জম্মু কাশ্মীর রি অর্গানাইজেশন বিল
জম্মু কাশ্মীর রি অর্গানাইজেশন বিল
কেউ বলছেন ঐতিহাসিক, কেউ বলছেন কালো দিন। কিছুদিন ধরেই কাশ্মীরে প্রচণ্ড উত্তেজনা বিরাজ করছে, অবশ্য কাশ্মীর সবসময়ই কিছু না কিছু উত্তেজিত থাকে, তবে যেভাবে হঠাৎ করে চরম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো, অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হলো, সকল পর্যটকদের ফেরত পাঠানো হলো, তাতে একটি জিনিসই স্পষ্ট হচ্ছিল, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে চলেছে এবং সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান অবশেষে বিশেষ ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ এ উঠিয়ে নেওয়া হলো, এখন থেকে কাশ্মীর আর বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পাবে না, একই জাতীয় পতাকা এবং এক সংবিধানের আওতায় এলো কাশ্মীর।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কোন নিয়মের হঠাৎ পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবেই মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ভালো না খারাপ হবে মানুষ ভেবে পায় না। আমারো তাই মনে হচ্ছে। কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থান কাশ্মীরের কি হবে এখন। আপাতত চলতে থাকবে মতামত, পাল্টা মন্তব্য, যুক্তি তর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।
বর্তমানে যা হচ্ছে, কাশ্মীর হারালো পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা, জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখ দুটো আলাদা আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে। সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের কথা ভেবে জম্মু কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রাখা হলো এমনটাই ব্যাখ্যা সরকারের। আর দুর্গম লাদাখ অঞ্চলের থাকছে না কোন বিধান সভা। জম্মু কাশ্মীরে থাকবে না কোন রাজ্যপাল। অর্থাৎ জম্মু কাশ্মীর হচ্ছে দিল্লীর মতো এবং লাদাখ, "দমন দিউ ",কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো।
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারাবলে জম্মুকাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়।
স্বাধীনতার পর প্রায় ৬০০টি রাজন্য পরিচালিত রাজ্যের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হয়। ওই আইনে তিনটি সম্ভাবনার কথা রয়েছে। প্রথমত স্বাধীন দেশ হিসেবে থেকে যাওয়া, দ্বিতীয়ত, ভারতের যোগদান অথবা, পাকিস্তানে যোগদান। এ ব্যাপারে কোনও লিখিত ফর্ম না থাকলেও, কী কী শর্তে এক রাষ্ট্রে যোগদান করা হবে, তা রাজ্যগুলি স্থির করতে পারত। অলিখিত চুক্তি ছিল, যোগদানের সময়কালীন প্রতিশ্রুতি রক্ষিত না হলে, দু পক্ষই নিজেদের পূর্বতন অবস্থানে ফিরে যেতে পারে।
অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্য এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করে সংবিধানের ৩৭১, ৩৭১ এ ও ৩৭১ এল ধারার মাধ্যমে।
ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ৫ নং উপধারায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্পষ্টত উল্লেখ করে দিয়েছিলেন যে তাঁর সম্মতি ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা আইনে এ রাজ্যের ভারতভুক্তি কোনও সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বদলানো যাবে না। ৭ নং উপধারায় বলা ছিল যে এই ভারতভুক্তির শর্তাবলী ভবিষ্যৎ কোনও সংবিধানের মাধ্যমে বদলাতে বাধ্য করা যাবে না।
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধানের তিন নং ধারায় স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, জম্মু কাশ্মীরের সার্বভৌমত্বের কথা কিন্ত কখনো বলা হয়নি, যা বলা হয়েছে তা হলো স্বায়ত্ত শাসন।
আর আর্টিকল ৩৭০ এর পার্ট 21 এর হেডিং এই বলা আছে,
"Temporary, Transitional and special provisions "
তবে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, যেহেতু কাশ্মীরের এই অবস্থানে জওহরলাল নেহেরু এবং UNO এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে, তাই তারা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট ওব জাস্টিসে যাবে।
এবং, ৩৭০ ধারারই হাত ধরে আসে ৩৫ এ, এই, ৩৫ এ ধারাতে যা বলা হয়েছে,
১) ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই ধারাটি।
২) এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে।
৩) এই ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা স্থির করতে পারে রাজ্যের ‘স্থায়ী বাসিন্দা’ কারা এবং তাঁদের বিশেষ অধিকার কী হবে?
৪) কেবল স্থায়ী বাসিন্দারাই ওই রাজ্যে সম্পত্তির মালিকানা, সরকারি চাকরি বা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পান।
৫) রাজ্যের বাসিন্দা কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাঁর উত্তরাধিকারীদেরও সম্পত্তির উপরে অধিকার থাকে না।
দুইহাজার দুই সালে, অবশ্য মহিলা সংক্রান্ত ব্যাপারটি সংশোধিত হয়, বলা হয় মহিলারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না, কিন্তু তাদের উত্তরাধিকারীরা অর্থাৎ ছেলেমেয়েরা পাবে না।
দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত কাশ্মীরী পণ্ডিতরা যারা দিল্লী কিংবা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তারা হয়তো এবার স্বভূমে ফিরতে পারবেন, এতদিন ধরে কাশ্মীরের মানুষদের নাম ভূমিকা ছিল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অব কাশ্মীর এখন থেকে তারাও ভারতীয় নাগরিক।
জম্মু কাশ্মীর রি অর্গানাইজেশন বিলে যা বলা হলো,
"As per, "Article 370, clause 3, The president may, by public notification, dclare that this Article shall cease to be operative. The powers of state legislature of J and k are vested with this house by virtue of President's rule. "
এখন আমার ভয় হলো কাশ্মীর না হারিয়ে ফেলে তার সকল সৌন্দর্য। সবাই মিলে যদি কাশ্মীরে বাড়ি কিনতে চান, অচিরেই কাশ্মীর তার ভূস্বর্গের মর্যাদা হারাবে। হাজার হাজার ধনী মানুষ কাশ্মীরে এখন রিসোর্ট বানিয়ে ব্যবসা করার কথা, বাস করার কথা ভাবলে, হারিয়ে যাবে বনভূমি, উপত্যকার নিভৃত সৌন্দর্য। তাই জায়গা কেনার অপশনটা না থাকলে হতো, সৌন্দর্যকে দেখে আসা ভালো, তার কাছে গিয়ে থাকতে গেলেই আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসে সবুজ রঙ্, দাঁত মুখ খিঁচিয়ে জেগে ওঠে উঁচুনিচু ন্যাড়া শরীর।
0 মন্তব্য(গুলি):