ..
সংলাপ : তেইশ
অভিমানের পুরাতন উষ্ণীষ
দূরে চলে যাচ্ছো কেবল!
ভালোবাসা পূর্ণ করে পেলে আমি দূরে চলে যাই, আধখানা দিতে যদি, অসম্পূর্ণ না হয়,
স্বার্থপর তুমি? নির্ভরতা আর বাকি শর্তাবলী রেখে চলে যাচ্ছো? পারো না? পারো না কিন্ত তুমি!
ভেবে দেখো একটি শর্ত ছিল, ক্লান্তি, ক্লান্তি আসার আগে।
কোথায় পড়লে? মানে কি করে জানো?
পড়িনি, কিন্তু জানি।
দেখতে পেলাম আমার প্রশ্নে তোমার চোখে মৃত উৎসাহ, তখন থেকেই, হয়তো সেই খণ্ডিত মুহূর্তে।
সংলাপ : চব্বিশ
উত্তরের অপেক্ষা করিনি
প্রতিবার অভিমানের উত্তরে কি বলি বলো?
স্পষ্ট উত্তর দেবে, আগে কোনও সঙ্গী ছিল?
এ এক আজব প্রশ্ন, সঙ্গী আছে তো, এই যে নানা অভিমান, আমার রং তুলি, উন্মত্ততা, আমি তো এরকমই,
নুন তেলের সংসার নই তো তোমার?
মনে হয় গিরিবর্ত্মের খোঁজে ছিলাম, প্রবেশ করেছি সমস্ত চেতনা নিয়ে সমুদ্রের খোঁজে?
সংলাপ : পঁচিশ
অন্তরে সমারোহ
তুমি আর কোথায় সমারোহে এলে
অন্তরে কত সমারোহ কি করে দেখাই?
হরিণীর মতো ভয় দুচোখে, এখান থেকে দেখতে পাই মহাশয়া
তুমি আমার মথুরা, তুমি আমার হরতালের দিন খালি রাস্তা
তাহলে বলো লোকসান?
আমার একান্ত বণিক, সপ্তডিঙে ভাসিয়ে দিয়ে আজ অরণ্যপথিক, এসেছে আমার কাছে যে পথে আনমনে, চরাচরহীন সূর্য আবাহনে
সংলাপ : ছাব্বিশ
উড়ন্ত পাখির ছায়া থেকে
আমি তোমার চোখে দেখেছি উড়ন্ত পাখির ছায়া
পরক্ষণেই মনে হয় যদি শুধু মায়া, ভেঙ্গে যায় ঘোর
আর যদি মনে হয় একঘেয়ে লোডশেডিং এর সন্ধ্যা আর ক্লান্ত স্ত্রী
তার কপালে কনিষ্ঠা ছুঁইয়ে ভুলিয়ে দেব সব স্মৃতি, যেখানে এই যক্ষ নেই
আমি যদি ডুবে যাই বিস্তৃত গভীরে, আর তখন যদি সেখানে তুমি পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরো
ঘুমের মধ্যে ঝাউবন, তুমি আর আমি, শন্ শন্ হাওয়া, তীব্র জ্বরে তোমাকে জড়িয়ে বলব, হে যক্ষ আদিমতা দাও, দাও আমাকে অনন্ত বিরহ।
আর যদি সমুদ্র শান্ত থাকে, সে শুধু বলে তুমি আসলে নীল শঙ্খ ,
তোমার করতলেই রাখা আছে তার মুক্তো জন্ম...,
সংলাপ : সাতাশ
নিস্পৃহতার উত্তর দাও
তুমি আমাকে চাও না
চাই
সে অন্য কেউ
এ সংশয় পৃথিবীতে পুরনো হয়ে গেছে
আর্তি নেই, নিস্পৃহ
অংক শেষে পরিনাম খুঁজতে চাইনি, হয়তো তাই, হয়তো অংক করা ছেড়েছি আরো বহু আগে
খুব কাছাকাছি, অনেকক্ষণ যদি থাকতাম কোনদিন
এতো কাছে, একান্ত নিঃশ্বাসের মতো, আলোর মতো
আকাশ ছুঁয়ে আমরা সাগরের জল হয়েছি
বোকা কবিতা লিখে ন্যায় অন্যায়ের সীমানা ছাড়খার করলাম
পৃথিবীর বুক থেকে সময় কেড়ে নিয়ে উন্মত্ত হলাম
এইসব ভালোবাসার নাম যারা পাপতাপ, ঘৃণা, নিন্দে বলে
তাদেরকেও বলি না কিছু,
নিজের মধ্যে খাদ খুঁজতে গিয়ে
আমার কাছে সব কিছুই বেদী, অর্ঘ্য, উৎসর্গ হয়ে গেছে
মনে হয় সব প্রাসঙ্গিকতা থেকে সরে আসি
খ্যাতি নয়? প্রশংসা নয়?
না। এখন আমি বলেছি কবিতা আমাকে নাও, পবিত্র শূন্যতার মতো,
তাকে আগুনের বর্ণমালা দিও,
যার কাছে চাই এসব মহার্ঘ, তাকে খুঁড়ে কষ্ট বের করতে চাই না আমি।
সংলাপ : আঠাশ
তব দ্বারপ্রান্তে
পৃথিবী কি সুখ দিয়েছে
ধারাভাষ্য দিয়েছে অসময়ের বৃষ্টির, নষ্ট হয়েছে ফসল, আকুল কেঁদেছি আমি সুখে
চলে যাও, যেতে পারো এখুনি
ডিজিটাল ডিলিট শিখেছি ভালো
বাস্পের মতো উবে যায় যা কিছু আদিম, সরল
এসব শুধু বাজে লোক করে, মন্দ ছেলে অথবা খারাপ মেয়ে
যদি ঈশ্বর তাকে দুভাগ করে দেয়
একপাশে অরণ্য তার, অন্যপাশে গার্হস্থ্য
মায়াময় হতে হতে চারপাশ থেকে কুড়িয়ে আনছি বেঁচে থাকা
কখন হয়েছে এসব, এই গ্রহে, জানে না তারা
শুধু জানে তাদের দোষ নেই, কোন খাদ নেই
তারা মায়া মনে করে, ছায়া নিয়ে জড়িয়ে ধরে,
বেদান্ত মোটামুটি পড়েছে কেউ, কেউ,
এই আত্মদহন এখন তাদের একমাত্র সুখ
এটা কোন কথোপকথন নয়।
নিবিড় স্তব্ধতার রূপোলী তবক, ঠিকরে যাচ্ছে তাতে বৈশাখী তাপ...
সংলাপ : উনত্রিশ
যে তৃষা রয়ে গেছে
তোমার কত বন্ধু
বন্ধু দেখতে কেমন হয়, তার চোখের মণিতে কি ঘন সবুজ বিশ্বাস
আমি কেউ না
আরবসাগরে শুনেছি বেঁধেছে নিম্নচাপ
এড়াচ্ছো?
না তো, দোতারা বানানো শিখতে যেতে হবে বাউলের কাছে, সেই সরলতা চাইছি
সংলাপ : তিরিশ
' সূর্যাস্ত ' আমার প্রণাম ফিরিয়ে দিও
আমাকে বলছি …শেষ কবে কেঁদেছো?
মনে নেই।
কেন?
কবিতার হাতে তুলে দিয়েছি যাবতীয় অশ্রুশ্লাঘা, আনন্দস্বর
তোমার কি কোন সুখ নেই?
আছে তো, অপরূপ সুখ সে, জ্বলতে দিয়েছি তাকে নিজের সঙ্গে, তাই এতো অস্থিরতা, এতো অসমাপ্ত আমি।
শেষ পাতায়
খুব ঘটা করে লিখবো আজ যত উন্মুক্ত শ্রাবণের প্লাবণ। সন্ধ্যা থেকে তাই ছিল অনুভব, তাই ছিল দুই তিন সেকেন্ডের ক্ষুরধার পরিকল্পনা। যে সংলাপ কিছুদিন আগের ছিল, তার সঙ্গে আমার এখন এক সমুদ্র পার্থক্য। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাওয়া অস্তিত্ব কবিতাকে দিতে হয়, না হলে কবিতার ভারী বয়ে গেছে আমার কাছে আসতে। কবিতার কি দরকার আমাকে? আমিই বার বার তাকে আশ্রয় মনে করে ছুটে ছুটে আসি। অকপট হতে গিয়ে কেঁদে ফেলি। সমস্ত "অসৎ " নীল রক্তের মতো আমার গলা দিয়ে নেমে যায়।
এক রুপোলী চাঁদনী রাত আমার স্বপ্ন ছিল,
দুঃখ কষ্ট আনন্দে ভরা এই পৃথিবীর শরীরে রুপোর থালা, দানা দানা অন্ন, কত সহজে আকাশ নেমে এসেছে, অথচ আমরা তাকে দুর্লভ করে তুললাম, ভাবলাম এখন সেই সময় নয়। আমরা অপেক্ষা জানি না, চাঁদ দেখার উৎসব জানি না, ছাদ, বারান্দা কিংবা বেলাভূমি জানি না।
অথচ ক্রন্দনপ্রবণ, বিষাদমুখর কাব্য জানি, জানি দীনতার মতো ছড়িয়ে পড়া আশ্লেষ।
এই সময়ে আমি আহত, কোন অন্ধকার আমাকে দেখতে পারছে না, এ বার লিখছি ব্যর্থ অমৃতফলগুচ্ছ, পর্বে পর্বে সংগ্রামের কথা, ফ্ল্যাগ অথবা মিছিলের বর্ণনা, সমস্ত জেহাদ আমার নিজের বিরুদ্ধে । কিন্তু কবিতাকে মনে হচ্ছে বানানো। তার চাইতে প্রতিদিনের পরিশ্রম, হাট বাজার স্কুল অনেক বেশি বাঙ্ময়, এইসব মিথ্যে মিথ্যে যৌনতাপ্রবণ লাইনগুলোর কাছে ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে না,
কবিতা আমার নিরাশ্রয় ঠোঁট, অকাল এক পশলা অ্যাসিড বৃষ্টি তার উর্বরতা নষ্ট করে দিয়েছে গত শীত পূর্ণিমায়, ভূমিগর্ভ থেকে উঠে আসো কোন নতুন কৃষক, তোমার হাতে থাক লাঙল, এখান থেকেই আহার শুরু, এখানেই হয়তো আছে সেই শাক্যবস্ত্র পরিহিতা প্রৌঢ়া সুন্দরী, শুনেছি তার কাছে আছে রত্নখচিত বাক্স, তাতে সংসারের হাড়িকুড়ি, কাঠকয়লা, কাগজ কলম, ঘুমন্ত শিশু। বাক্স খুললেই আমাকে আবার প্রথম কিশোরী করে দেবে, লাউ ডগা সাপের মতো কোন এক মসৃণ সকালে আমি হিলহিলিয়ে উঠব, খুনীর ছুরির মতো এক চতুর্থাংশ সূর্য তখন আকাশে, স্বেদ জমছে কবিতার গায়ে, একদম নিখাদ দুপুরের আয়োজন।
একটি কথোপকথন, অথচ ওপাশে কেউ নেই, তবুও।
"খুব আনন্দ?
হ্যাঁ।
পেছন ফেরো না আর কোনদিন, হয়তো এমনি অভ্যাস !
হ্যাঁ।
আমার চাইতেও বেশী নিষ্ঠুর?
হ্যাঁ।
কি করলে কাঁদা যায়, জানা আছে?
হ্যাঁ।
সকল অপারগতায়, ব্যর্থতায়, ত্রুটিতে, কষ্টেও আমি হাসিখুশি থাকি।
বেশ তো।
না বেশ নয়, এ জোর আমার নয়, আমার বিশ্বাসের।
মাথা নুয়ে থাকতে ভালোবাসি, পরাজয়ের শান্তি মিছিলে হাঁটার মতো এক করে দেয় আমাদের। "
লেখক পরিচিতি
.... চিরশ্রী দেবনাথের, জন্ম 1979 এর 12 ফেব্রুয়ারি উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাসহর নামের একটি ছোট শহরে। বাবা রাধাগোবিন্দ মজুমদার সংস্কৃতের অধ্যাপক ছিলেন এবং মা মায়ারাণী মজুমদার। দুজনেই প্রয়াত। তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্হান অধিকার করেন। ছোটবেলা থেকেই লিখতে ভালবাসেন, ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি। বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। পেয়েছেন ত্রিপুরা সরকারের অদ্বৈত মল্লবর্মণ ছোট গল্প
প্রথম পুরস্কার, স্রোত সাহিত্য প্রকাশনার ছোটগল্প পুরস্কার, ত্রিপুরা সরকার তথ্য আয়োগ দপ্তর কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার। এখন পর্যন্ত সাতটি কবিতার বই এবং একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোর নাম "জলবিকেলে মেঘের ছায়া ", "ঋতুক্ষরণের রোদচশমায় ", "প্রেমে সন্ত্রাসে ", "শুভ দ্বিপ্রহর ", "ঝাউবন ও জ্যামিতি বাক্স " , "উড়িয়ে দিও ", "বিশ্বাসের কাছে নতজানু " এবং কুুুুুড়িটি ছোটগল্প নিয়ে একটি গল্প সংকলন, "মায়ারাণী "।
পঞ্চাশটি অণুগল্প নিয়ে একটি ই বুক প্রকাশিতব্য।
২০১৯ এ, সুমিত্রা কর তরুণ লেখক সম্মান পেয়েছেন।
তার লেখা, ছোটগল্প, "ব্যারনফিল্ড " অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সর্ট ফিল্ম। তৈরি করেছেন কলকাতার রত্নদীপ রায়। যা নাইজেরিয়ার ইন শর্ট চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
এছাড়া "কীর্ণকাল " নামে একটি লিটিল ম্যাগাজিন যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন চারবছর ধরে। তিনি বিশ্বাস করেন কবিতা আত্মার সঙ্গে মিশে গেলে আর ফেরা যায় না।
মুঠোভাষ : 9402143011
ই মেইল : chirasree.debbath@gmail.com
0 মন্তব্য(গুলি):