জয় গোস্বামীর জন্মদিনে
শুভ জন্মদিন ...জয় গোস্বামী
জয় গোস্বামীর কবিতা আমার খুব প্রিয়। কয়েকজন প্রিয় কবিদের কবিতা পড়লে, কিছু আবছা মতো ছায়াঘোর ঘনায়। যেন খরের ঘর হলো। এবার হালকা কুয়াশা পড়া শুরু হবে। ধানগাছের শুকনো শরীরে পা দিয়ে দিয়ে অনুভব করতে হবে শীতঋতুর ঘাম, তাতে কেটে যাবে গোড়ালির ত্বক। ঘরে ফিরে আমিও লিখতে পারব তখন হেমন্তকাল নিয়ে দু চারটি ঝরা পাতার চিঠি। আমার চোখ বিষাদ নিয়ে নেমে আসুক আশ্চর্য সব প্রেমের কবিতায়। তাই সমস্ত শব্দহীনতা এবং লেখাশূন্য দিনে আমি জয় গোস্বামীর কবিতা পড়ি। তারপর কবিতাগুলো কোথাও একটা ছেড়ে দেয় আমাকে, এই ছেড়ে দেওয়াটা ব্যাপক মুশকিলের, পোকার মত অসহ্য, চোখে মুখে অস্থিরতা, যেন কিছু একটা হবে , কাল্পনিক কেউ হাতছানি দিচ্ছে দূর থেকে,
" ছায়াচ্ছন্ন গ্রাম, ছায়াচ্ছন্ন বাড়ি, ছায়াচ্ছন্ন বয়স, তার তলা দিয়েএকজন আসছে, পায়ে ভাঙছে শুকনো পাতা, শাড়িতে কাঁটা লাগছে, গায়ে লাগছে গাছের ডাল, জঙ্গুলে-পোকা উড়ছে মাথার উপর, একজন আসছে, চুলে কুটো, কপালে কাঁচপোকা, নাকে ঘাম,
বুকে ওঠা-পড়া, জঙ্গলের মাথায় ভরদুপুর, জঙ্গলের ভেতর বিকেল, ছায়াচ্ছন্ন জঙ্গল, ছায়াচ্ছন্ন বাঁশঝাড়, ছায়াচ্ছন্ন বয়স,
তার তলা দিয়ে একজন কুলত্যাগ করছে..
সবুজ হলুদ সর-পড়া একটা পুকুর থেকে লক্ষ্মী উঠে ঝাঁপিটা হাতে দিয়ে বললেন, 'সাবধানে যাস!' -------- "জয় গোস্বামী "
একটি কথা খুব হৃদয় দিয়ে অনুভব করি কবিতা পড়তে হয়, না হলে কবিতার যাতায়াত স্তব্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য ভালো কবিতা পড়ার পর হতাশা আসে। হাত গুটিয়ে বসে থাকি। এই হতাশা এবং আলোড়ন সুগন্ধির মতো। ভেতরে জমা থাকে, তারপর হঠাৎ খুব হাবিজাবি সময়ে লাইনগুলো ভেসে আসে কোথা থেকে যেন। হয়তো এটাই সেই প্রভাব। প্রভাবিত না হয়ে কে কবে লিখেছেন !
কলেজে থাকতে পড়েছিলাম, "যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল "। সেই মুগ্ধতা কবেই মরেছে। ততদিনে তার আরো এমন সব কবিতা পড়ে ফেলেছি, যেগুলোর মুগ্ধতাটা আরো কিছুকাল চলবে। তারপর সেই বিস্ময় কী শেষ হয়ে যাবে।
বিস্ময় আর মুগ্ধতা হারিয়ে মরা নদীর সাঁকো পেরিয়ে চলে যাবো, না লেখার দেশে।
"আমাদের নীল মৃত্যুকাল
আমাদের সাদা সন্তরণ
আমাদের ঢেউগুচ্ছ
আমাদের এই নিচু জীবন
জলে ফেলে দেওয়া শান্ত ঢিল
ক্ষমাশীল ঢেউগুচ্ছ
গায়ে গায়ে ঘষা কালো জীবন
হাতে মুখে হাতে মেখে নেওয়া
ঈর্ষার কাঁচা রক্ত
আমাদের এই আলোজীবন
কারো কাছে কিছু নেবে না আর
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শান্তি" ...( জয় গোস্বামী)
আকুতি আর আবেগের গদগদে মিশ্রণে গলা ডুবিয়ে এই কথাটি কেন যেন অনায়াসে বলতে পারি,
"সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার -
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …"
জয় গোস্বামী।
কবিতা হলো অনিয়মের ঝাড়বাতি। যেখানে নিয়ম, কবিতা সেখান থেকে পালিয়ে আসে। কবিকে ক্রমাগত ভুল বুঝো, তাকে অসম্মান করো, তাকে আঘাত করো, তার কাছ থেকে দূরে চলে যাক প্রিয় ভালোবাসা, তত সে লেখার কাছে চলে আসবে, সুখ কী আদৌ কোনদিন চেয়েছে কবি? পুরস্কার পাওয়ার সন্ধ্যেটিকে ভুলে যেতে না পারলে কবিতাও তাকে ফেলে চলে যায় অন্য কোনও জংশনে ।
"পাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো,
বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবি যদি আয়’,বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায় সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …"
...জয় গোস্বামী
কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল আমার। সুস্থ থাকুন তিনি।
"যেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায়
ঢালুদিকে
সেইভাবে, আমার জীবন
আজ অধোগামী।
সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে
তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে—
এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে
আঘাত না লাগে!
পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।"...জয় গোস্বামী
@ চিরশ্রী দেবনাথ
#কবিজয়গোস্বামী
জয় গোস্বামী আমারো প্রিয় কবি। বস্তুত জয় গোস্বামীর ঝরাপাতার সংকলন আমায় কবিতার দিকে প্রচন্ড আকৃষ্ট করে। খুব ভাল লিখেছেন -ছায়াচ্ছন্ন ঘোর লাগা অনুভূতি, এক বোধ।
উত্তরমুছুন