মেঘপালক কিছু সময় কবিতা পড়েছিল

১১:৪১ PM চিরশ্রী দেবনাথ 1 Comments


মেঘপালক কিছু সময় কবিতা পড়েছিল

চিরশ্রী দেবনাথ

"মেঘপালক "  বৃক্ষের মতো যুবক। কবিতা পড়তে বসেছে।  কিভাবে পড়বে? জানে না সে। কাম, প্রেম, শরীর দিয়ে না রক্ত, শ্রম, ঘাম দিয়ে না জ্যোৎস্না, শিশির, বৃষ্টি দিয়ে। কিন্তু সে পড়বে এবং পড়া শুরু হলো।
স্বাধীনতা যুদ্ধ নেই, কোন মন্বন্তর নেই, নকশাল আন্দোলন নেই, নারীবাদ সেই অর্থে সচকিত নয় আর। তাহলে আগত তরুণ কবির সম্বল কি? ব্যাপ্তি তার কতদূর?
কেন সেই বিরাট ক্ষুধা তো আছে নির্বিকার!  বেকারত্ব আছে, আছে রাজনৈতিক অরাজকতা, অর্থনীতির টালমাটাল, পারমানবিক শক্তির ঠান্ডা স্নায়বিক যুদ্ধ, সমাজের অন্তঃস্থলে বয়ে যাওয়া নিঃসীম ক্ষয়িত স্রোত। এই বিষাদময় স্রোত, অস্থিরতা তার সমগ্র বাঙ্ময়তা নিয়ে,  তন্ময়তা নিয়ে উঠে আসুক। সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র প্রবেশ ঘটেছে জনজীবনে, কবিতালেখকরা খুলে বসেছেন কবিতার আঁতুরঘরের নরম শরীর।
স্নেহ পাওয়ার আগে, আকার  নেওয়ার আগেই সেটা সহস্র স্পর্শে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শৈশবেই অকালপক্কতা ধারণ করেছে।
এক দিগন্ত বিস্তৃত মায়াবৃক্ষ তৈরী করেছে ফেসবুক। উন্নাসিকতা দেখিয়ে লাভ নেই, হতাশা এবং ভালোবাসা দুটোই এনে দিচ্ছে কবির কাছে। দুহাতে মাখো, গিলে ফেলো, পুড়ে যাও।

মেঘপালক দিনে আটঘন্টা খাবার সংগ্রহের জন্য কাজ করে।
পাঁচ ঘন্টা সে সংসার করে। তখন সন্তানকে পড়াশোনা শেখায়। স্ত্রীর বক্ষে ভরে দেয়

পরিতৃপ্তির ঢেকুর। বাজার থেকে তুলে আনে পদ্মবন, কলমী বিকেল, সুগন্ধি লেবু, রুপোলী মাছ, কচি ঢেঁড়স, একফালি মিষ্টি কুমরো। তারপর সে ঢুকে যায় কবিতায়। 



বহুদিন ধরে পড়েছে বিংশ শতক, অষ্ট্রেলিয়া, চিন, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন, তুরস্ক, নাইজিরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, জার্মানি, স্পেন,  ইটালি, গ্রিস, পর্তুগাল ইত্যাদি এবং বাংলা কবিতা। 

 
"ওরা বলে তরুণী এই দেশ, কিন্তু ওরা মিথ্যা বলে :
এই শেষ ভূমি জনমানবহীন,
জীবন পাল্টাতে পারবে না এক মহিলা, একটি স্তন
এখনও কোমল কিন্তু শুকিয়ে গেছে  তার গর্ভাশয়। "

...অ্যালেক ডারওয়েন্ট  হোপ। ( অষ্ট্রেলিয়া )

প্রতিদিন একবার করে মেঘপালক কবিতার এই    জলন্ত গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে, তখন তার গা রী রী করে, সমুদ্রে ডানা ঝাড়ে, দুরন্ত ঝড়, মেঘের ধূম্র জটা, খুলে খুলে পড়ে বজ্রের হাঁকডাকে। ( সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন থেকে নেওয়া ), 


সেদিন হয়তো সে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে বেরিয়ে আসে, কারণ মরেছে বিপ্লব, হেরে গেছে  বিপ্লবীদের স্বপ্ন, তারা এখন নীল টাকা তোলার জন্য ব্যস্ত, সত্যিই তথাকথিত বিপ্লব বাদ দিয়ে দিলে কবিতার জন্য কিছুই পরে থাকে না আর। এখন তো দুরন্ত পুঁজিবাদ। বিশ্বজোড়া বাজার। ঝাঁকে ঝাঁকে কর্মব্যস্ত যুবক যুবতী। আবার  উন্মুক্ত বেকারত্ব। প্রেম আর প্রেমহীনতা দুটোই খুব সহজ, হয়তো এতোটাই সহজ যে ভেতর ধ্বংস হয়ে গেল যে কবিতার জন্ম হয় তা সকলের কাছেই একরকম মনে হয়, মানে চেনা জানা কবিতার মতো ।
এখন চাকরি আছে, তারপর হঠাৎ করে নেই। তাই ক্ষুধা, তাই যৌনতার খোলামেলা পসরা সহজেই। সবকিছুর সহজলভ্যতা কবিতাকে কোথাও কোথাও গদ্য করে দিচ্ছে।

অন্তঃমিল কে ভেঙেচুরে করে দিচ্ছে ঋজু, অমিলের তুর্যনাদ। মুছে যাচ্ছে যেন তথাকথিত কবিতার বিশুদ্ধতা। মুখের ভাষা কবিতা হয়ে গেলে মুশকিল, যে ভাষায় জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, বিনয় মজুমদার,  কথা বলেছিলেন সেসব এখন নেই। অবশ্য সেসবই যদি থেকে থাকে তবে তা কবিতার ব্যর্থতা। উত্তরাধিকারীকে তাহলে দুর্বল বলতে হবে।
এই হারিয়ে যাওয়া ভাষ্যটাই কবিতার ভবিষ্যৎ। অতুলনীয় সৃষ্টিকে দূরে সরিয়ে  কলম তোলার স্পর্ধা দেখাবেন যে লেখক, তার কবিতা পড়ার জন্য জেগে থাকে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার পাঠকেরা। 
তরুন কবির মুখের দিকে চাইতে ভয় করে। মেঘপালক, আসলে তার বয়স নেই। কবিতা পড়তে পড়তে বুড়ো হয়, কবিতা পড়তে পড়তে বয়স কমিয়ে সদ্য গজানো খোঁচা খোঁচা দাড়ির কাছে ফিরে সে।

“আমি একবার এক কাকতাড়ুয়াকে বলেছিলাম   ‘
"একলা এই জমিতে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হও তুমি! "

আর সে বলল, ""ভয় দেখানোর    আনন্দ এত স্থায়ী ও গভীর, আমি ক্লান্ত হই না কখনও। "   

...জিবরান খালিল জিবরান (জন্ম, লেবাননে, মৃত্যু বস্টনে)। 



মেঘপালক কবিতার এই বিক্ষুব্ধ জমিনে এসে ক্লান্ত হয় না। তার কাছে কবিতার মতো রহস্য কিছু নেই, জটিল দুর্বোধ্য কবিতার পরতে পরতে থাকে গ্রামীন জীবন, থাকে সীমানা অথবা সীমান্ত নিয়ে ঝগড়া, থাকে বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে নিবিড় আত্মীয়তা। তাই দুর্বোধ্য কবিতা চিরকালীন। তার ব্যপ্তি  এতটাই সুমধুর, যে মনে হয় এই প্রাঙ্গনে আহার নিদ্রা ছাড়া আছে অমিয় আসঙ্গবোধ।  


এই যেমন কবি মিলনকান্তি দত্তের একটি কবিতা যখন মেঘপালক পড়ে, তার  মনে হয়, কি এই কবিতার অর্থ, কোথায় তার অতল,

"বিমুখ ব্রহ্মাস্ত্র ফিরে আসছে, অঙ্গীকার করে নিতে হবে।
দিনের মরামুখে হন্তারক ভল্লের ফলক
লতদূর্বা ভেসে আসছে নদীর টানে, মায়া জানে
কবচ খুলে রেখেছি,
এসো মন্ত্রের সাধন।
নড়বার চেষ্টা করছি না একদম, যদিও জীমূতবাহন
আমিই অস্ত্রী এ কথা রাষ্ট্র হয়ে গেছে। "

এ লাইনগুলো কি রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক। মনে তো হচ্ছে  নিবিড় সক্রিয় রাজনৈতিক মানসিকতা, সমাজশ্রয়ী। "


এখন মেঘপালক সমস্ত চিন্তাভাবনা থেকে সরে গেলো, কারণ কোন কবিতা রাজনৈতিক না সামাজিক, কখন কি ভাবে পড়তে হবে তা আবৃত্তি শিল্পীরা ভাববেন, কারণ সেটা তাদের দেখতে হয়, 

আর যিনি নিছকই কবিতা পড়বেন সে পড়বে এমনি এমনি। শুধুই এমনি। নাহ্ আর কোন ব্যাখ্যা নেই।


তাই এইমুহূর্তে মেঘপালক তরল, নিখাদ সোনা। সে এখন নিশ্চিন্ত মনে কবিতা পড়বে। 



"কিন্তু আমরা ভালোবেসেছি, এ কেমন ভালোবাসা!
আমরা সকলেই ভালোবেসেছি কিছু ফুল কিছু পাখি আর বন্দুক,
ফুল পাখি আর বন্দুক সবই মেয়েমানুষের দিকে গেছে,
মেয়েমানুষ কোনদিকে গেছে আমরা কেউ জানি না, আমি জানি না, “  (কবি সেলিম মুস্তাফা ”

রচনাকাল, ১৯৮২ )


এইখানে মেঘপালক চুপ করে থাকে, ভাবে আস্তে আস্তে কি মেয়েমানুষ শব্দটি তার অস্তিত্বকে স্বাধীন করতে পারবে। মানে শুধু মেয়ে বলে। 


যেসব শব্দ জনসমাজে প্রচলিত সেগুলোই তো আসলে জীবনের শব্দ। লেখায় এইসব শব্দ না থাকলে কি তা জীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সেলিম মুস্তাফার অনেক পরে যে কবি কবিতা লিখতে আসবেন, তিনিও কি লিখবেন মেয়েমানুষ, বিধবা, বাঁজা ইত্যাদি ক্লাসিফিকেশন।


“এখন ভাঁটার সময়, সমুদ্র বহু দূরে গেছে।

একটু আগেই অফিস পালানো প্রেমী

বান্ধবীকে নিয়ে জুতো হাতে হেঁটে গেছে আড়ালের খোঁজে।


আমরাও রেখে গেছি পদচ্ছাপ বালির প্রলেপে,

জোয়ারের জলে মুছে গেছে সেই সব ভিজে ছাপ,

আর তীব্র ঘৃণা, হিংস্র প্রেমের কাহিনী। “ ( কবি অমিতাভ কর )।


এই তো গুলিয়ে গেলো আবার সব, কি সব হিংস্রতার কাছে কবি চলে গেলেন, মেঘপালক কবিতাটি আরেকবার পড়ে ভাবলেন, আসলে ঘৃণা নয় ভালোবাসা, হিংস্র প্রেমের কাহিনী নয়,

প্রেমিকের অসহায়তা।



“আমাদের স্কুল জীবনের নানা গল্প,
'তারপর, সুবল কেমন আছে, ''মোহিত হঠাৎ চলে গেল
এইসব অর্থহীন কথা বিনিময় ক্রমশই
অনভ্যস্ত সঙ্গমের মতো হয়ে উঠে
আমরা আড়ষ্টভাবে অন্ধকারে খুব চুপচাপ বসে থাকি,
এ দেখাই শেষ দেখা, দুজনেই জানি।”( অমিতাভ কর )


আর একটু পড়া দরকার। নাহ্, দার্শনিক হতে চাইছে না এই মন। 


"আমি আপনাদের কাছে আসিনি
আমি খুঁজছি আমাকেই
আজ সকাল থেকে আমি গায়েব
কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না আমাকে
সোস্যাল সাইটের কল্যাণে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে আমার নাবালক ছবি
ছিঃ ছিঃ! কী কান্ড ভাবুন!
সিনিয়র সিটিজেন হবার পরও আমি নাবালক রয়ে গেলাম
আর আপনারা হয়ে গেলেন বোবা শালগ্রাম " (কবি সেলিম মুস্তাফা ),


বাস্তবায়ন, সুরালিয়াস্টিক যাদুগ্রন্থি পথে ফেলে দিয়েছেন কবি, ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছে। 



“অপূর্ব বিকেল নামছে |
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে |
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় |
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে |
ডাকতে সাহস হয় না তারও |
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন |
যদি ঘুম ভেঙে যায় তাঁর!” ( জয় গোস্বামী )


দুঃখের এমন কবিতা যতো কম লেখা হয় ততই ভালো। আরো তো কত কবিতা আছে সুখের, প্রেমের কিংবা সংগ্রামের, পুত্রহারা মাকে নিয়ে কেন আমরা লিখি, কি লাভ লিখে। পুত্রহারা মা কি কোনদিন এই কবিতা পড়বেন, তবে হ্যাঁ হয়তো তিনি কোনদিন আবার একটি গান শুনবেন, এবং সেই গানটি হতে পারে, ” যখন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে “ অবশ্য এটা মেঘপালকের অনুমান। বিক্ষোভ।


দীর্ঘদিন ধরে কবি একটি কবিতা রচনা করেন। 

সেই কবিতা এতটাই দীর্ঘ হয়ে যায় যে হয়তো বিষাদও একসময় ভাষার জোগান দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পরে, হোক না কেন, কবির তাতে কি? 




“অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
–’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।” ( জয় গোস্বামী “)




মেঘপালক এখন একটি প্রেমের কবিতা পড়তে চায়। উদ্দাম, উচ্ছসিত, নিবিড় প্রেমের কবিতা, কোথা থেকে পড়বে, নতুন, পুরনো বা  কোন তরুন কবির, বেশি এডিট করা নয়, এখনো কাঁচা হাতের সাবলীল স্পর্শ লেগে আছে তাতে। 

উঁহু, তার আগেই হুরমুড়িয়ে আরেকটি কবিতা এসে গেলো সামনে। পড়া যাক,


“মেয়েটির ইচ্ছে নেই, চাহিদাও নেই।
ব্যক্তিগত কিছু দুঃখ, অস্বচ্ছতা কাটানোর জন্য সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে, ফোন নিয়ে, বাধ্যতামূলক
পড়াশোনা নিয়ে, মজা ক’রে
দু-একটি ছেলের সঙ্গে নির্ধারিত বন্ধুত্ব পাতায়


আমি এই মেয়েটিকে ঘটনাচক্রেই বলা যায়
নিকটে পেয়েছি। তার ঠোঁটে, পাতলা কপালের তিলে
ভূকম্পন টের পেয়ে কয়েকটি দুপুর কাটিয়েছি

তবুও, বুঝেছি, কিছু ব্যক্তিগত কষ্ট আর শোক
ভেতরের দিকে তাকে টেনে রাখে, পুরো খুলতে দেয় না”  ( কবি সুমন গুণ )


এটা কি আর তেমন প্রেম, তবে এই যে পুরো খুলতে দেয় না, ঠিক এটাই, এটাই। পুরো খুলে যাওয়ার পর কবিতা আর প্রেম ক্লান্ত হয়ে যায়, আর পড়তে ইচ্ছে করে না, আর ঘাঁটতে ইচ্ছে করে না, এই সময় মেঘপালকের মনে হয়, কয়েকটি লাইন গত সন্ধ্যাতেই তো সে ফেসবুকের পাতায় দেখেছিল,

“তোমার চুম্বনে আজ মায়ার বদলে ষড়যন্ত্র বেশি ছিল।
এসো, পুনরায় চুম্বন করি।” (কবি তমালশেখর দে। )


আবার,


“কোনো কোনো রাতে আমাকেও যেতে হয় রত্নগুহাটির কাছে,
দরজা জানলাগুলো বন্ধ হয়ে যায়,
মৃদু হাওয়া বয়
দ্রবীভূত মায়ার ভেতর বসে থাকে সন্তের আকাশ।”  ( কবি প্রদীপ মজুমদার )


কবির আকাশ সবশেষে সন্তের আকাশ। যত কবিতার কাছে আসা যায়, মানুষ তত বৈরাগ্যময় হয়ে ওঠে। কারণ তার সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা মানুষকে জীবন বিমুখ করে। রহস্য ফুরিয়ে গেলে আর কিছু থাকে না যে। 


মেঘপালকের সমস্য হচ্ছে তার তত্ত্বজ্ঞান কম। কিন্তু সে খুব কবিতা পড়তে ভালোবাসে। গল্প নয়, উপন্যাস নয়, কবিতা। কবিদের দেখার চোখ তার ভীষণ প্রিয়। এই যে অজস্র কবিরা অনবদ্য 

রকম ভাবে জীবন সায়াহ্ন তুলে আনেন, এটাই আশ্চর্যের। ভালো কবিতা, খারাপ কবিতা ইত্যাদি। চিরকালীন কবিতা। সতন্ত্র ধারার কবিতা। একটি কবিতাই কেবল কোথাও নেই সেটা হলো অপ্রেমের কবিতা।

হাজার বছর পেরিয়ে এসেও কবিতা প্রমাণ করেছে প্রেমের কবিতাই সবচেয়ে মনলোভা। তার একটাই আদিমতম কারণ, সেটা হচ্ছে মানুষ সবসময় ভালোবাসতে চায়। ভালবাসা পেলে দারিদ্র্য সুন্দর হয়ে ওঠে। অভালোবাসায় ধনবানও হিংস্র হয়ে যায়, খাদ্যলোভী হয়ে ওঠে।

তাই কখনো কখনো মনে হয় এই যে অধিকাংশ তরুণ কবির প্রথম কবিতার বই প্রেমের কবিতার হয়, কারণ তার মনে তখন শুদ্ধতা থাকে। সকল সারল্য  নিয়ে সে লিখতে এসেছে, তারপর আস্তে আস্তে অবিশ্বাসের আর মিথ্যায় ধাক্কা খেতে খেতে তার কবিতা অন্যপথে, অন্য গল্পে যায়। 


মেঘপালক দায়িত্বহীন কবিতা পাঠক। যার উদ্দেশ্য শুধু “ভালোলাগা “। আর ভালোবাসা। দায়িত্ব নিয়ে কবিতা পড়তে সে পারবে না। ভালো না লাগলে দুঃসময়ে লেখা প্রতিবাদের কবিতাও তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। হয়তো তখন সে পড়ছে নিছক একটি রোমান্টিক কবিতা। আর কবিতার কিছু ফাঁকিবাজি সত্তা রয়েছে। বহু কবিতাইই  সবসময় সমকালকেই চিহ্নিত করতে পারে,

কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যের একটি লাইন,


“আমাদের বিবর্ণ জীবনে

      পৃথিবী এলো না কোনোদিন।

তারে চিনি

    ভূগোলের জটিল রেখায়। “

     


মেঘপালক মন্দাক্রান্তা সেনের কবিতা পড়তে ভালোবাসে। এই যে গোধূলি ক্রমাগত গাঢ় হয়ে আসছে, এসময় মন্দাক্রান্তার কবিতা,  প্রেমে হেরে যাওয়া সূর্য বালকের মতো, তার কিন্তু এইসময়ের মন্দাক্রান্তার লেখা ভালো লাগছে না, এই কবি এখনও তুমুলভাবে কবিতার মাঠে প্রান্তরে আছেন, তিনি কম্যুনিস্ট ভাবধারায় বিশ্বাস করেন। কিন্ত জীবনানন্দের  বলা থেকে ধার নিয়ে বলতে হয়, মানুষের কবিতা, জনগনের কবিতা, সংগ্রামের কবিতা বলে তিনি এখন সুনির্দিষ্ট নাম দিয়ে রাজনৈতিক কবিতা রচনা করছেন, সেগুলো আসলে মানসিক অবস্থার ব্যায়াম মাত্র, কবিতা নয়। বোধের অবনমন ঘটিয়েছেন ইচ্ছাকৃত ভাবে। হয়তো তিনি মনে করছেন এ সময় কোমল উচ্ছাসের নয়। এসময় নয় সেই কথা বলার, যখন তিনি বলেছিলেন,


“তোমার চোখের মধ্যে দীর্ঘ একটি পথ থেমে আছে।

এতদিন দেখতে পাইনি, আজ দৃষ্টি ফিরিয়েছ

চোখে পড়ল সেই পথ। মাঝে মধ্যে, কষ্ট পাওয়া বাঁক।

পথের দুপাশে মাঠ। শস্য ক্ষেত। থেমে আছে তা ...ও ( পথ)  “, কবি মন্দাক্রান্তা সেন।



 তিনি তো অনবদ্য অন্য কবিতায়, অন্য বোধে, যে বোধ একজন নারী কবির বাচনে দুর্মর স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, সেই যে তার কবিতা খানি, 


“আমি কারও চোখ দেখলে বলে দিতে পারি
            তার সঙ্গে প্রেম হবে কি না
                    আমার কখনও
      রাস্তাঘাটে ট্রামেবাসে বন্ধুর বাড়িতে
            মাঝেমধ্যে চোখ গিঁথে যায়
                      অরক্ষিত মুখে

    আমি জানি তাদের মধ্যেই কোনােজন
          আমাকে ভাসান দিয়ে যাবে
                    লােনা সর্বনাশে
        অনিবার্য দুপুরের মাটি ভেদ করে
          উঠে আসবে ঘামে ভেজা পিঠ,
                    কোনাে একদিন

      এসব এখনই আমি বলে দিতে পারি
                যখন, কেবলমাত্র তুমি
                    সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে…”



আরে হঠাৎই মেঘপালকের মনে পড়ল আরেকটি তুমুল কবিতা, অনেকটা আশ্লেষের মতো,


“সমস্ত ক্রিয়ার শেষে স্বর্গবাসনা যেই তৃপ্তির মুখে

তিনি ঠেলে উঠলেন ...আমাকে অবাক করে সমস্ত বীর্যটুকু ঢাললেন রঙের বাটিতে 


ঘন গাঢ় রং দিয়ে যুবতী ছবি তিনি সম্পূর্ণ করলেন। “ ( শ্বেতা চক্রবর্তী)  




মেঘপালক মাঝে মাঝে মেঘমেয়ে হয়ে যায়, অস্ফুট স্বরে তখন সে এই কবিতাটি আলতো করে তুলে নেয়,

“বাড়ি তুমি কোন জন্মের স্মৃতি
বাড়ি তুমি না ছোঁয়া এক বোধ
ছোঁব বলে যেই মেলেছি হাত
রাস্তা জুড়ে কিসের অবরোধ?

তোমায় আমি মা ডেকেছি তাই
মা ই হোলে এবং ভগবান
করাত জুড়ে কাঠের কারুকাজ
গাছের কোন নেই তো অভিমান !” ( কবি মৌ সেন )


বড়ো বেশী অভিমান মেয়েদের এই বাড়ি নিয়ে। একমুহূর্তে মনে গোটা বাড়ির সবকিছুই তার, পরমুহূর্তেই মনে হয় সে পরিযায়ী। সব মেয়েদের  একটি বাড়ি দরকার, করুক সেখানে নক্ষত্রের বাগান, নকশাল আন্দোলন, কিংবা নক্সী কাঁথার মাঠ।


 আরেকটি কবিতার বই তুলে নিল হাতে মেঘপালক, এক চিলতে বই ঘুলঘুলির রোদে আক্রান্ত, তবে মাঝি ও বৈঠা আছে। 


 কবি প্রবুদ্ধ সুন্দরের সেই স্তবকটি , যেখানে তরুণ কবির জন্য রাখা আছে এক গন্ডুষ, এক গভীর খাদ অপেক্ষা।


“কোনো এক গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময়

কেউ যদি বলে ওঠে, এই গ্রামে একটি লাজুক তরুণ বাংলা কবিতা লেখে 

এই কথা শুনে আমি ভাবসমাহিত হই।

তাঁর দর্শন পেতে গেলে নির্জন কাঁদতে হয় খুব

গত তিন দশক তোমার জন্যে আমিও কি লুটিয়ে কাঁদিনি?

তোমার বিগ্রহ তবু আজও অধরাই থেকে গেল

যা কিছু দিয়েছে ধরা, মায়া ও বিভ্রম “


কবিতা এমন এক সাম্রাজ্য যার সম্রাট মুকুটহীন, দীন। অথচ অহংকার আছে তার,


“কেউ যাহা জানে নাই ...কোনো এক বাণী

আমি বহে আনি ;

একদিন শুনেছ যে সুর

ফুরায়েছে ...পুরনো তা ...কোন এক নতুন কিছুর

আছে প্রয়োজন,

তাই আমি আসিয়াছি ...আমার মতন 

আর নাই কেউ। ...জীবনানন্দ দাশ   ( ধূসর পাণ্ডুলিপি)  


চল্লিশ বছর একটি ক্রাইসিসের সময় যেকোন সৃজনশীল মানুষের কাছে। সে কি তখন তরুণ কবি, না চুপি চুপি তার সৃজনকাল দাঁড়িয়ে গেছে স্তব্ধতার কাছাকাছি। আলোকের মতো সে আর পতঙ্গপ্রিয় নয়,


“ চল্লিশ পেরিয়ে গেলে , ছুরি হাতে উঠে আসে কুয়াশা ও শীত
তাড়িয়ে তাড়িয়ে নেয় স্তব্ধতার মাঠে । নিঃসঙ্গ বুদ্বুদ আর
তীক্ষ্ণ ফলাটি ঘিরে , মায়াবরফের প্রেত চুইয়ে নামছে
অই আকৃতির কল থেকে , শূন্যতার চেয়ে কিছু বেশি
#
মনে পড়ে , কারা যেন পাশে ছিল একদিন
যেন কার ভেতরে পৌঁছুতে
ছ`হাজার মাইল বেগে ছুটেছে এঞ্জিন কান্না ,
উৎসাহ , ভাঙা মন , অসহ্য বেদনা
#
আজ আর কিছু নেই । শব্দহীন , দিনের গভীরে
ঠান্ডা হিম তীক্ষ্ণ ফলাটি একা ছুটে আসছে , দ্রুত 

“ 

...কবি পল্লব ভট্টাচার্য 



কবিতা কি সবসময় গভীর, গম্ভীর, গূঢ়ার্থময়! কবিতা আসলে একটি উদ্ভাস। আলোর উদ্ভাস অথবা অন্ধকারে নদীর ঠান্ডা বাতাসের মতো, শেষপর্যন্ত প্রাণে গান বা  সুর না পেলে মেঘপালক আরাম পায় না। 


কবি শঙ্খপল্লব আদিত্যর কবিতার লাইনগুলো মেঘপালকের চিন্তাভাবনার বিরোধী, কিন্তু তবুও তাঁর গদ্য ও পদ্যের আলোকসভায় সে একদম ব্রাত্য নয়,


“পঞ্চমুখী জবা ও শ্বেতোৎপল আত্মার অনাঘ্রাত চাষি ও আতপ পায়েশ শিকারি

পুরুষের অব্যর্থ নিশানা ও ভাদ্রের মরা গাছের ডিম কুসুমের চিলমারি দৃষ্টিপাত “


বাব্বা!, কি জানি হয়ে গেলো মেঘপালকের মনমাঝে।


একটু রমণীয় ভাব জাগছে মনে, মেঘপালক ক্রমেই দামাল হয়ে উঠছে। কোন ধারাবাহিকতা নেই তার। কোন কবির কবিতার পর কোন কবির

কবিতায় সে যাবে, ভাবেনি কখনো। 


“আজ এতদিন পরও তোমার স্বভাব বদলায়নি, গোল বারান্দায় তুমি উদ্ভিদের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে ভালোবাসো।

বাতাস নরম হলে হেলে পড়ো, ঘুমের দিকে যেন সরে যাও

চোখ হয়ে আসে আধবোজা, রমণীর জীবদ্দশায়। “ ( কবি স্বপন সেনগুপ্ত) 


এখন বোধ হয় অনেক রাত। কত? দুটো বেজে একত্রিশ মিনিট। আর কয়েক মুহূর্ত পরেই ব্রাহ্মমুহূর্ত। ব্রাহ্মমুহূর্ত আসার আগে কবি অশোক দেবের একটি কবিতা পাঠ করা জরুরী। 


“সব জল মরে যাচ্ছে, বুজে যাচ্ছে সকল পুকুর।

এত বাড়িঘর, এতো আনাগোনা

পুকুরের নীরব প্ররোচনা এরা জানেনা।

পুকুরের আত্মার সাথে বুজে যাচ্ছে শুভ্রাদির প্রত্নবহুগামিতা “



মেঘপালকের মনে হয়, এই যে কবিতাময় জগত,

তার প্রকৃতই কোন সীমারেখা নেই। শিল্পের অথবা সৃজনের একটিই শর্ত সর্বোৎকৃষ্টতা। এই মার্গে পৌঁছুতে হলে কত কি যে হয়, মেঘপালক তা জানে না, সে নিবিড় হয়ে পড়ে কবি অণিমেষ সিংহ কিংবা নীলাঞ্জন সাহার এইসব কবিতা পংক্তি স্তবক

“অল্পে কিছু হয়না প্রজাপতি!
ভালোবাসা অথবা ঘৃণা কানায় কানায় দিও।


অল্পে কিছু হয়না প্রজাপতি।
সুখ অথবা যন্ত্রণা, কানায় কানায় দিও।
….
…..
ভালো একটা দোয়েল পাখি দেখলে বলো আমাকে,
ভালো একটা আড়বাঁশি;
সুখ সংবাদ দিতে পারে এমন একটি গাছের শেকড়ে প্রেম দিও।”  ( অনিমেষ সিংহ )



কবিতার অক্ষরগুলো আসলে কোথা থেকে আসে, নির্মান অথবা অনির্মীত দুটোর দিকেই কবির আসক্তি, এই যে এক কবি লিখে রেখেছেন,


“কবিতা লিখি না আমি
রাতে ঘুমোতে যাবার আগে প্রতিদিন
খোলা ছাদে পেতে রেখে আসি খাতা
মৃত নক্ষত্রের আত্মারা আত্মকথা লিখে যায়
কোনোদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে লিখতে বসে বৃষ্টি
কখনও বা  নির্বাক শিশিরের দল ,
কিম্বা কোন রাতজাগা পাখি !
আমি অবশ্য এসবের কিছু জানি না
নিশ্চিন্তে ঘুমাই একা  ঘরে “ ( কবি নীলাঞ্জন সাহা)


একটি কবিতা, কি তার টান বাব্বা ! 


“অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী! “ ( কবি আবুল হাসান) 


কাব্যের যে নিজস্ব নৈঋত বা ধৈবত আছে, প্রচুর গলা সাধা শেষেও হয়তো সেই সব স্বপ্নের লাইন আকুল কালবৈশাখীর মতো নেমে আসে না, আবার কারো কারো কাছে আসে হঠাৎই অবলীলায়। তবে এইসব স্বপ্নময় কবিতা একজন বিখ্যাত বা অখ্যাত কবির তিন চারটির বেশি থাকে না। তা নিয়েই মেঘপালকের মত বাল্যখিল্য কবিতা পাঠকেরা বুঁদ হয়ে যান। 



“আমরা কি প্রত্যাখানের দীক্ষা নিয়েছি তাই ভুল হয়ে যায়  বৈশাখ নির্মানে ?
আমাদের  ধর্ম কি আগুন, বহুবার আমিও চেয়েছি ?

তুমি হাড় গোড়ের গল্প কার সাথে কর?   
কতদিন দোতরার ভিতর আমিও  একা 


পাশের নদীটির তীরে বুঝি বাউলপাড়া, কে আসে তোমার কাছে রোজ জোনাক পাপ শিখতে ?   
আমার তো জানা নেই ইশারাবিদ্যা

 তাই দুর্বোধ্য হাসি ঠোঁটে দেখি তোমার মেধাবী হলুদ বই ।” ( কবি কচি রেজা, বাংলাদেশ) 


কবিতার একটি হৃদয় থাকে, এখানে হৃদয় হচ্ছে এই দুটো লাইন, 

“তুমি হাড় গোড়ের গল্প কার সাথে কর?

কতদিন দোতরার ভিতর আমিও একা “


সেই একটু একটু করে একা হয়ে যাওয়ার গল্প, যখন ফিরে পেতে ইচ্ছে করে, আবার সেইসব অভিমান করে চলে যাওয়া মানুষদের, যাদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কোন একদিন , এমনকি যাদেরকে ভালো লাগে না মোটেই তাদেরও।  খুব ভেতরপানে ঢুকে পড়ে দেখতে ইচ্ছে করে সেও কি ভাবে আমারই মতো, আমার মত সংগোপনে।  


কবিতার কাছে এলে আর ফিরে যাওয়া যায় না, এটা একটা মোদ্দা কথা। এখন প্রায় সকাল হতে চলল। মেঘপালক আস্তে আস্তে তার শরীর থেকে মেঘের ডানা খুলে ফেলছে। তার আজকের মতো কবিতা পড়া শেষ। আবার আরেকদিন, যেদিন খুব কবিতা পাবে, প্রেমের মতো, নারীর মতো অথবা শিশুর মতো, সেদিন সে খুঁজে বের করবে ইচ্ছেমতো কবিতা, দশকের সঙ্গে দশকের কোন ধারাবাহিকতা না নিয়ে, ঝুপ করে ডুব দিয়ে টুপ করে তুলে আনা কবিতা। মেঘপালকের ঘরময়  উড়ছে বিমূর্ত কবিতারা, আর ডানা খুলে ফেলা কবিতা পাঠকটি ভাবছে তাকে এখন মানুষ হতে হবে, আসন্ন গ্রীষ্মদিনে বইমেলায় যেতে হবে, ঢুকে যাচ্ছে একটি স্বপ্নের ভেতর, বিড়বিড় করে বলছে আপনমনে ,


“বইমেলায় যাবো কোনদিন। সেদিন খুব ধুলো উড়বে।  বিকেল শেষ হওয়ার গন্ধ। একটি স্টল, অনেক বই। আমি ঢুকতেই, হঠাৎ তাক থেকে দুমদাম কয়েকটি বই পড়ে গেলো । তুলতে গিয়ে দেখি, কবিতার বই, অজানা কবি,  কোনদিন নাম শুনিনি তো তার ... সোশ্যাল মিডিয়ায়, লিটলম্যাগে বা অন্য কারো মুখে ! শীর্ণ বইখানি, নাবিকের দীর্ঘ... শ্বাসের মতো প্রচ্ছদ। মূল্য দিতে হলো বাষ্প মুদ্রায়।  নিয়ে এসেছি, না চেনা অশ্ব দিয়েছে হ্রেষা রব, খুড়ের চূর্ণ ধ্বনি । বাড়ি এসে বই খুলতেই দেখি সমূহ আগুনের পংক্তি, জলের অক্ষরে লেখা, সেই থেকে হেরে বসে আছি কবিতার কাছে “।



তথ্যসূত্র : বিভিন্ন বই, ফেসবুকে কবিদের প্রোফাইল, লিটিল ম্যাগাজিন ইত্যাদি। 








1 টি মন্তব্য: