সমাজ বিবর্তনে নারীর অবস্থান

১:৪৭ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

চারটি শব্দ রয়েছে, সমাজ, বিবর্তন, নারী এবং অবস্থান।

মোটামুটি যারা স্কুলে গেছি বা পড়াশোনা করেছি, তারা সবাই দুটো আণবিক প্রক্রিয়ার কথা জানি একটি হচ্ছে, ফিশন এবং অপরটি

হচ্ছে  ফিউশন। দুটো প্রক্রিয়াতেই প্রচুর এনার্জি নির্গত হয়, খুব সহজভাবে একটি পরমাণু যখন তীব্রবেগে ছুটে গিয়ে আরো একটি পরমাণুকে ধাক্কা দেয়, তখন সেটা স্প্লিট হয়, ভেঙে যায়, আরো দুটো পরমাণুর সৃষ্টি করে, তারা আবার অন্য পরমাণুকে ধাক্কা দেয়, এবং এই যে সংঘর্ষ, এরফলেই শক্তি সৃষ্টি হয়, তবে তার চাইতেও বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় যখন দুটো পরমাণু জোটবদ্ধ হয় সেই প্রক্রিয়াটিতে ফিশনের চেয়েও বেশি শক্তি উৎপন্ন হয়। এই দুটো ঘটনাকেই আমার নারীদের সঙ্গে খুব সংশ্লিষ্ট মনে হয়, অনেক নারীর মধ্যে একজন নারী যখন বিচ্ছিন্নভাবে 

অতিরিক্ত কিছু ইতিবাচক মানসিক শক্তি অর্জন করে , তখন সে অন্য একজন নারীর মধ্যে তা সঞ্চারিত করে, সেখান থেকে আবার অন্য আর একজনে এভাবে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে, ঠিক উল্টোভাবে কয়েকজন মেয়ে যদি জোটবদ্ধ হয়ে ভাবে আমরা এটা করবো, তাহলে সেখানে তৈরি হবে শক্তির উৎসমুখ , 

তার মানে সমাজ, যার জন্মলগ্নেই পুরুষ তার শক্তি, সাহস এবং দৈহিক বল দ্বারা নিজেদেরকে প্রধান করে তুলল আর নারীরা

অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

পুরুষ নির্ভরশীল। তার মানে যখন থেকে জোটবদ্ধ জীবনযাপনের মাধ্যমে আদিম মানুষেরা আস্তে আস্তে  সমাজ নামক ধারণার 

জন্ম দিতে শুরু করলেন, তখন থেকেই  নারীরা হলো শ্রেণীবৈষম্যের স্বীকার।

নারী মানে সন্তানের জন্মদাত্রী, বিশেষ করে পুত্র সন্তান, যারা যুদ্ধ করবে, কেড়ে আনবে সম্পদ আর ভোগের জন্য নারী, 

সমাজব্যবস্থার শুরুই হলো নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর সামাজিক জীব হিসেবে মেনে নিয়ে, তখন থেকেই নারীর নিরাপত্তার ভার চলে গেলো পুরুষদের হাতে, তার মানে নারী নিরাপদ নয়, তাকে নিরাপদে রাখতে হবে।  পুরুষরাই হলেন প্রমোটার। নারীকে তারা প্রমোট করবেন তবেই একটি নির্দিষ্ট সামাজিক সীমার মধ্যে থেকে তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নতি হবে।

যেহেতু, সমাজের পরের শব্দটিই বিবর্তন, তাহলে তো বিবর্তন শব্দটিকে মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে, যেখানে আমরা বৈদিক যুগ নামে একটি স্বর্গীয় যুগের ধারণা নিজেদের মধ্যে লালন করি, ততদিনে শিক্ষা, জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটছে, আর্থসামাজিক ও শিক্ষাগত বিবর্তনের পথে এগোচ্ছে সমাজব্যবস্থা, আর এই বিবর্তনের পথে নারীরাও পেয়েছে, শিক্ষালাভের অধিকার, বৈদিক যুগে সমাজে দুপ্রকার নারীর কথা জানা যায় , একদল ব্রহ্মবাদিনী এবং অপর দল সদ্যবধূ। ব্রহ্মবাদিনীরা কিন্তু বিবাহ করতেন না, তারা বেদজ্ঞ ছিলেন, বিবিধ শাস্ত্র বিষয়ে অগাধ জ্ঞান অর্জন করে, ধ্যান, যজ্ঞ, ইত্যাদি নিয়ে সন্ন্যাসীনি জীবন যাপন করতেন, আর সেইসময়ে সদ্য বধূরাও  জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পেতেন, স্বামীগৃহে পুরুষদের সহায়তায়। এই দুই শ্রেণীর নারীই, যথেষ্ট ব্যক্তিত্বময়ী ছিলেন এবং পুরুষদের সঙ্গে সমভাবে তর্কবিতর্ক, আলাপ আলোচনায় অংশ নিতেন। গার্গী, মৈত্রেয়ী, আত্রেয়ী, মমতা, ঘোষা, অপালা, বিশাখা,  

লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা এসব তত্বজ্ঞানী মহিলাদের কথা আমরা শুনেছি, যারা বেদজ্ঞ । আসলে বৈদিক যুগ অনেকটাই কল্পনা প্রসূত সত্য সুন্দর এবং স্বর্গের মতো একটি যুগ, যে যুগের প্রথমার্ধেই আমরা আলোকপ্রাপ্তা মহিলাদের কথা জানি, যারা বিদ্যা অর্জন করেছেনে, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিলেন, নারীরা সয়ম্বরা হতে পারতেন বিধবা নারীরা পরিবারের মধ্যে পুনর্বিবাহ করতে পারতেন ইত্যাদি। কিন্তু এ নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে, রয়েছে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতে নারীর অবস্থান কেন্দ্রিক বিভিন্ন উপাখ্যান, রয়েছে মনুসংহিতা, যেখানকার বহু শ্লোক সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হয়, তারপর মনে হয়, আমরা আসলে কতটুকু এগিয়েছি।

মনুসংহিতায় আছে,

"স্বভাব এষ নারীণাৎ নরাণামিহ দূষণম্।

অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ।

যার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় ইহলোকে পুরুষদের দূষিত করাই নারীজাতির কাজ। এই কারণে পন্ডিতেরা স্ত্রীলোকসম্বন্ধে কখনোই অনবধান হন না। মনুসংহিতা

এবং পুরুষকৃত অন্যান্য ধর্মীয় শাস্ত্রগ্রন্থের মাধ্যমেই

পরবর্তী বৈদিক যুগে আস্তে আস্তে নারীর বিপক্ষে প্রবল অনুশাসনময় এক অবস্থার সৃষ্ট হতে    লাগল, যেখানে, আমরা দেখি,

নারীকে শুধুমাত্র সম্ভোগের বস্তু হিসেবেই যেন চিহ্নিত করা যাচ্ছে, ভগবানের নাম করে দেবদাসী, সেবাদাসীতে পরিনত করা হচ্ছে, তাকে  প্রবল অনিচ্ছার জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে।  আস্তে আস্তে সমাজে শূদ্র ও নারীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল । নারীকে বলা হত ‘ভার্ষা’; অর্থাৎ, ভরণীয়া বা যাকে ভরণ করতে হয় । তার স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না । শিশুকালে সে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বয়সকালে বা বৈধব্য জীবনে পুত্রের অধীন । পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রচলিত থাকলেও নারীদের মধ্যে তা ছিল না । স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি অনুগত থাকতে হত । অথর্ব বেদে অবশ্য নারীদের বহুবিবাহের কথা উল্লেখ আছে । ঋকবৈদিক যুগে বিবাহ নারীর পক্ষে বাধ্যতা মূলক না হলেও পরে তা হয়েছিল । এই সময়ে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল না । বিধবা বিবাহ প্রচলন ছিল তা সে দেওরের সঙ্গেই হোক, বা অন্য কারও সঙ্গে । অথর্ব বেদের যুগে সহমরণ বা সতীদাহের কথা জানা যায় । বিবাহে কন্যাপণের কথাও জানা যায় । ঋক্‌বৈদিক যুগের গোড়ায় নারী গৃহে আবদ্ধ থাকত না; এমনকি মুদগলিনী, বিশপলা, শশিয়সী প্রভৃতি নারীর নাম পাই, তাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু পরে ক্রমশ নারীর স্থান হয়েছিল অন্তঃপুরে । পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়াই ছিল তার প্রধান কাজ । নিঃসন্তান বা শুধু কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া নারীকে পরিত্যাগ করার অধিকার তার স্বামীর ছিল । সেক্ষেত্রে স্বামী আবার বিবাহ করতে পারত । নারীর যৌন অপরাধের কোনো ক্ষমা ছিল না । কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা প্রশ্রয় পেত । নারীর মন বলে কিছু আছে, তা মনে করা হত না, এমনকি তাকে মারধোর করবার অধিকার তার স্বামীর ছিল । এক কথায় বলা যায়, প্রাচীন যুগে ‘নারীস্বাধীনতা’ ছিল বলে অনেকের যে ধারণা আছে, তা অনেকাংশে ভ্রান্ত বলে মনে করা হয় । নারী ছিল পুরোপুরি পুরুষের অধীন এবং তারই “সম্পত্তি” । বেদ পরবর্তী যুগে নারীর অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটেছে । বৌধায়নের ‘ধর্মশাস্ত্রে’, মনু প্রভৃতি স্মৃতিশাস্ত্রকারদের রচনা, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’, বাৎসায়নের‘ কামসূত্র’, কালিদাসের বিভিন্ন নাটক, বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ ও ‘হর্ষচরিত’, হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্নাবলী’, মাঘের ‘শিশুপালবধ’, দন্ডির ‘দশকুমারচরিত’, শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিণী’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে নারীর দুরাবস্থার কথা জানতে পারা যায় । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র পুত্রের মাতা । তার কোনো স্বাধীনতা ছিল না । স্বয়ংবর ও গান্ধর্ব বিবাহ পদ্ধতি ক্রমশ অপ্রচলিত হয়ে পড়ে এবং আর্য ও আসুর বিবাহ প্রথা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । বিধবা বিবাহ ক্রমশ উঠে যেতে থাকে এবং জীবনের বাকি অংশ তারা শোক এবং কৃচ্ছ্র সাধনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে থাকে । তবে পর্দাপ্রথা ছিল না । নারীরা উৎসব এবং খেলাধূলায় অংশ গ্রহণ করতে পারত । হর্ষবর্ধনের সময় অর্থাৎ সপ্তম শতকে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল । শিক্ষাদীক্ষা উচ্চবর্ণের নারীদের মধ্যে সীমিত হয়ে যায় । তাদের বেদপাঠ নিষিদ্ধ হয় । সমাজে একমাত্র পতিতারাই শিক্ষিতা এবং স্বাধীন ছিল । তবে বৌদ্ধ ও জৈন পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল । সাহিত্যে অবশ্য নারীকে প্রেমিকা রূপে দেখানো হয়েছিল । কলহন রক্ষণশীল ও নারী স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন । আবার এইযুগে লীলাবতী ও খনা -র মতো বিদূষী মহিলারও সাক্ষাৎ মেলে । নারী স্বাধীনতা না থাকলেও তাদের যথেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হত । 

সমাজ মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাচীন ভারতের মনুর নিষেধাজ্ঞা বা উনিশ শতকের ইংল্যান্ডের ভিক্টোরীয় সামাজিক আদর্শ সযত্নে লালন করে চলছে নতুন নতুন রাংতায় মুড়ে।

অন্ধকার এবং আলো দুটোরই এক ক্ষমতা, বিস্তৃত হয়ে পরে তারা, এইক্ষেত্রে অন্ধকার বিস্তৃত হতে লাগল, অর্থাৎ অন্ধকারময় মধ্যযুগের পর উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে চলে আসি, যেখান থেকে আবার শিক্ষার জগতে প্রবেশ শুরু হয় নারীর, যার পেছনে দায়ী ছিল কলোনিয়াল এফেক্ট, ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত নব্যযুবকেরা উপলব্ধি করলেন জীবনের সঠিক স্বাদ পেতে হলে সহধর্মিণীকেও যোগ্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর রাজা রামমোহন রায় এবং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের কাদা জল সরিয়ে নারীদের রক্ষায় যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার ফল আজ প্রায় সমস্ত পেশাতেই নারী  বিজয় পতাকা তুলে ধরতে পেরেছে। কিন্তু তবুও আমি বলব তা অতি সামান্য সংখ্যক। বিবর্তনের ইতিহাসে নারীর অবস্থান আজও মলিন।  

আপনি ভাবছেন, আপনি ঠিক এমন নন, ছেলে মেয়েকে সমান দেখেন। আপনার মধ্যে নিশ্চয় উদারতা আছে, কিন্তু সমাজ আপনাকে উদারতা দেখানোর যতটা ছাড় দিয়েছে আপনি তার মধ্যেই আসা যাওয়া করেন, বেশি উদার হতে গেলে যে আবার সমাজ বহির্ভূত হবেন। যুগ যুগ ধরে বড় বড় রথী মহারথী, শাস্ত্রকার, পণ্ডিত সমাজের নিয়ম বা কাঠামোতে মাটি লাগিয়ে তাকে মজবুত ও অনমনীয় করেছেন। স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটা প্রায় একই রকম। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া অন্যত্র রাজা বা শাসকের পুত্রসন্তান না থাকলে বা অযোগ্য প্রমাণিত হলে তবেই কন্যাসন্তানকে সিংহাসনে বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় নারীকে নিরাপত্তা দেওয়ার অঙ্গীকার থাকলেও তাকে সমানাধিকার দেওয়ার ভয় অবিরাম তাড়া করে বেড়াচ্ছে। 

যখনই সমাজ-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের উপর চাপ এসেছে সমাজের মাথায় থাকা মানুষ ছোট ছোট সংস্কারের মাধ্যমে মূল কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। আজও সমাজ-ঐতিহ্য, প্রচলিত সংস্কার নিয়ে প্রশ্নকে সুনজরে দেখা হয় না। সমাজ আধুনিক হচ্ছে, সমাজের প্রয়োজনে মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, উচ্চ-শিক্ষা লাভ করছে, কিন্তু ক্ষেত্রে নিজের মতো জীবনযাপন, জীবিকা নির্বাচন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা পাচ্ছে। জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আজও সমাজ তার রক্তচক্ষু দেখিয়ে কত মানুষকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। মেয়েদের উপর চাপ যথারীতি একটু বেশিই কঠোর। একা মহিলা, অবিবাহিত বা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে যাঁর বা এক জন বিধবা, এঁদের সমাজ নিয়ন্ত্রণের রাখতে অতিমাত্রায় যত্নশীল। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ একা মহিলাকে নানা ভাবে অপদস্থ করেন, প্রত্যেকটা মুহূর্তে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তিনি একা তাই সমস্যা, যদি ‘সিঙ্গল মাদার’ হন, তাঁর সন্তানকেও সহ্য করতে হয় নানা গঞ্জনা– বাবার পরিচয় ছাড়া বুঝি বাচ্চা মানুষ হয় না; সমাজের চাপেই বাড়তে থাকে হতাশা। আবার অনেক মহিলাও আছেন যাঁরা মহিলা হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ নেন, সেক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যকে মহিলারা নিজেই স্বীকৃতি দেন বলে তাঁদের নিয়ে সমাজের বিশেষ সমস্যা থাকে না।

এই সমাজে সমানাধিকারের কথা বললেই নারীবাদী বলে তির্যক মন্তব্য করা হয়। সমাজের রক্ষণশীল মানুষই শুধু নন, বরং অধিকাংশ মানুষ মনে করেন নারীবাদীরা সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক, তাঁদের প্রভাব নেতিবাচক এবং নারীবাদ মেয়েদের উশৃঙ্খলতার পথ দেখায়। নারীবাদ আসলে বহুমাত্রিক; একই সঙ্গে বৌদ্ধিক চর্চা ও রাজনৈতিক আন্দোলন যা লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান ও সমানাধিকারের কথা বলে; যাঁদের আন্দোলনের ফলেই মেয়েরা ভোটদানের অধিকার, সম কাজে সমান বেতন লাভের অধিকার, আরও অন্য অধিকার উপভোগ করছে। তবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হলেও যুগ যুগ ধরে নারীকে পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার জালে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। মেয়েদের চালচলন, পোশাক, চরিত্র নিয়ে সমাজের কৌতূহল ও সমালোচনার শেষ নেই। এই প্রসঙ্গে সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখা ‘অপসংস্কৃতি?’ (২০০৩) নামে একটি বইয়ের কথা মনে পড়ল। তিনি দেখিয়েছেন যে, হঠাৎ করে সমাজ অশালীন হয়নি, রুচি বা সৌন্দর্যবোধ যুগ নিরিখেই 

পাল্টেছে। কিন্তু এই পরিবর্তনকে ‘অপসংস্কৃতি’ বলা যায় কি না তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

মনে রাখা ভাল, সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল, ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দের মধ্যে একটা স্থবিরতা রয়েছে। যাঁরা অপসংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁরা বেশিরভাগই এর দায় সিংহভাগ মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেন! শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার হওয়া সত্ত্বেও আজও ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক বা আচরণকে দায়ী করা হয়, ধর্ষকের উদ্দেশ্য বা মানসিকতাকে নয়! কিছু মানুষ অবশ্যই আছেন যাঁরা প্রচলিত ধারণাগুলিকে প্রশ্ন করেন, কিছু পুরাতন ধারণা ভাঙার চেষ্টা করেন, মানসিকতা বদলের কথা বলেন। আবার সমাজ বিশেষ প্রয়োজনে কখনও কিছুটা উদার হয়, মেয়েদের সুরক্ষায় আইন তৈরি হয়, এর ফলে আমরা কিছু পরিবর্তনের আশা দেখি, কিন্তু মূল কাঠামো এক থেকে যায়। পিতৃতন্ত্র এমনই এক কাঠামো, যা যুগ যুগ ধরে অটল। নারীকে সম্মান দেওয়ার যে শিক্ষা সমাজ দেয় সেটি আরোপিত, অনেকাংশে বাহ্যিক যা নারীকে অবদমনের পথ খুলে দেয়।

সমাজ ও পরিবার আজও কন্যাসন্তানের জন্মকে ভয় পায়, এ দেশে ভ্রূণহত্যা এখনও বেশ প্রচলিত; এই সমাজই নারীকে পণ্য করে; অসহায় ও নিরুপায় বহু মহিলাকে উপার্জনের জন্য দেহব্যবসার দিকে ঠেলে দেয়। যখনই কোনও মহিলা মূল কাঠামোকে মানতে নাকচ করেন বা তাতে বিন্দুমাত্র আঘাত হানেন, তখনই সেই মহিলাকে অপদস্থ করতে তথাকথিত ‘আধুনিক’ শিক্ষিত মানুষেরাও সমাজের আরোপিত শিক্ষা ভুলে নিজেদের রুচি ও শালীনতার পরিচয় দেন। মেয়েদের জীবনে যে সব সমস্যা আছে তা মূলত মানুষেরই সৃষ্টি, তাকে টিকিয়ে রাখতেও মানুষের ভূমিকা যথেষ্ট; এতে প্রগতির গতি শ্লথ হলেও মেয়েদের সমানাধিকার দেওয়ার সাহস দেখান ক’জন?


এবছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ট্যাগ লাইন ছিল ব্রেক দ্য বায়াস। মানে নারীদের সামাজিক অবস্থান এখনও ততটাই নড়বড়ে, যাকে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এখনও গ্লোগান তুলতে হচ্ছে। 


বিবর্তেনর এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম, সকলেই নারীর অবস্থান নির্ণয় করতে আমরা যে তিনটি বিষয়ের ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো শিক্ষা, স্বনির্ভরতা এবং ক্ষমতায়ন।

আমি যদি বলি মেয়েদের সামাজিক অবস্থান শিক্ষার ওপর তেমন নির্ভর করে না, হয়তো শিক্ষা তাকে একটুখানি এগিয়ে দেয় মাত্র। কারণ স্বনির্ভরতা শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল নয়, অশিক্ষিত মেয়েরাও অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয় এবং নিজের জীবনের ডিসিশন মেকার হতে পারে। সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে বলতে গেলে সামগ্রিক নারী জাতির কথা ধরে তুলতে হয়, মাত্র চল্লিশ ভাগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা মেয়েরা নয়। 


চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এরকম বহু ছাত্রীকে পাওয়া গেছে যারা সন্তানসম্ভবা। 


সেইসব   পিতামাতা, যারা লকডাউন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকার সময় ক্লাস নাইন টেনে পড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুল ছাত্রী মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন। 

তাহলে একথা স্পষ্টভাবে স্বীকার করা যায় যে আমাদের সমাজে এখনোও বাল্যবিবাহ চলছে, তবে ত্রিপুরায় এই ধরনের ঘটনার কথা একটু কমই শোনা যায়, যতটা না শোনা যায়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার বা উত্তরপ্রদেশে। তার মানে কি ত্রিপুরার মেয়েরা সত্যিই কিছুটা এগিয়ে আছে, তারা উচ্চারণ করতে পেরেছে নিজেদের স্বাধীন সুর বেশ কয়েকদশক আগে থেকেই। 

দারিদ্ররেখা জিনিসটির যেমন সঠিক মাপ আজও কুয়াশাচ্ছন্ন ঠিক তেমনি মেয়েদের  সামাজিক অবস্থান নির্ণায়ক রেখাটিও অন্ধকারাচ্ছন্ন, যেখানে একজন দরিদ্র ঘরের অশিক্ষিত মেয়েও মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে নিজের ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে, তেমনি সোনাগয়নায় মোরা কোন ধনি পরিবারের গৃহবধূও হয়তো দিন রাত ঘরের মধ্যে অসহায় বন্দি জীবন যাপন করতে করতে একসময় চিতাতে ওঠে, যেখানে তার সামাজিক অবস্থানটি আসলে কি ছিল কোনোদিনই জানা  হয় না , তার অকথিত অপমান গুলো যে আসলে অপমান সে কথাটিই সে কোনদিন উপলব্ধি করেনি, এরকম বোধহীন অসংখ্য নারীদের নিয়েই আমাদের বৃহত্তর নারী সমাজ। বোধের জন্ম দেয় সচেতনতা,  সবকিছু থেকে বাইরে বেরিয়ে সচেতনতা সম্পূর্ণ আলাদা একটি জিনিস, যার জন্য হয়তো কোনোরকম শিক্ষারই প্রয়োজন হয় না, যেখানে দাঁড়িয়ে একজন নারী তার প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সমাজের প্রতি, সেই প্রশ্ন ছোঁড়ার ক্ষমতাটিই নারীর প্রথম ক্ষমতায়ন, প্রাচীনকাল থেকে যেসমস্ত নারীরা অন্দরমহলের গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে পা রেখেছেন, তারাই সেসব অন্যতমা নারী। 

ত্রিপুরায় নারীর ক্ষমতায়ন, যার মাধ্যমে তার সামাজিক অবস্থানটি কিছুটা সুনিশ্চিত হয়েছে তার উল্লেখযোগ্যতা মোটামুটি তিনদশকের, কিন্তু এর আগেও তো ত্রিপুরায় একটি বৃহত্তর নারী সমাজ ছিল, তাদের অবস্থান কিরকম ছিল ?  তখন আমাদের চোখ দিতে হয়  সুদূর অতীতে। অতীতের দিকে তাকালে যে জিনিসটি আমাদের সবচেয়ে অবাক করে তা হলো, ত্রিপুরার উপজাতি সমাজ যখন একান্তভাবে জুম নির্ভর ছিল, যখন বয়নশিল্প ছিল  একটি অবধারিত কাজ, ততদিন ত্রিপুরার পরিবার প্রথা ছিল  মূলত নারীকেন্দ্রিক, তখন মহিলারা স্বনির্ভর বেশি ছিলেন, কারণ জুমখেতের কাজ, নারী ও পুরুষ সমভাবে করতেন,বরং নারীরা ফসল লাগানো, দেখাশোনা ইত্যাদি সবকিছুই করতেন, ফলে উৎপাদিত ফসল থেকে আসা অর্থও তারা পেতেন, সেইসঙ্গে ছিল নিজেদের  পরিধেয় বুনন   , অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সেইসময়কার উপজাতি মহিলারা স্বচ্ছল থাকায় তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পেরেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত জুমচাষে ভূমি অনুর্বরা হয়, বন ধ্বংস হয়, তাই পরিবেশ গত কারণে আস্তে আস্তে রাজন্য আমল থেকেই জুমচাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে লাগল কমিয়ে দেওয়া হলো পরিসর। ফলে উপজাতি মহিলারা আস্তে আস্তে তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা হারালেন। বন্দি হলেন অন্তঃপুরে, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ যত বাড়ল, মিলের কাপড় এবং আধুনিক রেডিমেড পোশাক আশাক এলো বাজারে, ফলে বয়ন শিল্পের ওপর একান্ত নির্ভরতাও কমে যেতে লাগল, তারা পরিবারের পুরুষদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে লাগলেন। নিকটতম অতীতেও জনজাতিদের  মধ্যে শিক্ষার প্রসার কম ছিল, আর জনজাতি মেয়েরা ছিলেন আরোও বেশি অন্ধকারে, তাই রাজ পরিবার এবং রাজপরিবারের সংস্পর্শে থাকা রাজধানী কেন্দ্রিক অন্যান্য কিছু পরিবারের মহিলারাই তখন শিক্ষার আলো পেয়েছিলেন,  আমরা পেয়েছি কবি অনঙ্গমোহিনী দেবীকে , কুমুদিনী বসু,রাজকুমারী কমলপ্রভা, মহারাণী তুলসীবতী, প্রভাবতী দেবী প্রমুখ শিক্ষিতা মহিলাকে যাদের মাধ্যমে আস্তে শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, পড়াশোনার একটি আলো বিচ্ছুরিত হয়েছিল ত্রিপুরার নারীসমাজে। 

কিন্তু এই  শিক্ষাকে সেইসময়কার জনজাতি নারীদের সামাজিক অবস্থানের উন্নতির সূত্র মোটেই ধরা যায় না। কারণ তারা তখনও বহু দূরে, অভিজাত সমাজে সবেমাত্র ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো । তাদের মানদন্ড বিচার করতে হলে বলতে হয়, শিক্ষা ছাড়াও তারা রাজ অন্দরমহলের নারীদের চেয়ে  অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন।  জনজাতি সমাজে প্রবর্তিত ছিল বিধবা বিবাহ, ছিল উল্টো যৌতুক দান প্রথা, সামাজিক বিবাহে নারী পরিবারের ছিল অনেক বেশি প্রাধান্য  । সেইসঙ্গে আবার ডাইনি হত্যার মতো বীভৎস জিনিসও ছিল যা হয়তো এখনো আছে শুধু এই ত্রিপুরা নয়, ভারতবর্ষের সর্বত্র।

সময় অনেক কিছু কেড়ে নিয়ে অনেক কিছু এনে দেয়।

যখন জুম চাষ কমে গেলো, পরিশ্রমী জনজাতি মেয়েরা  জুমচাষের পরিবর্তে রাবার, চা, কমলালেবু, আনারস, রেশম গুটির চাষ  ইত্যাদির  মাধ্যমে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলতে লাগল।  গ্রাম পাহাড় থেকে তাদের সন্তানেরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তে আসছেন, সেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে , যার  ফলে

আজকের মেয়েরা তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারছে, আর মেধার বিকাশের মাধ্যমেই আলোক বর্তিকা জ্বলে ওঠে যা আরো অনেক প্রদীপ প্রজ্জলিত করে।

উপজাতি এবং সংখ্যালঘু মহিলাদের এতোদিন  পিছিয়ে থাকার আরো একটি কারণ ছিল তাদের নিজস্ব নিয়মকানুন, যার মাধ্যমে তারা পারিবারিক জীবনে ন্যায় বিচার পেতেন না, যেমন সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, মুসলমানদের তিন তালাক প্রথা ইত্যাদি। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে এই তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে, সংখ্যালঘু মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি 

নিজেদের বিবাহিত জীবনের নিশ্চয়তা খুঁজে পেয়েছেন, আর নিশ্চয়তাই হলো সেই ভিত্তি যা শেকড় তৈরি করে, যাতে পরবর্তীতে সে ছায়াদানকারী বৃক্ষ হতে পারে।

কিছু পরিসংখ্যান তো দিতেই হয়। 

ত্রিপুরার বাঙালি মেয়েরা শিক্ষা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে, কিন্তু পণপ্রথা, বধূহত্যা, ইত্যাদি এইসময়েও বর্তমান, তাই সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গির বদল ঘটতে হয়তো এখনো বহু বাকি। নারী পুরুষ এখন কর্মক্ষেত্রে সমযোগ্যতায় এগিয়ে আছেন,  সকলেই হয়তো পুরোপুরি স্বনির্ভর হতে পারবে না, সেইক্ষেত্রে একজন মহিলা যদি অন্য মহিলার পাশে দাঁড়ান, তবে পারিবারিক সুস্হিতি তাদের সামাজিক অবস্থানকে সম্মানজনক করতে পারবে।  

১৯৯৪ সালে ত্রিপুরা মহিলা কমিশন আইন প্রণিত হয়। মহিলারা এখন অনেকটাই নিজেদের অধিকার এবং তাদের ওপরে হওয়া নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছে। রাজ্যে মহিলা পরিচালিত থানার সংখ্যা বেড়েছে , আরক্ষা দপ্তরে দশ শতাংশ চাকরি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত, সুপ্রীম কোর্টের 'বিশাখা ' নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত সরকারি দপ্তরে কাজের জায়গায় মহিলাদের যৌন অবমাননা রুখতে অভিযোগ কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে, ২০০৩ সালে পণপ্রথা বিরোধী আইন প্রবর্তিত হয়েছে, আরক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে কাজ করছে ' প্রয়াস ' সামাজিক সংস্থা।

 মহিলারা আসলে এমন একটা জায়গায় এখনো দাঁড়িয়ে আছে এবং বহুকাল হয়তো আরো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে যার যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন, তা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত, নিরাপত্তা গত এবং এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে যা প্রতিভাত  হয়, তাই হলো তার সামাজিক অবস্থান।

ত্রিপুরার গ্রাম পাহাড়ে আজকাল স্বল্প শিক্ষিতা সাধারণ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্না উপজাতি অথবা বাঙালি মা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভিলেজ কমিটির চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করছেন। 

ত্রিপুরার সংখ্যালঘু মেয়েদের সামাজিক অবস্থান ভারতের অন্যান্য জায়গার থেকে অনেকটাই উন্নত। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামন্ততান্ত্রিক বিধি, পর্দা প্রথা যথেষ্ট শিথিল। তাদের জন্য ছাত্রীনিবাস তৈরি হয়েছে।  বেগম রোকেয়া স্মৃতি পুরস্কার, ' মৌলানা আবুল কালাম আজাদ 'স্মৃতি পুরস্কার চালু রয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন নির্বাচিত সংস্থায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকরী হওয়ার ফলে তপশিলী এবং সংখ্যালঘু নারীরা প্রশাসনিক স্তরে নিজেদের নিযুক্ত করতে পারছেন, এভাবেই হয়তো সামাজিক অবস্থানের বিবর্তন ঘটছে,

আস্তে আস্তে, 'পাছে লোকে কিছু বলে ' এই ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে  একজন নারী হয়ে উঠবেন সর্বক্ষেত্রে সাবলীল। 







একদম শেষে এসে বলতে হয় যে শব্দটি আলোচনার অবকাশ সৃষ্টি করছে, তা নারীবাদ নয়, তা হলো সমাজ। আর সমাজ কখনোই একক কোনো সত্তা নয়, নারী পুরুষকে নিয়েই গড়ে উঠেছে, এই সমাজ। সুতরাং একজন আর একজনকে অবশ্যই অনুপ্রাণিত করুন,

জীবনে নানা যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে যেসমস্ত মেয়েরা সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাইরে নিজেদের কর্মক্ষেত্র বেছে নিয়েছেন বা একটু অন্যভাবে নানারকম পারিবারিক নির্ণয় নিচ্ছেন তাদেরকে নিন্দে না করে, প্রশংসা করুন, মেয়েদেরকে অবস্থান বদলানোর কথা না বলে বরং সমাজ বদলানোর কথা বলুন, শহুরে  জীবনযাত্রা এবং গ্রাম্য জীবনযাত্রা উভয়ক্ষেত্রেই মেয়েদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাক, আর মেয়েদের  কাঁধও একজন ছেলের মতোই বৃদ্ধ বাবা মায়ের দায়িত্ব নিতে পারে এবং নিতে বাধ্য, এইসমস্ত ধারণাগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে হয়তো কন্যাসন্তান এবং পুত্রসন্তানের মধ্যে পার্থক্য ঘুচে যাবে, আর তাহলেই অনেক বৈষম্যমূলক বিষয় থাকলেও, মেয়েদের সামাজিক অবস্থানটি বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রে সুদৃঢ় হবে। 

তবেই বোধহয় জীবনের মাধুর্য খুঁজে পাওয়া যাবে।



টু বি ওর নট টু বি, বেঁচে থাকা এবং  না  থাকার মধ্যে, বেঁচে থাকাটা এবং এগিয়ে যাওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে আজ যে বিষয়ে আলোচনা হলো, তা যেন একটু বদলে যায়, যেখানে বলা হবে,

সমাজ বিবর্তনে মানুষের অবস্থান।

নমস্কার সবাইকে। 





0 মন্তব্য(গুলি):