স্বাধীনতা, চিরশ্রী দেবনাথ

৮:৫২ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

স্বাধীনতা 
          ©চিরশ্রী দেবনাথ

ভারতবর্ষ ভালো আছে
দাক্ষিণাত্যের মালভূমি থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের গিরি শিরা 
লক্ষ তরুণের কাঁধে
সে কেনো ভালো থাকবে না?
একবার শুধু  আঘাত করে দেখো ...
কেমন গর্জন হয় আসমুদ্র !

বিশ্বাস হয় তাই,
ভারত ভালো আছে।

সংহত বিদেশ নীতির হলুদ ধ্বজা কল্পনা করে 
 কর্মীরা বলছে কোথাও তো বিদ্রোহ নেই,
 ভারত মহাসাগরের শেষ বিন্দুটিতে ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে ধবল পায়রার দল।

 সীমান্তে শহিদ হয়েছে আজও কজন, ছররা ছুটেছে রক্তমাংসের,
ধর্ষণ হয় রোজ রোজ হররোজ    
প্রতিবাদে মিছিলে গুঞ্জরিত হয় জনপদ, মোমবাতি জ্বলে ।

জোর করে তবু বলি আমার দেশ ভালো হয়ে যাবে ।

দেশের গায়ে এইসব অসুখ ,ক্ষত একদিন মসৃণ হবে,
তার গায়ে আর একটুও জ্বর থাকবে না।

জ্বরের, ক্ষতের  ঔষধগুলো বানাতে বানাতে দেশ থেকে হারিয়ে  যাবে অবান্তর দাঙ্গা, ময়লা শ্বেতপত্র।

সোনালি সূর্য অরুণাচলের পর্বতশৃঙ্গ থেকে দীর্ঘতম
আলোকরশ্মিটি ফেলবে সারা দেশে একসঙ্গে।

ঠিক তখনি  মাংতে চাংগেঞ্জিয়াং মেরি কম তার 
বলিষ্ঠ পাঞ্জাটি উঁচু করে তুলবে স্বপ্নের মতো
সেখান থেকে ফেটে ফেটে বেড়িয়ে আসবে বল্গাহীন অজস্র অশ্বারোহী

বড়োধানের ক্ষেতের পাশ দিয়ে ছুটছে মেয়েটি, নাম তার হিমা
ঝকঝকে দাঁতে ঠিকরে যাচ্ছে ক্ষুধার তেজ    
দগদগ দগদগ করছে গায়ে ব্রহ্মপুত্রের সোঁদা বাতাস

ছুটতে ছুটতে কালো কালো পা দুটো পৃথিবীর বুক থেকে তুলে নিল জয়।
 
জয় হো ভারত !
এভাবেই জিততে হয় ভারতের মেয়েদের।

প্রদুনোভা ভোল্টের  বিদ্যুৎ, পেশীতে করে যেমন বয়ে নিয়ে গেছে  দীপা
ত্রিপুরা খুব দ্রুত সেই মুহূর্তে ইন্ডিয়া হয়েছিল
তেরঙ্গা উড়িয়ে এলো  আলোর মতো এক ভারতকন্যা।
এভাবেই সাঁইখোম মীরাবাঈ চানু বজ্রপেশীতে আঁকড়ে রাখে দেশটিকে ,
সিন্ধুর চোখে জ্বলে ওঠে, ভারত মহাসাগরের বুকে সদ্য ওঠা সূর্য, 
এমন আরো জয় হোক,
 আর হোক, একটি প্রবল নিম্নচাপ, হাজার মাইল বেগে ঘূর্ণি ঝড়  
সেই ঝড়ে হাজার হাজার কোটি কালো টাকা  ছড়িয়ে পড়ুক  দেশের সর্বাঙ্গে
সেদিন আস্ত একটি ভারত আসন পেতে দুধ ঘি মাছ মিষ্টি খাবে
সাধারণ মানের তরুণটি খুব তাড়াতাড়ি একটি কাজ পেয়ে,
ভাইকে ভালো কলেজে ভর্তি করাবে,
 বোনকে স্কুটি কিনে দেবে।
মেঠো রাস্তায় উড়তে থাকবে তেজি মেয়ের নোনা চুল।

একদিন হঠাৎ করে সেই সকাল হবে,
বন্ধ কারখানাগুলো ভোরের সূর্য ওঠার মতো নিয়ম করে সাইরেন বাজিয়ে শ্রমিকদের কাজে ডেকে নেবে, তক্ষুনি তক্ষুনি 

 মনে হবে,
 কেমন ছুটছে দেশ,
অনশন নেই, ধর্মঘট নেই, কৃষকদের খাতায় কোন ঋণ নেই,

আসন্নপ্রসবা বধূকে তার স্বামীর মা আজকাল বলে
মেয়ে জন্ম দিস্, সিন্ধুর মতো উত্তাল হোক সেই মেয়ের
 ধমনী ও রক্তপ্রবাহ 

আর যা হয়, কিছু সাধারণ মারপিট শেষে
গলা জড়িয়ে গান করছে কয়েকজন আড্ডাবাজ যুবক,

পাকা ধানে ভরা ক্ষেতের পাশে বসে শিশুকে স্তন্য দিচ্ছে 
কৃষকের বউ , টলটলে সুস্বাস্থ্য তার
কোথা থেকে একদল বাউল এলো হঠাৎই

তাকেই ভারতমাতা ভেবে ঘিরে ঘিরে নাচ শুরু করলো দলটি, 

দোতারা বাজছে মধ্যলয়ে, কাছাকাছি নদীর বুকে নেমে আসছে  সন্ধ্যা  ...




0 মন্তব্য(গুলি):