Cultural Hegimony or religious Hegimony

৩:১৪ PM চিরশ্রী দেবনাথ 0 Comments

সাংস্কৃতিক দাসত্বের মায়া-কাজল 
.............
 সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ, ধর্মীয় আধিপত্যবাদ এসব নিয়ে আমরা কেন ভাবব? আসলে কি আমাদের ক্ষুদ্র জীবন নির্বাহ করার ক্ষেত্রে এইসব সুপার স্ট্রাকচারাল আইডিওলজির নেপথ্য প্রভাবের কোনো মূল্য আছে? আমাদের জীবনে উৎসব আসবে, যাবে, উৎসবের পরিবর্তিতরূপে আমরা অবগাহন করবো, 
কিছু নিন্দে করব, এই যেমন এখন গণেশ চতুর্থীর সাতদিন ব্যাপী উৎসব নিয়ে সামান্য বিরক্ত হলাম।
আমরা যখন ছোট ছিলাম ন্যাশনাল চ্যানেলে কিছু হিন্দি সিরিয়েল দেখানো হতো, খুবই সাদামাটা পারিবারিক ঘটনা, একটি সিরিয়েল ছিল মিঃ এন্ড মিসেস বাগলে, উড়ান, নামগুলো ঠিক ঠিক মনে নেই, কিন্তু এই ধারাবাহিকগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সংম্পৃক্ত ছিল, আর তারপর হঠাৎ  আমাদের তারুণ্যে বিপুল ধামাকা নিয়ে কেবল টিভির দৌলতে ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ল একতা কাপুরের "ঘর ঘর কি কাহানি ", কিউঁ কি শাশ ভি কভি বঁহু থি " ইত্যাদি ডেইলি সোপ, যার সঙ্গে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের বেঁচে থাকার কোনো মিল নেই, বিশাল বিশাল যৌথ পরিবার, অবাস্তব ঘটনার পুনরাবৃত্তি, অতিরিক্ত সাজগোজ সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, প্রত্যেকটি সিরিয়েলে জন্মাষ্টমী, গনেশ চতুর্থী,  নবরাত্রি,  দীপাবলি, ভাইফোঁটা, রাখি বন্ধন, করবা চৌথ, অনবরত বিয়ের অনুষ্ঠান, হলদি, সঙ্গীত ইত্যাদি আরোও নানা কিছু এমনভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হতে লাগল, যেন ধর্মকর্ম,  আচার অনুষ্ঠান,  বিবাহ নির্বাহ করা ছাড়া লোকজনের কোনো কাজ থাকতে পারে না। apparatus of hegemoni র একটি প্রবল মাধ্যম হয়ে পড়ল ডেইলি সোপ আর বিশেষ কিছু প্রাইভেট  টেলিভিশন চ্যানেল, যাদের কাজ চব্বিশঘন্টা এইসব প্রচার করে জাতির চিন্তাশক্তিকে দুর্বল ও স্থবির করে দেওয়া।  প্রত্যেকদিন সম্প্রচারিত হওয়া সিরিয়েলের মাধ্যমে  আস্তে আস্তে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে নষ্ট করে একটি একপেশে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়,  সেইসঙ্গে ভোগবাদী, দেখনধারি জীবনযাত্রাকে পরবর্তী  প্রজন্মের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, কারণ সিরিয়েল গুলোর অত্যধিক জনপ্রিয়তা বুঝিয়ে দিচ্ছিল ভারতবর্ষের মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত সবাই এই সব মায়াকাজলের দুনিয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে দিতে ভালোবাসে, হাজারটা রাজনৈতিক শ্লোগান মানুষকে পাল্টাতে পারে না, কিন্তু যদি বিশাল একটি জাতির ওপর সাংস্কৃতিক প্রভুত্ব  জারি করা যায়, তবে রাজনীতি গৃহপালিত পশুর মতো আচরণ করবে, বিখ্যাত ইতালিয় দার্শনিক অ্যান্তোনিও ফ্রান্সেস্কো গ্রামসি বিশ্বাস করতেন মানুষকে বস্তুবাদ  নিয়ন্ত্রণ করেনা, মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় আইডিওলজি, সাংস্কৃতিক প্রভুত্ববাদ, ধার্মিক চিন্তাভাবনা,  দর্শন  ইত্যাদির মাধ্যমে। আমরা এখন যাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি তা কোনোওরকম রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, আমরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি ভোগবাদ বা ভারতবর্ষের অর্থনীতি যাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাদের দ্বারা।  আমাদের বেঁচে থাকা এখন জেলির মতো নরম, পা ডুবে যাওয়া একটি দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়ানো। এই কালচারেল হেজিমনি বা রিলিজিয়াস হেজিমনি একটি চিরায়ত প্রক্রিয়া, সাংস্কৃতিক প্রভুত্ববাদ গণমাধ্যম, স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটু বেশি দ্রুত গতিতেই ছড়িয়ে পড়ছে, কিছু করার নেই, মফস্বলেও এখন বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানের নামকরণ' হলদি' বা' সঙ্গীত' হয়, বিয়ের কনে লেহেঙ্গা পরেন, কনের সঙ্গীদের সাজপোশাকও অনুষ্ঠানের থিমের সঙ্গে ম্যাচ করে হয়, অথচ আমাদের নিজস্ব বিয়ের অনুষ্ঠান আছে, বাঙালিয়ানা আছে, গান আছে, কিন্তু কারা যেন ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ওদেরটা উচ্চ মানের, স্ট্যান্ডার্ড, আভিজাত্য বেশি, তাই ওদেরকেই ফলো করতে হবে  এবং সেই আনুযায়ী আমাদের মার্কেটিং নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, পুরো সমাজব্যবস্থাটাই পোশাক আশাক, সাজগোজ, দেশপ্রেম,  দৈনন্দিন জীবন যাপনসহ  একটি কালচারেল ক্রাইশিসের মধ্যে ঢুকে গেছে।  কি করব? কোনটা করলে ভালো হবে,  নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা যাবে এইসবই হচ্ছে অযৌক্তিক হীনন্মন্যতা। কালচারেল কলোনিয়াজম একবার যখন তৈরি হতে শুরু করে, তখন তাকে রোধ করা যায় না, কারণ এতোদিনে এক অদৃশ্য প্রভুত্ববাদ প্রজন্মের  হাতে তুলে দিয়েছে প্রায় সব রকমের মায়াবী অস্ত্র, যাতে রক্তক্ষরণ হয় না, যুদ্ধ হয় না,  শুধু নিজস্ব সত্তা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়,  বা  অন্ধত্বের মুখোশ পরিয়ে দেওয়া যায় যা সূদূরপ্রসারী প্রভুত্ববাদ কায়েম করতে সক্ষম ।
এই কালচারাল হেজিমনির বাইরেও কিছু মানুষ আছে,যারা তাদের সত্তাকে আগলে রাখতে চায়, তারা সেই পরিবারের সন্তান যাদের মূল্যবোধ খুব  অল্পবয়স থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে, কিন্তু তাদের প্রায়ই একা থাকতে হবে, বন্ধু পাবে না ।  সবার সঙ্গে স্রোতে গা ভাসাতে পারেনি বলে সাংস্কৃতিক উপনিবেশের বাইরে
 বিচ্ছিন্ন স্বাধীন মানুষ হিসেবে যদি তারা টিকে থাকতে পারে একাতিত্ব ও ডিপ্রেশনের সঙ্গে লড়াই করে, হয়তো তাদের হাত ধরেই আবার কোনোদিন স্রোতের উল্টোদিকটা দেখতে পারবে কোনো এক উত্তর প্রজন্ম।

#কালচারেলহেজিমনি
#চিরশ্রীদেবনাথ

0 মন্তব্য(গুলি):