line city

৬:৪৬ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

#LINE  #NEOM 
সরলরেখার শহরে 
 …….
#চিরশ্রীদেবনাথ 

১০ হাজার বর্গমাইল দীর্ঘ , ৯ মিলিয়ন মানুষের বাস এমন একটি শহরে যা কিনা মধ্য এশিয়ার সৌদি আরবের মরুভূমিপ্রান্তরের বুক চিরে সমস্তরকম নিজস্ব প্যারামিটারকে নির্ভর করে লোহিতসাগরকে ছুঁয়ে রাখবে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই , অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি স্বচ্ছ সুবৃহৎ  দেয়াল দিয়ে আলাদা করে রাখবে নিজেকে সমগ্র পৃথিবীর থেকে, ভেতরের কৃত্রিম চাঁদ,জ্যোৎস্না, মেঘ, বৃষ্টি , আগাছা থেকে কীটপতঙ্গ সমস্ত কিছু বানাবেন জীববিজ্ঞানী , আবহাওয়াবিদ থেকে শুরু করে পৃথিবীর এই সময়ের শ্রেষ্ঠ মেধাবী লোকজন । তাহলে কল্পবিজ্ঞান বলে আর কিছু রইল না, 
কল্পনা আর স্বপ্ন এখানে বানানো হচ্ছে রাশি রাশি বিলিয়ন ডলার দিয়ে ধরে নিন প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার , সৌদির রাজা ভেবেছেন , কিভাবে তৈরি করা যায় পৃথিবীর ভেতর আর এক পৃথিবী,যেখানে বাস করবে অন্তত ৯ মিলিয়ন মানুষ ,  বন জঙ্গল সমুদ্র সৈকত সবকিছুই হবে মানুষের বাড়ির দরজায় অথচ থাকবে না কোনো পায়ে হাঁটা রাস্তা এবং গাড়ি ।  মানুষের ঘরের জানলা দিয়ে এইসব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যাবে,ধনী বা গরিব লোক বলে আলাদা করে কোনো উপভোগ্য পর্যটন স্থল থাকবে না। 
দুজন random  মানুষের মধ্যে গড় দূরত্ব হবে ১.৮ মাইল , এক বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রেনের যা অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচমিনিট বা তারও কম। 
রাজার নাম,  Mohammad Bin salman , Forbes এর তালিকায় যিনি বিশ্বের অষ্টম ক্ষমতাবান মানুষ,আর সৌদির রাজারা তো ধনীই হয় ,তিনি ব্যক্তিগতভাবেই প্রায় পঁচিশ বিলিয়ন ডলারের মালিক এবং  একজন MBS.

এখন আপনাকে আসতে হবে অংকের কাছে। পৃথিবীর এই সময়ের হয়তো বা সবসময়ের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টটির একদম মূলে রয়েছে  ম্যাথমেটিক্সের  সিম্পল একটি ধারনা।
জাস্ট একটি line টানুন , নিঁখুত সোজা 
।  এই লাইনটিই হলো কাল্পনিক সেই শহর বা linear city.
শহরটি বানানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত পৃথিবীকে দেখানো পরিবেশকে কি করে রক্ষা করতে হয় এবং সেই সঙ্গে শুধুমাত্র তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সৌদির অর্থনীতি ভবিষ্যতে কতটা সবল থাকতে পারবে জানা নেই, তাই যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বিকল্প আয়ের উৎস বের করা , NEOM পুরো প্রজেক্টটি তৈরি হলে সমগ্র বিশ্বের ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করা যাবে,  এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে সৌদি আরবকে খাদ্যে স্বয়ংম্ভর বানানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে। সৌদি আরব বরাবরই আধুনিক টেকনোলজির প্রয়োগে অত্যাশ্চর্য সব পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করেছে । ২০১৭ সালে প্রথম NEOM প্রজেক্টটির কথা ভাবা হয় এবং এখন সৌদি আরবের তাবুক প্রভিন্সে ( Tabuk province ) এটি বানানো শুরু হয়েছে,  অনুমান করা যাচ্ছে যদি সত্যিই এই শহরকে বাস্তবে বানানো যায় তবে এর জন্য আনুমানিক সময় লাগবে ২০৪৫ সাল নাগাদ। কারণ এখানে এমন সব প্রযুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে যেগুলোর এখনো আবিস্কারই হয়নি। পৃথিবীর তিনজন সেরা আর্কিটেক্ট Thom Mayne, Peter Cook, and Roger Soto এবং সৌদির রাজা মহম্মদ বিন সলমান পুরো ভাবনাটির মূলে রয়েছেন। 

 NEOM , যা মূলত দুটো শব্দ থেকে এসেছে, প্রথম তিনটি অক্ষর এসেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ neo ‘থেকে, যার অর্থ নতুন কিছু,  আর 
   'M'  মানে 'Mustaqbal', একটি আরবি শব্দ যার অর্থ 'future'.
এটা হলো CITY OF THE FUTURE IN NEOM, 
মোট দশটি প্রজেক্ট রয়েছে 
নিয়ম বা(NEOM) এ ,এর মধ্যে চারটির কথা জানানো হয়েছে, The Line সবচেয়ে আলোচিত, oxagon,  Trojena এবং Sindalah.
তবে সৌদি আরবের The Line এই মুহূর্তে একটি অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় স্থপতিদের ।আদৌ কি সম্ভব! 
লোহিত সাগরের উত্তরে, ইজিপ্টের পূর্বদিক ঘেঁষে ,জর্ডানের দক্ষিণে,  GULF OF AQABA র মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া লাইনটিতে থাকবে দুটো দীর্ঘ সারি এবং প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচু স্কাইস্কেপারস যারা পরস্পরের থেকে ৬৫০ ফুট দূরত্বে মুখোমুখি থাকবে । মানুষ এখানে পাশাপাশি এবং উপর নীচ এই দুইভাবেই অত্যন্ত অল্প সময়ে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে । হাই স্পিড রেলওয়ে সিস্টেমটির মাধ্যমে Line মেট্রোপলিটন সিটির এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে সময় লাগবে মাত্র কুড়িমিনিট। 
পুরো শহরটিই পরিচালিত হবে সম্পূর্ণভাবে আর্টিফিশিয়েল ইন্টিলিজেন্স এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ( Renewable Energy) র দ্বারা , নির্দিষ্ট জনসংখ্যা ছাড়া দোকানপাটের কর্মচারি থেকে সাফাইকর্মী এবং কৃষক সবাই হবেন রোবোট। 
আমরা যখন শহর বানাই , একটি বিশাল জায়গার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, গাছপালা থেকে পাহাড় সব কেটে নেই ,নদীতে বাঁধ দিই, ভূগর্ভ থেকে প্রচুর জল তুলি । কিন্তু উত্তর মেরু বা দক্ষিণমেরুতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারগুলো তৈরি করা হয় তা কিন্তু একটি লাইনে থাকে ,ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়  যাতে করে প্রাকৃতিক দূষণ না হয়, চারপাশের পরিবেশ একটি বড় জায়গা জুড়ে নষ্ট না হয়। ঠিক এই ধারণাকে মাথায় রেখেই 
  পরিবেশকে বাঁচাতে নতুন দিনের এই শহর,  বায়োস্ফিয়ারকে নিজের মতো করে থাকতে দেবে,  যতটা সম্ভব কম জায়গা নেবে গড়ে ওঠার জন্য। কার্বন এমিশন হবে না , কারণ থাকবে না কোনো যানবাহন , একমাত্র একটি রেলওয়ে সিস্টেম  যা চলবে ক্ষতিকারক জ্বালানীর ব্যবহার না করে। 
কিন্তু অংকবিদরা বলছেন এইভাবে স্ট্রেইট লাইনের মাধ্যমে শহর তৈরি করাটা অযৌক্তিক কারণ এখানে মানুষজনের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব অত্যন্ত বেশি হয়ে যাবে, বরং শহরটাকে যদি Circle হিসেবে তৈরি করা হতো তবে তা হতো অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত এতে করে মানুষের মধ্যে দূরত্ব অনেক কম হতো। তাছাড়া শুধুমাত্র একটি রেলওয়ে সিস্টেম যদি collapse করে তবে আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই কেন?
দুই পাশের স্বচ্ছ কাচের দেওয়াল মরুভূমির ইকো সিস্টেমকে একটি বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলবে। হ্যালুনিশন সৃষ্টি করবে পশু পাখির মধ্যে , এতে ধাক্কা খেয়ে প্রতিদিন প্রাণ হারাবে তারা।
তাছাড়াও তাবুক প্রভিন্সে ( Tabuk province) এ বসবাসকারি সৌদির জনজাতিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং রাজার বিরুদ্ধে  ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাদের  দীর্ঘদিনের বাসস্থান কেড়ে নেওয়ার জন্য , ঠিক যেমনভাবে ভারতে সংগঠিত হয়েছিল নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। 
আর আমি ভাবছি সেখানে বসবাসকারী ৯ মিলিয়ন মানুষের কথা। কেমন হবে সেই কৃত্রিম পৃথিবীর জীবনযাত্রা, পরিবেশদূষণ শূন্য হবে, নিঁখুত ছকে বাঁধা সকাল,  দুপুর ও রাত্রি । 
সত্যিই তারা সেখানে থাকবেন তো সবকিছু মানিয়ে গুছিয়ে , যেখানে জানলা খুললেই কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত তাদের দিকে তাকিয়ে অভিজাত নীল হাসি হাসবে ? 

#চিরশ্রীদেবনাথ

0 মন্তব্য(গুলি):