সাহিত্যে উত্তর উত্তর আধুনিকতা

৩:১৩ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

চিরশ্রী দেবনাথ
****************
সাহিত্যে " উত্তর উত্তর আধুনিকতা
****************-***
উত্তর আধুনিকতা আধুনিকতার পরবর্তী ধাপ একথা মনে হয়, বস্তুত তা নয়, উত্তর আধুনিকতা এবং আধুনিকতা একই ক্রম, কারণ আধুনিকতার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ভাবে নির্ধারণ করা যায় না, যে কালে জন্ম গ্রহণ করেছেন তিনি সেই কালের সাপেক্ষে আধুনিক।

রাজনীতি, সমাজনীতি, প্রযুক্তি সমস্ত বিষয়ে যখন একটি পারস্পরিক উত্তরণ ঘটে, তখনই আমরা তাকে একটি নতুন যুগ বা পিরিয়ড বলি। এখানে সাহিত্য বা শিল্পের কথাটি বললাম না।

একমাত্র সাহিত্য বা সৃজন শিল্পের ক্ষেত্রে আমি মনে করি এসবের নিজস্ব একটি প্রাণ বা একক সত্তা রয়েছে, যা একান্তভাবেই নির্ভরশীল লেখক বা শিল্পীর ওপর। একজন লেখক কখনও তার লেখা কালোত্তীর্ণ বা যুগ নির্দেশক হবে এই বিষয়ে কর্নফার্ম হয়ে লিখতে পারেন না, আর যদি তিনি ভাবেন আমি যুগ সন্ধিক্ষণের লেখা লিখব, তবে স্বাভাবিক ভাবেই সেই লেখাটা খুব খারাপ হবে। পৃথিবীর বিখ্যাত লেখকদের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস, গল্প বা কবিতা এসেছে সাব কনসাস মাইন্ডের অতি সংবেদনশীল অনুরনন থেকে যার প্রতিফলন বিষয়ে লেখক নিজেও অজ্ঞাত ছিলেন। 

উত্তর আধুনিক গঠনবাদ পৃথিবীর বিশেষ করে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দার্শনিকদের দেওয়া নানা তত্বের জটিল সমাহার। আর উৎকৃষ্ট  সাহিত্য কোনো তত্ত্ব দ্বারা সৃষ্টি হয় না। উত্তর আধুনিক গঠনবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন বা করবেন তারা কোনোদিনও শিল্প সাহিত্য বা অন্য কোনো সৃজনের অভিমুখ কি হবে এই বিষয়ে কোনো ঘোষনা দিতে পারবেন না, তাহলে তারা আধুনিকতা এবং উত্তর আধুনিকতা এই সমস্ত বিষয়টিকেই নস্যাৎ করে দিলেন। উত্তর গঠনবাদ বা আধুনিকতায়   সৃজন মানে হচ্ছে অবাধ স্বাধীনতা।  শিল্পের ক্ষেত্রে, লেখালেখির ক্ষেত্রে একজন মানুষ যখন সবকিছু উগড়ে দিতে পারে, তাকে বাধা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কোনো তথাকথিত শৃঙ্খল থাকেনা, যা বস্তুতপক্ষে বিশ্বের কোন দেশেই হয়নি এখনো।  

আর   উত্তর আধুনিকতা সর্বক্ষেত্রে একটি সর্বোচ্চ এনলাইনমেন্টের অপেক্ষায় ছিল, যেহেতু কয়েকদশক পূর্বেও  কথা সাহিত্য  সমাজের এলিট শ্রেণী এবং মধ্যবিত্ত, অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্তদের মধ্যেও অবশ্য
আলোচ্য বিযয় ছিল তাই উত্তর আধুনিকতার প্রভাব প্রজন্মের বড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে খুব  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

 সাহিত্য সবসময়ই সমাজের দর্পণ হয়ে ওঠে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই বলে সাহিত্যিকদের ক্ষুধা এই পৃথিবীর সমস্ত খারাপ ও ভালো জিনিসকে লেখার মাধ্যমে ধারণ করতে পারেন, তবে এই জিনিসটা যারা শেখাতে আসবেন বা চাপিয়ে দিয়ে দিক নির্দেশ করতে চাইবেন তখন পরবর্তী প্রজন্মের মৌলিক চিন্তাশক্তি ব্যহত হবে, এই ব্যাপারটা সে জানুক বা না জানলেও ক্ষতি কি?

আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ফ্যাসিবাদী  চিন্তার প্রবল প্রকাশ, যা কাব্য নাটক গল্প উপন্যাসের উন্মুক্ত চেতনাকে ব্যাহত করছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার যদি লেখকদের না থাকে,  তবে ইতিহাস থেকে এক একটি  

 যুগ বিলোপ হয়ে যায়, এই সময় তাই ফ্যাসিনিজমের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ ও মেধাবী লড়াই করার সময়, যার ফলে বর্তমানের বেশীরভাগ গল্প, উপন্যাস হয়ে উঠছে রূপকধর্মী। সম্প্রতি দুইহাজার বাইশ সালে শ্রীলঙ্কার একজন লেখক এর লেখা উপন্যাস

"The Seven Moons of Maali Almeida is a 2022 novel by Sri Lankan author Shehan Karunatilaka.[1][2] It won the 2022 Booker Prize, "এরকমই একটি উপন্যাস, যেখানে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাক্ স্বাধীনতার হরণ, সমস্ত কিছুকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

আমার নিজস্ব মত হলো এখন যে সময় চলছে, তা লেখকদের জন্য সুসময়, নিজেকে আধুনিক ও সমকালীন ভাবতে হবে, আমাদের যে মানসিক উত্তরণ ঘটেছিল তা থেকে অনেকটাই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি, উদাসীন হয়ে পড়ছি, তাই রূপক হোক বা সরাসরি এখন চাই সেই স্বাধীন কলম যে শুধু নিজের মতো চিন্তা করবে, তত্ত্বের উদগাড় নয়, লেখাতে কি থাকবে কেন থাকবে সে চিন্তা সৃজনশীল মানুষ করবে না,

উত্তর আধুনিকতার প্রভাব আমাদের বাংলা সাহিত্যে এখনো চলছে, তবে এর মধ্যেও কিছু স্থানিক উপন্যাস রচিত হচ্ছে যা স্বতঃস্ফূর্ত, আর স্বতঃস্ফূর্ততাই হচ্ছে উত্তর উত্তর আধুনিকতা বা গঠনবাদ।  

0 মন্তব্য(গুলি):