হেমন্ত

১১:০৭ AM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments


     

যা কে ঘৃণা করি তাকে অকপটে বললাম
যা কে ভালোবাসি, তাকে বলে দিলাম সরাসরি
যাকে ছাড়া বাঁচতে চাই না, তাকে বললাম আমরা দুজনে অগাধ
তারপর সব শুকিয়ে যেতে লাগল, বুঝলাম হেমন্ত এসেছে 
বুঝলাম ফসল পেকেছে, যদিও বৃষ্টি হয়েছিল অসময়ে
তবুও ধান পূর্ণগর্ভা হয়েছে, আমার কৃত পাপ খুব সাবলীল
পৃথিবী ধারণ করেছে,  ভিজিয়ে দিয়েছে চেনা অক্ষ কয়েকবার

কত সহস্র পরিক্রমা শেষেও প্রতিটি উৎসব নতুন থাকে
নির্জন বাড়িতে একাকী মানুষ ছোট্ট একটি দীপ জ্বেলে দেয়
সংক্রান্তির হিমস্নান শেষে কোনও এক পূর্বপুরুষের মনখারাপ
ছায়ার মতো নেমে আসে সকল জীর্ণতায়, ম্লান আলোর কাছে 

হেমন্ত আমাদের সেই পুরনো বাড়ি, বয়ামে জমানো ঘি, অকারণ অসুস্থতা, বৃদ্ধকাল 
এই বিকেলগুলোতে আমার খুব ভয় করে 
মনে হয় যদি মা বাবার কথা, বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়, 
কিংবা ফেলে আসা অপমান, ঘোলাটে চাঁদের সেই পনেরদিন

গান শুনি।  মনে হয়, শিল্পীর সেদিন দুঃখ হয়েছিল
হাত কেটে গিয়েছিল নতুন সেতারে, 
তখন ভাবি কোথাও ভীড় হোক খুব,  হোক বাঁদর নাচ
ময়লা নোট সব কুয়াশার মতো নীচে পড়ে যাক
কুড়িয়ে নিতে গিয়ে বাঁদরের মালিক আচমকা সম্রাট
হেমন্তের সন্ধ্যায় সে শহরে কানাঘুষো ছড়িয়েছে,
ঢেলেছে কি এক মদ, অন্ধ মানুষেরা জেগেছে হঠাৎ  

 বেকারজীবন ভুলে চমকে উঠেছে গলির ছেলে 
হারানো গীটারের খোঁজ হোক না হয় আরো একবার

"এই রুমকি! রুমকিইই ...জমেছে কেন তোর চর্বি !"

হবে না কি বদছেলেদের আড্ডা, কিছু বারান্দা যেন খুলে    যাচ্ছে গোলাপের মত ...চোরা বারুদ গন্ধ। 

জরাগ্রস্থ এক ক্যানভাস ছাড়া হেমন্তের আর কোন চিঠি নেই
এইসব দিনে আমাদের কল্পিত ঝগড়া হয়, কম অভিমান, 
গভীররাতে দুর্বল নিম্নচাপে ঝড় তার চিবুক কামড়ে ধরে, 
তারপর পাতা ঝরারও সময় আসে, ক্লান্ত হয় সন্ধিস্থল


শহরের  বেঁচে যাওয়া একটি রিক্সায় 
কাল সকালে  আবার বাজুক চোঙা মাইক
হলে এসেছে রেখা অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা
আমিও তখন বড় হয়ে গেছি, চলছিল অসময়
আসলে সাতানব্বই এ তো শাহরুখ হিট ছিল
বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল সিনেমা হল দু একটি, কেন্দ্রে তখন জোট সরকার, মন্দা অর্থনীতির শুরুয়াৎ

বন্ধ কারখানার সামনে একটি মেয়ে বসে আছে    
অপেক্ষার পর আর একটি অপেক্ষা শুরু হয়েছে
হয়তো এই  হেমন্তের পরই পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে দীর্ঘতম
শীতকাল    
মেয়েটির গালে প্রাচীরের ছায়া, 
আর কোনদিন কি ও  সমুদ্র দেখতে যাবে না, কিনবে না ঝিনুকের মালা ! 


একজন পুরোহিত আগুন খুঁজতে বেরিয়েছিল ছোটবেলায়
রাস্তার দুপাশে তার দুশো একশ ধার হয়েছে কত !

ফেরত দিতে হয় কে বলেছে? 
কিছু ঋণ রেখে যেতে হয়... ধূসর ঋতুর পোস্টার এই, জানো না?



@ চিরশ্রী দেবনাথ



 


 

0 মন্তব্য(গুলি):