দশটি নারীবাদী কবিতা, চিরশ্রী দেবনাথ
চিরশ্রী দেবনাথ
পুনর্বার
যত সব দুঃখদুয়ারী মেয়েরা
আমি তাদের মধ্যে নেই
কত হাজার সংগ্রামে যাদের কেটেছে পা
আমি তাদের মধ্যে নেই
পুরুষ হাত রাখেনি হাতে
বলে যাদের অভিমান
আমি তাদের মধ্যে নেই
ভালোবাসা নিংড়ে যারা
পুড়ে গেছে কোনো এক সকালে
আমি তাদের মধ্যে নেই
সব শর্ত নিজের কাছে বাজি রেখে
একে একে হেরে গেছি সবখানে
কেউ দেখে ফেলার আগে
উন্মুক্ত হৃদয় ভরে গেছে পরাজয়ের সুখে
দোপাট্টা উড়িয়ে পেতেছি হাত আবারো নিখাদ
হে খোদা... হে ঈশ্বর ইনতেজার ফরমাও, আতশ জ্বালাও,
আসমান... এই খোলা আসমান আমার,
ভুলে গেছি বাকি সব অগ্নিভ প্রতিবাদ
মিছিলে হেঁটে যারা কেড়ে নিয়েছে
অধিকার, আমি তাদের ক্লান্ত পা
ঘরে ফিরে হেঁটে গেছি আধখানা রাত
বিছানায় যেতে যেতে মেখেছি ক্রিম
বলিরেখার নীচে আঙুল চালিয়ে
কেড়ে নিতে চেয়েছি দুপুরের রোদ
তারপর বলেছি এই দুরন্ত ভ্রমণে,
আবারো মেয়ে হতে চাই
তোমাদের তৃষ্ণার্ত মুখে এঁকে দিতে অরণ্য,
মেয়ে হয়ে বার বার ডুবে যেতে চাই।
বিভাজিত মেঘ
.........................
দুজন সমকামী মেয়ের অর্ধেক আকাশ নেই
দেহতত্ত্বের অন্ন সুবাসে
তাদের শরীরে জারিত পূর্ণ আকাশ
এই ভূমিকায় একটি গ্রহণ ছেয়ে যাবে
সে গ্রহণের দায় কোন সন্তানের নয়
ক্যাকটাসে যে ফুল ফুটে চল্লিশটি বছর পর
একমেয়ে অন্য মেয়ের চুলে গুঁজে দিয়েছে সেই গন্ধ
" বাহারো ফুল বরষাও "
বৃষ্টি জ্বলছে আঁধারে, ডুবছে পরিধি
এখানে পতন হোক দিগন্তের
পাতাল ছুঁয়ে দেখুক কেউ কেউ ...
কন্ঠীবদল
শ্যামলীরাই বোষ্টমী। জেলা উত্তর ত্রিপুরা। গ্রাম "পলাশকুঞ্জ "।
সাড়ে কুড়ি বছরে কন্ঠীবদল।
তখন ফাগুনমাস। বেহায়া বাতাস। দুজোড়া ধুতি চাদর।
পলাশফুল পড়ে পড়ে পিছল হয়ে থাকে আখড়ার প্রাঙ্গন।
তিলক মুছে তিনবার মাছ খাওয়া হয়েছে।
দুবার মুরগীর ঝোল। তিনখানা হিন্দি ফিল্ম। নাচ গান।
এটুকুই অবৈধ বসন্ত। বাকি সব কীর্তন। সপ্তমীর জ্যোৎস্না।
শিউলি, কাঞ্চন, রঙহীন জবা তুলে তুলে নারায়ণের চরণে।
দোলের দিন সবুজ রঙ, গোলাপী আবির,
সঙ্গীর পুরাতন মুখে ভিক্ষাকষ্ট শুধু।
পুন্যের মাস। কার্তিকের কুয়াশা মেখে মেখে শহরের অলিগলি ঘোরা হয়।
একজন মরল, দ্বিতীয়জনের লগে কন্ঠীবদল।
শ্যামলীরাই হাসে না। নামগান করে।
তৃতীয়জন এলেই বা কি। বয়স তার এখন সাঁইত্রিশ।
ভরা হাতে মাছ কাটতে ইচ্ছা হয়। রক্ত ধুয়ে তেলে হলুদে জমিয়ে গন্ধ ছাড়তে ইচ্ছা হয়।
না হয় সন্ধ্যাবেলা একটু তুলসীতলা। বাকি মাছভাত আর রমণ।
সে হবার জো নেই।
অথচ ভক্তি নেই।
ঘোর সংসার বুকের ভেতর।
ঘরবাড়ি উঠোন চুলা আর পুকুরঘাট সমেত।
গাছভর্তি আমের বোল। কষা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ফাগুন চৈত্র মাসে, আর পুকুরের জলে গা ধুতে ধুতে লাক্স সাবানের ফেনায় ফেনায় ধুয়ে যাচ্ছে বোষ্টমী রঙ।
তিলকের মারপ্যাঁচ, তুলসীমালার বৈরাগ্য।
ট্রেনে কইরা আসাম যাওয়ার সময় দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা।
ভরা যৌবন।
বিবাহের রঙ নাই কপালে। কিন্তু বোঝা যায় মাংস ছুঁয়েছে তারা। কই কন্ঠীবদল তো হয় নাই।
জীবন্ত স্বাধীন। শ্যামলীরাই কীর্তনের সুর তোলে। দশটাকা, দশটাকা দেয় দুজনে।
কয় আশীর্বাদ করো যেন আজ রোজগার হয়, আমরাও বোষ্টমী, ঘর আছে, ঘর নাই। বাইরে বেরুলেই টাকা।
বাড়ি ফিরলে জিগায় টাকা আনছো নি?
তবুও তোমাদের তো ভণিতা নাই, শ্যামলীরাই তর্ক করে।
হি হি ! ভণিতা ! ছুরির মতো হাসি। নাহ্ ভণিতা নাই, রঙখেলার দিন কৃষ্ণ আসে খেলতে।
তার চোখে দেখা যায় এই বসন্তকাল।
গোপী মেয়েদের ব্যথা।
কত কত রঙ নিয়ে আমরা পদাবলী লিখে যাই।
`মানুষ ভুল করে ভাবে ধর্মের গান, অথচ এসব আসলে নাড়ি ছেঁড়া অশৌচ কাল।
বেত্রবতী
.........
বালিশ, বিছানা এবং কিছুটা
একান্ত মনখারাপ ছেড়ে
জানালা খুললো বেত্রবতী
বসন্তকালীন রোদ ঢেকে দিল
তার ছোট স্তন, খড়খড়ে কালো গাল,
শুকনো ঠোঁট, আর ঝড়ো চোখকে।
ঘুম ভেঙে যাওয়ার আগে
বেত্রবতীর এই শারীরিক রাজ্যপাট
নিগূঢ় বসন্তে অভিমানী থাকে...
বেত্রবতীর সব ব্রণ দাগ রেখে গেছে অবেলায়,
কৈশোর আছড়ে পরে বারংবার
নিঃসার একান্ত অভিসারে তারা সমুদ্র শুশুক...
বেত্রবতীর দিন ভালো লাগে না
রাত কেবলি রাত কেন হয় না এ জীবনে..
দীর্ঘ এক সানাই কেন বেজে যায় না নহবতে
তার সব নিজস্ব প্রেমেদের স্বয়ম্বর হতেই থাক্..
গায়ে মাথায় মুখে বেত্রবতী মেখে নেয় অলীক সুখ
বিবাহিতা কেবলি বিবাহিতা তার এই অবৈধ বিলাস।
কারা যেন আঁশটে মুকুলগন্ধ লিখে যায়
ঋতুর ঘাটে ঘাটে পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে,
দিনশেষের রজঃস্বলা, এই বসন্তযাপন
গা কুটকুটে অসহ্য ব্যথা, তাকেই কেন শুধু?
কিছু শিমূল, কিছু আবির বেত্রবতীর ঠোঁটে
একটি কামড় রেখে যাবে,
কথা হয়ে উড়ে গেছে সাতজন্ম পরে..
তাই দীর্ঘ, দীর্ঘ এই সব রাত
বেত্রবতীকে জেগে থাকতে হয়,
রূপং দেহি, রূপং দেহি, রূপং দেহি...
বেত্রবতী মা হয়, তার সব সন্তানেরা অযোনিসম্ভূত।
কুৎসিত ছোপ ছোপ দাঁতে, গিলে ফেলে মুকুল মদিরা
কষা স্বাদে চোখ বন্ধ হয়ে আসে
একান্ত একান্ত এই সুখবিলাস
তাম্রবরণা বসন্তে বেত্রবতী ফুটতে থাকে
নিখাদ কালো দহন হয়ে...
জানালা বন্ধ করে দেয় বেত্রবতী
জন্ম, জন্ম এবং আরো
সাতজন্ম পর সে প্রিয়া হবে।
ছবি মেয়ে
..................
ধর্ষণের পর থেকে এক ছবিমেয়ে
শুধু সঙ্গমের ছবি আঁকে
মোহ, সাপ, কলা, রস, ছোঁয়াচে অসুখ
ছড়িয়ে ছড়িয়ে আঁকতে থাকে বাৎসায়ন
আনতচোখের মেয়েটি দিনের পর দিন
হয়ে উঠছে অশ্লীল কেবলি অশ্লীল
তার চোখে ঢেউ হয়ে নেমে আসে জোয়ারের শরীর
এতো শরীরী সে তো ছিল না কখনো
আমলকী রঙের মেয়েটির বারান্দার
একপাশের ঘরে ঝুলে থাকা
দেয়ালে এখন শুধু নোংরা ছবি
মোমরঙা ঊরুতে যে তিল ফুটেছিলো
সেখানে সে তার পেন্সিল ডোবায়
দীর্ঘ পথ খুলে যায়, এতো এতো মেয়ে সেখানে
চারদিকে ফুল ক্ষত, সাদা নখের আঁচর
আচ্ছন্ন এক রাজপথ ... রঙে জলে ভেজা,
ছবির পর ছবি বসে আছে হাঁটু ভেঙে
ছবিরও যোনি থাকে, যোনিতে তুলি
তুলিতে আঁকছে সেই মেয়ে শ্বেত মরুভূমি...
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং
যোদ্ধানী
..............
ধর্মনগর শহর থেকে পাশের গ্রামে যাবো।
একটি জিপে বসলাম।
আমার সঙ্গে সহাস্যবদনা রুখুসুখু এক মহিলা।
সস্তার হ্যান্ডলুমের শাড়ি, চড়া বেগুনি রঙ।
লাল রঙের ব্লাউজ।
কাঁধে চকচকে নীল ভ্যানিটিব্যাগ।
দুজনে গায়ে গা লাগিয়ে বসা হলো।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কই যাইবেন? কুটুম বাড়ি?
আমি হেসে বললাম, হ।
....মনে মনে "আহা কুটুম বাড়ি, কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি , নাইল্যাশাকের বড়া, আমড়া বোলের টক, নিখাদ গল্প অবসর কোথায়, কে যেন রেখেছে আমার জন্য এক চৈত্রের মধ্যাহ্নে? "
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি করেন আপনি।
তিনি ততোধিক দ্রুততায় উত্তর দিলেন, "পার্টি করি "।
আমি টগবগ করে উঠলাম।
মাথায় দুম করে বাজলো, পঞ্চায়েতে ফিফটি পার্সেন্ট রিজার্ভেশন,
সাবাস !
তাকিয়ে রইলাম। কোথায় রুখুসুখু চেহারা!
বসন্তের রক্তাক্ত পলাশ, যেন জ্বলছে, সঙ্গে নেয়নি নিভে যাওয়ার ঠিকানা।
আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ।
মেয়ের বাপ কইছিলো, মাধ্যমিক পাশ করছে, দোকানদার পাত্র পাইছি, বিয়া দিমু ওখন।
আমি রাজী হইছি না, মেয়েরে পলিটেকনিকে ভর্তি করাইছি। পড়তাছে।
গ্রামে তিনডা চোলাই মদের দোকান আছিলো, আমরা সবাই মিইল্যা দিছি উঠাইয়া।
ওখন একটাও নাই।
পঞ্চায়েতের মিটিং এ কইছি আমরার গ্রামের একটা মাইয়্যার গায়ে যদি শ্বশুরবাড়িতে হাত ওঠে, খবর আছে !
দুইহাজার এক, ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল মহিলা স্বশক্তিকরণ বর্ষ...
হচ্ছে তাহলে, ধীরে ধীরে একটি তেজ জন্ম নিচ্ছে মেঠো পথে, নিকোনো উঠোনে।
এই জ্বলজ্বলে মহিলাটির নাম জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো না।
নাম দিলাম আমি, "যোদ্ধানী "
যোদ্ধানী থামছে না। বলে যাচ্ছে।
কমলার কোয়ার মতো পুরু ঠোঁট চেপে চেপে বলছে,
গোলাপী বেগম, পাঁচ বছর আগে তিন তালাক দিয়া বাইর কইরা দিছিলো মরদ।
গোলাপীরে বুঝায়া সংখ্যালঘু সিটে দাঁড় করাইছি। পঞ্চায়েতের মেম্বার হইছে ।
গলা ফাটাইয়া, মাথা উঁচা কইরা বক্তৃতা দেয়।
জিপের খোলা জানলা দিয়ে তখন ধূ ধূ লাল মাটির বাতাস ...BeBoldforChange
আজ তিন তালাক, উড়ে গেছে ...
দীর্ঘতম কালবৈশাখী হয়েছে সংসদের ইতিহাসে।
তবুও...
লোকসভায় ফিফটি পার্সেন্ট সংরক্ষণ , এখনও আদায় করা যাচ্ছে না, বিরোধ চলছে
অর্ধেক আকাশ আর কত লাগে? হচ্ছে তো সব! আহ্!
গন্তব্য এসে যাচ্ছে।
যোদ্ধানীর দিকে তাকালাম, সিঁথিতে দগদগে সিঁদুর, শাঁখা, পলা, লোহা সব আছে।
এ মেয়ে MeToo জানে না, আমি নিশ্চিত।
আমি জানি সে ভালো আছে,
সহবাস দুজনের সম্মতিতে হলো কি না, এ নিয়ে কোনদিন সে মাথা ঘামায়নি।
তার পরনের ক্যাটক্যাটে বেগুনি রঙের শাড়ি
ক্রমাগত সম্ভ্রান্ত, নত করে দিলো আমাকে
তাকিয়ে মনে হলো,
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন অনেকেই বেগুনি পরেন,
হয়তো এসব কিছু না জেনেই,
কি অসহনীয় সুন্দর হয়ে ফুটছে যোদ্ধানী,
দুহাত দিয়ে সে ছাপ দিচ্ছে ধুলোতে, আকাশে
আমরা দেখছি বেগুনি, লাল, সাদা আর গোলাপীতে চীৎকার করছে বর্ণমালা,
PressforProgress, ...PressforProgress...PressforProgress.
##############################
বিঃ দ্রঃ...BeBoldForChange, slogan of 2017, International womens day
PressforProgress, slogan of 2018, international womens day
আর ইউ ভার্জিন?
............
ফুলের মতো কোমল যোনি
নরম ঘাস, কচি ব্লেড!
সেলাই হবে,
ঝরবে রক্ত
শরীরে মাখানো সাদা রঙ
অনিশ্চিত মৃত্যুর প্রসাধন, অভ্রকুচির টিপ
কি যন্ত্রণা, মা!, মাগো?
বড়ো হবে, প্রতি মুহূর্তে কষ্ট যোনিদেশে
পাথরের মালায় ভীষণ যন্ত্রণার রজঃপাত
দীর্ঘতম ইনফেকশন কৈশোরের নীল পথে,
কিংবা ফ্যাকাশে মৃত্যু
হলুদ বিবাহের রাতে
স্বীকৃত পুরুষ খুলবে সেলাই
সোনালী কুমারীত্ব, তোমারই শুধু!
চরাচরে পবিত্রতম নিষ্ঠুরতা,
কি বলো এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ!
কুড়ি কোটি ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন এখনো?
যখন শুনলাম,
একটি বিশুদ্ধ গ্যালাক্সি
এবং সাতখানা পৃথিবী এই মহাকাশে...লুকিয়ে আছে অন্ধকারে
সেই থেকে বড়ো জানতে ইচ্ছে করে ,
তোমাদেরও কি নারী আছে,
আছে ভার্জিনতার পরীক্ষা এবং নারী দিবস?
মৃত পাখিরা
একটি হিজাব এবং ওড়নার মধ্যে খানিকটা পার্থক্য ...প্রেমের
হিজাব নিয়ে কোনও গান নেই, চুপ!
ওড়না উড়িয়ে, দোপাট্টা ভিজিয়ে যখন তখন বৃষ্টি ঝরে,
মেঘ জমে ওঠে অকাল ঋতুতে, রামধনু অসময়ের।
এই ছোট্ট শহরের ছোট্টবেলা থেকে আসা দোকানে,
আগে কোনো হিজাব বিক্রি হতো না,এখন প্রচুর!
ঝলমলে হিজাবগুলো সার দিয়ে ঝোলানো, মৃত পাখিদের মতো।
যাদের ভালো লাগে তারা পরুন।
আমার মনে হয়,
তাদের চুলে, গলায়, কাঁধে একটু কি হলকা বাতাস
বয়ে যেতে পারে না, একটি অনাবৃত বনাঞ্চল।
এ পৃথিবীর ধুলোটিও তো, নরম, তারও একটু
ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে,
বন্দী ঋতুটির বড়ই ছটফটে স্বভাব।
দুটি হাত
...............
দুটি হাত শক্ত করে ধরে আছে বাসের হ্যান্ডেল
একটি হাত ,রোমহীন, সুডোল, স্বচ্ছ নখে রোদের চাষ
যেন জ্যোৎস্নায় ঢাকা নদী নেমেছে বরফের স্বর্গ ছুঁয়ে
অন্য হাতে রোমের কালো বন, বাঁকাচোরা ময়লা নখ
যেন ময়াল সাপ উঠে এসেছে খনির অন্ধকার মেখে
এই দুটো হাত যে যার মতো করে কাল রাতে ভালোবেসেছিল
কাল ছিল অমাবস্যা ...সুগভীর
কালো রোমশ হাত থেকে লাফিয়ে পড়েছিল বাঘ
ময়লা নখ থেকে সুনামীর জলোচ্ছাস
ফর্সা সুডোল হাত চেপে দিয়েছিল অন্ধকার
প্লুতনোভা আলোয় ভেসেছে তখন রঙীন মাছ
দুখানি হাতের তলায় রোশন চৌকি, পরিশ্রমের নহবত
প্রতিরাতে তারা ভালোবাসতে যায়,
তারপর উটের মতো পথচলা রেখে আসে দোরগোড়ায়,
আম্রপলবের কষ ঝরে, টুপটাপ, সুস্বাদু মঙ্গলছাপ…
কালী
কালী কে নিয়ে কোন প্রেমের কবিতা হয় না
তিনি বড়ো তীব্রভাবে রাজনৈতিক, ক্ষমতায়ন,অথবা দমন।
লেলিহান গোধূলির ভয়াবহ রূপ,
চুরান্ত নারীবাদী কয়েকটি নগ্ন পংক্তি হয়ে
জ্বলে উঠতে পারে কেবল নির্মোহ কালো রঙে।
টুপটাপ ঝরে পরা রক্ত নিয়ে একটি মুন্ডমালা
কালো নাভিকে ছুঁয়ে থাকে মৃত্যুর অহংকারে।
এমন উচ্ছল উন্মত্ত কালো মেয়েকে
সৃষ্টির পিছনেও একটি নরম মন...পুরুষতান্ত্রিক না পুরুষ!
কত রূপে ভালোবেসে দেউলিয়া শ্বেতভৈরব
ছিন্ন স্তোত্র স্তবকে স্তবকে মাতৃ নির্যাস নেয়
শ্মশানের আঙিনায় ফুলময় ওঠে এই তান্ডব
আশ্রয় দাও হে কালো মেয়ে
পৃথিবীর বুক থেকে জিভে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছো যেন
নিরাশ্রয় শুষ্ক হেমন্ত, অগরুগন্ধ,
তোমার বুকে, উষ্ণ বাহুতে যুদ্ধের কোলাহলকে জনারণ্য মনে হয় কেন শুধু ...
শ্রী রাধা
ফেলে এসো রাধা যমুনাতীর
তমালতরু ও বালক প্রেমিক
ফেলে এসো ঘাসে ছাওয়া তৃনভূমি
জোৎস্নাশাসিত সঙ্গসুধা
ধুয়ে দাও গৌরবর্ণ
ফুলের সাজ আর সুগন্ধ বিলাস
যদি সাজাই আমার সাজে
কালো রঙে ঢেকে যাক শ্যামের আদর
তীব্র তিলখানি লুকিয়ে যাবে
খড়ি ওঠা চামড়ায়, আগুনরঙা চুল
কোটর চোখে খোলা নদী
ডুব দাও শ্যাম
দশম স্কন্ধ শ্রীভাগবত ক্লোজ
ঘুচে গেছে রাস, পরকীয়া রক্তে হোলি
মেঘের পথে হাত ধরেছে রাধা আমার,
নিকষ কালো রাধা
দিলাম এনে বড়ু চন্ডীদাস,
কলম উঠিয়ে রইলেন যে বড়ো,
এ যে বিষমকথা
রূপহীন অপুষ্ট নারী দিয়ে
কি আর হয় কাব্যকথা
এসো এসো রাধা ঝুলন দোলায় দুলি
তোমায় দিলাম শ্যামহীন বৃন্দাবন
তোমার সঙ্গে আছি এক পৃথিবী আমি
( সব গুলোই বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত)
লেখক পরিচিতি
.... চিরশ্রী দেবনাথের, জন্ম 1979 এর 12 ফেব্রুয়ারি উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাসহর নামের একটি ছোট শহরে। বাবা রাধাগোবিন্দ মজুমদার সংস্কৃতের অধ্যাপক ছিলেন এবং মা মায়ারাণী মজুমদার। দুজনেই প্রয়াত। তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্হান অধিকার করেন। ছোটবেলা থেকেই লিখতে ভালবাসেন, ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি। বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। পেয়েছেন ত্রিপুরা সরকারের অদ্বৈত মল্লবর্মণ ছোট গল্প
প্রথম পুরস্কার, স্রোত সাহিত্য প্রকাশনার ছোটগল্প পুরস্কার, ত্রিপুরা সরকার তথ্য আয়োগ দপ্তর কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার। এখন পর্যন্ত সাতটি কবিতার বই এবং একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোর নাম "জলবিকেলে মেঘের ছায়া ", "ঋতুক্ষরণের রোদচশমায় ", "প্রেমে সন্ত্রাসে ", "শুভ দ্বিপ্রহর ", "ঝাউবন ও জ্যামিতি বাক্স " , "উড়িয়ে দিও ", "বিশ্বাসের কাছে নতজানু " এবং কুুুুুড়িটি ছোটগল্প নিয়ে একটি গল্প সংকলন, "মায়ারাণী "।
২০১৯ এ, সুমিত্রা কর তরুণ লেখক সম্মান পেয়েছেন।
"কীর্ণকাল "নামে একটি লিটিল ম্যাগাজিন যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন চারবছর ধরে। তিনি বিশ্বাস করেন কবিতা আত্মার সঙ্গে মিশে গেলে আর ফেরা যায় না।
ঠিকানা
চিরশ্রী দেবনাথ
প্রযত্নে : অরূপ দেবনাথ
"কাজরী ", নেতাজী রোড
পোস্ট অফিস : ধর্মনগর
জেলা : উত্তর ত্রিপুরা
পিন : 799250
মুঠোভাষ : 9402143011
ই মেইল : chirasree.debbath@gmail.com
0 মন্তব্য(গুলি):