পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও লোক সংস্কৃতি

৬:২৫ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments


****************



“মানুষ হয়ে মানুষ চেনো

মানুষ হয়ে মানুষ মাপো

মানুষ হয়ে মানুষ জানো

মানুষ রতনধন

করো সেই মানুষের অন্বেষণ।”

লোকায়ত জীবন আর সংস্কৃতির মূল ঝোঁক হল সমন্বয় প্রবণতা, সে সমন্বয় মানুষে মানুষে। জাতে-জাতে এমনকি ধর্মে ধর্মে,  লোকায়ত জীবনধারাজাত সংস্কৃতির প্রধান বীজমন্ত্র গানের ভাষায় এইভাবেই ফুটে উঠেছে। 



তাই প্রথমেই আমি বলব, সংস্কৃতি ও পরিপন্থী শব্দদুটো পরস্পর বিরোধী। সংস্কৃতির সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা যিনি করেন, তিনি জ্যাজ মিউজিক এবং একতারার

শান্ত চলন দুটোই ভালোবাসেন, পারলে তাতে ফিউশন ঘটিয়ে ফেলেন।

বিশ্বায়নের এই যুগে একজন সংস্কৃতি প্রিয় মানুষ শুধুই বিশ্বনাগরিক, দিনের শেষে বাউল থেকে শুরু করে একজন ব্যান্ড শিল্পী সবাই শুধুমাত্র  পারফর্মার, হয়তো তার ব্যাকুল জীবন দর্শন রয়েছে, কিন্তু তাকেও করে কম্মে খেতে হবে, শেষপর্যন্ত শিল্প হয়ে  ওঠে জীবিকা, তাই জীবিকাকে সঞ্জীবিত রাখতে তাকে অবিরাম শিল্পকে ভাঙতে হয়, মেশাতে হয় মণি মুক্তো, আনতে হয় নতুনত্ব, বিশাল স্টেজে একবিংশ শতকের প্রজন্মের সামনে মুরশিদকে ঘাবড়ালে চলবে না, তাকে মেল বন্ধন ঘটাতে হবে একতারা ও গিটারের সঙ্গে।



হয়তো আজকের বিষয়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক নেই, তবুও একটুখানি বলতেই হয়, কারণ বিষয়টি হলো লোকায়ত। আর বাউল সঙ্গীত লোকায়ত সংস্কৃতির প্রধানতম বাহক। 

বাউলের সঙ্গে একজন বাউলানি থাকে, তাদের কিন্তু সংসার হয় না, প্রকৃত বাউল বলেন,

"দিও না মন ঘটে পটে "

তাদের বিছানা নেই, রান্নার সরঞ্জাম নেই, বাউলানির শাঁখা, সিঁদুর, নথ কিছুই নেই, শুধু একহাতে একটু সুতো আছে, খুব রস করে একে বলা হয় " গৌরগয়না " অদ্বৈতানন্দ থেকে নিত্যানন্দ, আর তারপর  চৈতন্য মহাভাবে বিলীন হওয়া, কারণ বাউলদের কাছে তাঁরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, এক একটি ভাবমাত্র । ঠিক এই গৌরগয়নার মতো এমনই সহজ করে লোকায়ত সংস্কৃতি আমাদের চিত্তে তাদের ভূমির আসন পেতে রেখেছে,  বাউলরাই বলেন,' হলে মাটি মলে মাটি ', আমরা তো ভূমিষ্ঠই হই, আবার সমাধি হয় এই মাটিতেই । 

তো এ হেন বাউলগান যে নিজের অধিকারে, নিজের চৌম্বকীয় আকর্ষণে পাশ্চাত্যের কাছে লোভনীয় হয়, তা কি দোষের বলুন। বাউল গানের কথায় সুরে যদি

আজকের কোনো সুরকার পশ্চিমাঝাঁঝ মিশিয়ে সিনেমার গান বানিয়ে লোকমানসে হৈ চৈ ফেলে দেন, আমরা তাকে বাধা দেবার কেউ নেই, গান এভাবেই বাহিত হয়ে আসছে চর্যাপদের সান্ধ্যসময় থেকে আজ অবধি। 

কিছুদিন আগে একটি লোকগান খুব জনপ্রিয় হয়    এবং এর তুমুল উচ্ছাস ছড়িয়ে পরে ভারত, বাংলাদেশ এমনকি বিদেশের বাঙালি জনমানসে, গানটি হলো

মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বিবাহ সঙ্গীত,



"আইলা রে নয়া দামান আসমানের তেরা।

বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া ॥

দামান বও দামান বও "

মত এবং এবং দ্বিমত অনুসারে রামকানাই  দাশের মেয়ে কাবেরী দাশের সাম্প্রতিক ভাষ্য, ১৯৬৫ সালে গানটি তাঁর ঠাকুরমা দিব্যময়ী দাশ রচনা করেছেন। ১৯৭৩ সালে এটি দিব্যময়ীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে শিল্পী ইয়ারুন্নেসা খানম (২০২০ সালে প্রয়াত) সিলেট বেতারে রেকর্ড করেন।

কিন্তু বিপত্তি বাধে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সিলেটের সংগীতশিল্পী তসিবা বেগম ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তরুণ সুরকার মুজাহিদ আবদুল্লাহ (মুজা) গানটিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। যাতে মূল গানের আগে তিনি কিছু পাশ্চাত্য বিটস এবং ভাষ্য যোগ করেন, যা গানটিকে উত্তর প্রজন্মের সঙ্গীত করে তোলে, মূল গানটির কথা ও ভাবও রইল, আমার এই প্রজন্মের 

কাছে গৃহীত ও জনপ্রিয় হলো, সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী না তৈরি করে কঠিন রক্ষণশীলতা নিয়ে বসে থাকলে, সংস্কৃতি হারিয়ে যাবেই।

সম্প্রতি ধর্মনগর শহরেও প্রচুর হিন্দুবাড়ির বিবাহ অনুষ্ঠানে, এই গানটির সঙ্গে কোমড় দুলিয়ে নৃত্য করতে দেখা যায় মেয়ে ছেলে নির্বিশেষে, এই হলো লোকায়ত গান, ধর্ম ও জাতপাতবিহীন, পশ্চিমী অলঙ্কার পরে দেশিয় তালে আনন্দিত হয়ে নাচছে। 



সংস্কৃতি শব্দের অনেক ভারি ভারি সংজ্ঞা রয়েছে নৃতাত্ত্বিক গবেষণায়, তবে খুব  সহজ একটি ব্যাখ্যাও আছে, সংস্কৃতি যা মানুষের সহজাত বর্বরতাকে দূর করে তাকে সৃজনশীল, নম্রমুখী, গভীর বোধের মানুষ করে তুলে,

কি সেই বোধ, যে বোধের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সমন্বয়। মানুষের জাতিগত, গোষ্ঠীগত বিভেদ, হিংস্রতা দূরে চলে যায়, যখন সেখানে সুরের জন্ম হয়, নৃত্যের ছন্দ সৃষ্টি হয়, বাজনদারের হাতে বেজে ওঠে আবেদনময় ঝংকার। যা নিতান্তই সহজিয়া, জলের মতো তার গতি, জীবনের রন্ধ্র থেকে তুলে আনা প্রাণবায়ুর মতো মসৃণ, অমূল্য।  সেই ভাবকে কায়দাকানুন করে আমরা নাম দিয়েছি লোকায়ত, অভিধানে এই শব্দটির অর্থ খুঁজলে  একটি সমার্থক শব্দ পাওয়া যায়, শব্দটি হলো, ধর্মনিরপেক্ষতা, 

সেক্যুলারিজম।  যেখানে এসে সকল ধর্মের সারকথা বিলীন হয়ে যায়, সেই গভীর জীবন দর্শন ...



একসময় অখণ্ড বাংলায়, পূর্ব ও পশ্চিম অংশের অনেক গ্রামে-নগরে লোকায়ত সংস্কৃতির আনুকূল্যে গড়ে উঠেছিল বহুতর গৌণধর্ম। এই সব মতগুলির উদ্ভব ও প্রসার মূলত নবদ্বীপ ও সংলগ্ন পূর্বস্থলীকে ঘিরে, অখণ্ড নদিয়ার নানা জনপদে এবং রাঢ়বঙ্গে এই সব সম্প্রদায়ের উদ্ভবে কোথাও ছিল ব্রাহ্মণ ও ইসলামের মিলিত শক্তি। কোথাও বা গৌর-বিষ্ণুপ্রিয়া সাধনা, কোনও ক্ষেত্রে দল গড়েছেন রাজবংশীরা এককভাবে। কোথাও মতের প্রবর্তন করেছেন একজন মুসলিম সাধক। কেউ কেউ সম্প্রদায় গড়েছেন ব্রাহ্ম ও ব্রাহ্মণ বিরোধী মনোভাব থেকে, অনেক ক্ষেত্রেই এইসব লোকায়ত সাধনার শিষ্য হতেন হিন্দু ও মুসলসান যৌথভাবে। তাঁদের আদর্শ ছিল উদার মানবতন্ত্র। সেই প্রসঙ্গে চৈতন্যের ভাবমূর্তি ও প্রভাব অনেক গভীর ছিল। বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির নানা গোষ্ঠীর উদ্ভবে শ্রীচৈতন্যের ভাবধারার প্রভাব অপরিসীম। তাহলে  মানুষের অন্বেষণে নেমে তো, কোনো ছ্যুৎমার্গ থাকলে হবে না, এই গানের ঐশ্বর্য আকর্ষণ করেছিল সম্পূর্ণ নাগরিক ঘরানার ঠাকুর পরিবারকেও। যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ম্যলিয়ের পড়তেন, তিনি লালনের সখ্য সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। এঁকেছিলেন লালনের ছবি। যে ভুবনের স্বাদ তিনি পেয়েছিলেন, নিজের ‘পড়শি’র কাছ থেকে, তার ভাগ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথও। রবীন্দ্রনাথের বহু গানে লালন ঘরানার ছাপ আছে। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় বাউল গানের সম্ভার প্রকাশিত হয়। পরে ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসে এবং লন্ডনের হিবার্ট লেকচারে (১৯৩০) রবীন্দ্রনাথ মানুষের ধর্ম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাউলগানের রসসম্পদ ছুঁয়ে যান। বাউল তত্ত্ব বোঝাতে দু’একটি গানের ইংরাজি অনুবাদও করেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ কালীমোহন ঘোষকে একটি চিঠিতে লেখেন “তুমি তো দেখেছ শিলাইদহে লালন শাহ ফকিরের শিষ্যগণের সহিত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার কিরূপ আলাপ জমিত। তারা গরিব। পোষাক পরিচ্ছদ নাই। দেখলে বোঝবার জো নাই তারা কত মহৎ। কিন্তু কত গভীর বিষয় কত সহজ ভাবে তারা ভাবতে পারতো।” রবীন্দ্রনাথের এই চিঠি থেকে বোঝা যায় শুধু বাউলগানের ভাব ও সুরের অভিনবত্ব নয়, তার বাইরে এই মগ্ন সাধকদের সাধারণ জীবনযাপন, দারিদ্র্য সত্ত্বেও উন্নত চেতনাগত সম্পদ তাঁকে বেশি আকর্ষণ করেছিল।

সংস্কৃতি এবং ভাষা এই দুটোকেই চলমান থাকতে  হয়, বহমানতা এবং মিশ্রণ ছাড়া সংস্কৃতি ও ভাষা বেঁচে থাকতে পারে না, তা হয়ে পরে স্থবির।

এইজন্য আমি লোকায়ত সংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বর্তমানে যে মিশ্রণ ঘটছে বিশেষ করে গানে, মিউজিকে, পোশাকে, তাকে সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করতে পারি না। 

তবে লোকায়ত সংস্কৃতির একদম মৌলিক কিছু বিশেষত্ব রয়েছে।  খাওয়া দাওয়া, গান, নৃত্য, বাসনকোসন, আচারআচরণ, চিত্রকলা ইত্যাদির  মিলিত সমন্বয়ে একটি বিশেষ স্থানের বিশেষ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। ভারতবর্ষের মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এটা, বিবিধ সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ভারতীয় সংস্কৃতি, যেখানে সবাই নিজের মৌলিকত্ব বজায় রাখবে তবেই তো বিচিত্র সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হওয়া যুগ যুগ ধরে সম্ভব, কারণ এটাই আমাদের ঐতিহ্য, কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সেই ঐতিহ্যে বিশ্বাসী নয়, তাদের কাজ হলো এককেন্দ্রীকরণ, মানুষের শিক্ষাদীক্ষা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুকে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে ফেলে, মানুষকে ক্রমাগত ভোগবাদের দিকে আকর্ষণ করা এবং আস্তে আস্তে প্রত্যেকটি মানুষকে পন্যে পরিনত করা, এই সুবিস্তৃত জালে আমরা সবাই এখন আটকে গেছি, এখানেই  পাশ্চাত্য সংস্কৃতি লোকায়ত সংস্কৃতির বিরোধীপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে,

এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে, আমার আলোচনা শেষ করব। 

 কিছুদিন আগে হিমালয়ের লাদাখ অঞ্চলের জনজীবনের ওপর গবেষণা করে একটি ডকুমেন্টারি বানানো  হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে  ‘স্কুলিং দ্য ওয়ার্ল্ড : দ্য হোয়াইট ম্যান’স লাস্ট বার্ডেন’।

জম্মু এবং কাশ্মীরের  লাদাখ অঞ্চল যার বিস্তৃতি কুনলুন পর্বতমালা থেকে দক্ষিণ হিমালয় পর্যন্ত। এটি মূলত ইন্দো-আর্য এবং তিব্বতীয় অধ্যুষিত একটি এলাকা। Moravian মিশন ১৮৮৯ সালের অক্টোবরে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রত্যেক পরিবার থেকে একজনের বেশি বাচ্চাকে স্কুলে যেতে বাধ্য করা হয়। ২০১০ সালে ডকুমেন্টারিটি রিলিজ হয়, যেখানে  লাদাখের একজন বৃদ্ধ দুঃখ করে বলছেন, আস্তে আস্তে এই অঞ্চলের সমস্ত নিজস্বতাকে ছেড়ে এখানকার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে লাদাখ থেকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন, একাকী নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধ জনপদে পরিনত হচ্ছে এই গ্রাম, একদিন যেখানে প্রতিদিন দেশিয় নাচ গান, পুজো, উৎসব, খাওয়া দাওয়ায় মুখর হয়ে থাকত প্রত্যেকটি গৃহ, সেখানে এখন মৃত সংস্কৃতির অশনি পদধ্বনি ।

ডকুমেন্টরিটির শেষদিকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিপরীতে লোকজ শিক্ষায় শিক্ষিতদের জীবনযাত্রা সমান্তরালে দেখানো হয়। দেখা যায়, তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা যতোটাই বিচ্ছিন্ন, হতাশ, জীবন নিয়ে বিতৃষ্ণা  লোকজ শিক্ষায় শিক্ষিতরা ততোটাই প্রাণোচ্ছ্বল, সজীব, প্রাণবন্ত। অর্থাৎ লোকজ শিক্ষায় শিক্ষিতরাই বেশি সুখী। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কখনোই অর্থ উপার্জন নয় বরং জীবনকে আরো ভালোভাবে অনুধাবন। তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা যা মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষারই ধারক-বাহক কিভাবে লোকজ সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করছে তার উত্তম চালচিত্র এই ডকুমেন্টরিটি।

স্কুলিং দ্য ওয়ার্ল্ড ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয় আমাদের সামনে। ভাবতে শেখায়, উন্নয়নের নাম করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপন করা বিদ্যায়তনগুলো আসলে কতোটুকু মানবতার খাতিরে আর কতোটুকু পাশ্চাত্যের শিক্ষাকে প্রসারের লক্ষ্যে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। নিসন্দেহে তথাকথিত ‘বেটার ফিউচার’র দোহাই দিয়ে পূর্ব থেকেই নিজেদের মতো প্রাচুর্যে ভরপুর জনগোষ্ঠীকে পশ্চিমা চিন্তা-চেতনায় দীক্ষিত করা হচ্ছে, যার ফলে নতুন প্রজন্মের সাথে পুরনো প্রজন্মের মধ্যে ফারাক বেড়ে যাচ্ছে। গ্রামগুলো হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম যারা আর মাঠে কাজ করছে না, বরং শহরে গিয়ে তারা বিশ্বের অন্যান্য মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় মগ্ন হচ্ছে। যারা প্রতিনিয়ত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সিঁড়ি অতিক্রম করতে ব্যস্ত। ডকুমেন্টরি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, এই আদিবাসী গোষ্ঠী আসলে অর্ধশিক্ষিত হচ্ছে যার ফলে তারা তাদের জনগোষ্ঠী থেকে পৃথক পৃথিবীতে বসবাস করছে। যার ফলে তাদের চিরায়ত আধ্যাত্মিক সফলতার সাথে বাস্তবিক সাফল্যের দ্বন্দ্ব বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ।

পাশ্চাত্যের শিক্ষা সবাইকে একই ছাঁচে গড়ে তুলতে চায়, যার ফলে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য আসলে টাকা উপার্জন করা এবং পুঁজিবাদী বিশ্বে নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করা। দারিদ্র্যকে নির্মাণ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ ট্রেডিশনাল সমাজগুলো নিজেদের মতো জীবন যাপনে অভ্যস্ত এবং নিজেদের মত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। কিন্তু যখনই পশ্চিমা মাপকাঠিতে তাদের বিচার করা হচ্ছে, তারা দরিদ্র বলে বিবেচিত হচ্ছে। আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে চিরাচরিত সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতা, নীতি-নৈতিকতা তথাপি মানুষের সহজাত মানবিক গুণাবলী। এভাবেই প্রাচীন সংস্কৃতিগুলো, যারা হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বুকে টিকে রয়েছে নিজের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে, তথাকথিত উন্নয়নের নাম করে পশ্চিমা শিক্ষা এদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ক্রমান্বয়ে দূষিত করা হচ্ছে তাদের আবহমান সংস্কৃতিকে। এভাবেই পৃথিবীর লোকজ জ্ঞানগুলো পশ্চিমা জ্ঞানের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে বিচিত্র সংস্কৃতি, হারাচ্ছে বিশ্বজুড়ে বৈচিত্র্যময় মানুষের স্বকীয়তা।

তবুও আমি শেষ পর্যন্ত দুটো পরস্পর বিরোধী মন্তব্যই করবো,

একটি হলো, 

জোহান হুইজিং এর

"আমরা যদি সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে চাই, তবে

একে অবিরত তৈরি করতে হবে '



অপরটি হলো ভি এস নঈপলের 

"সব সংস্কৃতিই চিরকাল একসাথে মেশানো "

আসলে 

. মানুষের সংস্কৃতির বৈচিত্রতার মাঝেই পৃথিবীর সৌন্দর্য বাস করে।



0 মন্তব্য(গুলি):